Ads

 স্কুল কি শুধু পুঁথিগত বিদ্যার জন্য ?

।। শরীফ হোসেন ।।
আমাদের সময় প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র অবলম্বন ছিল সরকারী প্রাইমারী স্কুল। এখান হতে শিক্ষা লাভ করে অনেকেই দেশ বিদেশে বড় ভুমিকা পালন করেছে। তাদের মেধা কেমন ছিল জানি না তবে তাদের প্রজ্ঞার কারণে দেশের সুনাম বৃদ্ধির সাথে দেশের মুখকে সমুজ্জল করেছে।
এখন শিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটেছে। এখন সরকারী প্রাইমারী স্কুলে কোন মেধাবীরা আর পড়ে না। এর পরিবর্তে তৈরী হয়েছে কিন্ডার গার্টেন, ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মিডিয়াম (সেটাও আবার ব্রিটিশ, অষ্ট্রেলিয়া ও আমেরিকান ধারায় বিভক্ত)। সেখানকার টিচাররাও বেশ। সবাই নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা।
আগেকার সময়ে এসব শিক্ষকের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এসএসসি পাশ কিন্তু তাদের শিক্ষা এবং শিক্ষা অতিরিক্ত জ্ঞান ছাত্রদের শিক্ষার সাথে মানুষও তৈরী করেতো।স্কুল, মুলত প্রাইমারী স্কুলকে বলা হয় শিশুদের গঠনের মোক্ষম জায়গা। এ সময় শিশুরা থাকে কাদার মত; আপনি যা গড়তে চাইবেন তাই গড়বে। আপনি ননীর পুতুল বানাবেন না মানুষ হিসেবে বিশ্ব পরিচালনার যোগ্য করবেন এটা আপনার দায়িত্ব!
আমাদের সময় আমরা সপ্তাহে একদিন স্কুলের ফিল্ড পরিস্কার করতাম। স্কুলে রেজাল্ট এর সময় বিভিন্ন হাতের কাজ জমা দিতে হত। স্কুলে কারণে মার খাওয়া কমন, অকারণেও চলতো (গোপালগজ্ঞে স্কুলে পড়ার সময় আমাদের এক সহপাঠি ক্লাস শেষের পর সাউন্ড করে বই বেঞ্চে গুছাচ্ছিল এই অপরাধে যে মাইর দিয়েছিল তা এখনো চোখে ভাসে) কিন্ত বাসায় এসে অভিযোগ করলে দ্বিগুন প্রতিদান পাওয়া লাগতো।
কিছুদিন আগে আমার পরিচিত এক ছেলের মা তার ইন্টার পাশ করা সন্তানকে লন্ডনে পাঠাচ্ছে না কারণ সেই সন্তানকে এখনো মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। কিছু মাকে দেখেছি তার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তিনি গর্ব করে বলেন তার মেয়ে এককাপ চাও বানাতে পারে না, রান্নাঘরতো দুরে থাকুক। তাকে পরামর্শ দিলাম মেয়ে বিয়ে দেওয়ার আগে তার স্বামী রান্না করতে পারে কিনা জিজ্ঞাসা করবেন, না হলে সতীন হিসেবে কাজের বুয়া দিয়ে দিয়েন।
আমার মেয়ের স্কুলে অনলাইন ক্লাস চলছে এক ছেলে জুম অন করলে বিকট শব্দ হচ্ছে তাদের টিচার কয়েকবার নিষেধ করে বলেছে তোমার বাসার নয়েজ আসছে। পরে বললো অন্য টেকনিক্যাল সমস্যা হলে তোমার জুম মিউট করে রাখ। বারে বারে এ ছেলেকে বলার কারণে সেই ছেলের মা তো ক্ষেপে আগুন বললো “মিস আপনি কেন আমার ছেলেকে বারেবারে এটা বললেন সে তো ফ্রাসট্রেটেট হয়ে গেছে”। আমি মনে মনে বললাম আপনি যা করলেন সে তো অমানুষ হবে।
এবার শুনুন বিশ্বে লিড দেওয়া জাতির কাহিনী। জাপানে স্কুলের বাথরুমসহ স্কুল পরিস্কার করে ছাত্ররা, ইন্দোনেশিয়ায় দেখলাম সন্তানদের তাদের মায়ের পা ধুয়ে দিতে স্কুলে প্রোগ্রাম এর আয়োজন করেছে। কবি জসিমউদ্দীন একবার আমেরিকা গেলেন সেখানকার হোটেলে একজন ছেলে তার অনেক সেবা যত্ন করলো। কবি চিন্তা করলেন যাওয়ার সময় তাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে যাবেন। এক সময় সে ছেলে কবিকে জোর করে তার বাসায় নিয়ে গেল। কবি তার বাসায় গিয়ে তাজ্জব। সে তো রীতিমত একজন ধনাট্য লোকের সন্তান। কবি বললেন আপনি আপনার সন্তানকে কেন হোটেলে কাজে দিলেন? তার বাবা বললো এই সময় প্রচুর টুরিস্ট আসে হোটেলে কাজ করলে সে অনেক সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবে। আর যে টাকা পাবে তা দিয়ে ইউরোপ ট্যুর করতে পারবে।
হে হতভাগা জননী, হে বেকুব পিতা পৃথিবীটা অনেক বড় তার নেতৃত্ব দিতে চাই যোগ্যতা। আগেকার বাদশারা শুধু বাদশা ছিলেন না ছিলেন সবচাইতে বড় বীর যোদ্ধা। প্রিয় জাতির সন্তানেরা সামান্য খেলা নিয়ে জাতিগত বিদ্বেষ আর হাঙ্গামায় না জড়িয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করুন🔝। বিশ্ব বহু বড়, মিরপুর স্টেডিয়াম সেখানে চোখে পড়ে না।
ননীর পুতুল দিয়ে বিশ্ব জয়ের কোন রেকর্ড নেই সে রেকর্ড হবেও না প্রিয় মায়েরা এবং বাপেরা। সুতরাং সন্তানকে ননীর পুতুল বানাবেন না।
২৩ নভেম্বর ২০২১
পশ্চিম ধানমন্ডি

 

আরও পড়ুন