Ads

বুক রিভিউ লেখার নিয়ম

তানিম ইশতিয়াক

অনেকেই জানতে চান কীভাবে বুক রিভিউ লিখতে হয়। সত্যি কথা বলতে, বই রিভিউ করার ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। আপনার মনমতো যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে লিখতে পারেন। এর গঠনগত কোনো মডেল নেই, শুরু করার নির্দিষ্ট ব্যাকরণ নেই, শেষ করার কোনো বিশেষ বিধি নেই।

বুক রিভিউ কাকে বলে?
উত্তর হতে পারে এমন : এটা জাস্ট আপনার একটা প্রতিক্রিয়া। একটা বই পড়ে আপনার কেমন লেগেছে সেই অনুভূতি। কেন এই বইটা অন্যদের পড়া উচিত সেই সম্পর্কে আপনার মতামত। যদি মনে করেন, বইটি আপনার খুব খারাপ লেগেছে বা পড়ে সময় নষ্ট হয়েছে- সেটা বলাও বুক রিভিউ। এটি অনেকটা পণ্যের গুণমানের মতো, যাতে আপনার রিভিউ পড়ে অন্যরা আগ্রহী অথবা সতর্ক হয়।

রিভিউয়ে কী থাকবে?
আগের আলোচনা নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে একটা বইয়ের রিভিউয়ে কী কী থাকতে পারে। যেহেতু আপনি বইটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে চাচ্ছেন তাহলে বইটির পরিচিতি থাকবে। অর্থাৎ এটি কী ধরনের বই– কবিতা নাকি উপন্যাস, প্রবন্ধ নাকি ফিকশন, ধর্ম নাকি বিজ্ঞান, অর্থনৈতিক নাকি রাজনৈতিক? বইটির লেখক কে? লেখকের বিশেষ কোনো পরিচয় থাকলে উল্লেখ করা যেতে পারে। বইটির প্রকাশনী কোনটা, কত সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছে– এ ধরনের তথ্যও দিলে পাঠকের জন্য সুবিধা হবে।

দ্বিতীয়ত, বইটি কোন ধরনের পাঠকের জন্য উপযোগী? অর্থাৎ বইটি বুঝতে নির্দিষ্ট বয়স বা যোগ্যতা প্রয়োজন আছে কিনা। বইটি পড়লে তাদের কী লাভ হতে পারে? কোন ক্ষেত্রে এই বইয়ের জ্ঞান কাজে লাগতে পারে? সব বই যে জ্ঞানের হবে তা না। তাহলে বিনোদন হবে কিনা, আনন্দ পাবে কিনা, সুন্দর সময় কাটবে কিনা!

তৃতীয়ত, বইয়ের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, যাতে পাঠক একটু ধারণা লাভ করে। সারসংক্ষেপ জানলে পাঠক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বইটি পড়বে কিনা। তবে যদি উপন্যাস হয়, থ্রিলিং কোনো টুইস্ট থাকে– সেসব উল্লেখ করা উচিত নয়। কারণ রহস্য জেনে গেলে বইট পড়ে আর মজা পাবে না।

চতুর্থত, লেখকের দক্ষতা প্রসঙ্গ। অর্থাৎ যে বিষয়টি নিয়ে তিনি লিখেছেন তা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। লেখক কতটা মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, কতটা গভীরে যেতে পেরেছেন, কতটা নতুন কথা বলতে পেরেছেন, কতটা নতুন কিছু শেখাতে পেরেছেন। বইটি কি তার মৌলিক সৃষ্টি মনে হয়েছে নাকি কপিপেস্ট মার্কা চর্বিতচর্বণ হয়েছে- সেটা বলতে পারেন।

পঞ্চমত, বইয়ের প্রশংসনীয় দিকগুলো বলতে পারেন। কী কারণে লেখক বাহবা পেতে পারেন, কোন কোন বিষয়ের কারণে আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন সেসব লিখতে পারেন। লেখক পাঠককে কতটা আলোড়িত করতে পেরেছেন, কতটা ভাবনার উদ্রেক ঘটাতে পেরেছেন, কতটা আবেগাপ্লুত করতে পেরেছেন?

ষষ্ঠত, বইটি পড়ে আপনার কতটা ভালো লেগেছে, কতটা খারাপ লেগেছে, আপনার উপর কেমন প্রভাব ফেলেছে- সেসব কথা বলতে পারেন। আপনার খুব পছন্দ হয়েছে এমন কোনো উক্তি-ডায়লগ-চরিত্র থাকলে সেটাও উল্লেখ করতে পারেন।

সপ্তমত, বইটির অসঙ্গতি তুলে ধরতে পারেন। কোনো তথ্যগত ভুল, প্রসঙ্গগত অমিল, উপস্থাপনের ত্রুটি থাকলে পাঠককে জানিয়ে দিতে পারেন। আপনার কাছে কোনো কিছু উদ্ভট-আজগুবি মনে হলে, পাগলের প্রলাপ মনে হলে, লেখকের উদ্দেশ্যগত অসততা দেখলে সেটার প্রমাণও তুলে ধরতে পারেন।

ভালো রিভিউ কোনটা?
আগেই বলেছি রিভিউয়ের কোনো নির্দিষ্ট মডেল নেই। তাহলে ভালো রিভিউ কোনটা? উত্তর হচ্ছে, আপনার রিভিউয়ে আপনি কতগুলো বিষয় আনতে পেরেছেন। উপরে আমি যে বিষয়গুলো বললাম¬ এগুলোর বাইরেও কিছু থাকতে পারে। তথ্যগুলোর কোনো সিরিয়াল বা ধারাবাহিকতা নেই। আপনি যখন যেভাবে তথ্যের উপস্থাপন উপযোগী মনে করেন সেভাবেই করতে পারেন। এবার দেখা যাবে বই বা লেখকের আলোচনা-সমালোচনা বিষয়ে আপনার দক্ষতার প্রশ্ন। আপনি কতটা গঠনমূলকভাবে এই মতামত ব্যক্ত করতে পেরেছেন, কতটা সুন্দরভাবে আপনার রিভিউটা উপস্থাপন করতে পেরেছেন! আপনার রিভিউ পড়ে পাঠকও রিভিউ করবে তারা কতটা ভালোভাবে জানতে পেরেছে‍!

রিভিউ লিখতে করণীয় কী?
বইটি পড়ার সময় মনোযোগ দিতে হবে। আগে থেকে করা ভালো বা খারাপ ধারণা বাদ দিয়ে খোলা মনে বইকে উপলব্ধির চেষ্টা করতে হবে। পড়তে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় নোট করতে হবে অথবা চিহ্নিত করে রাখতে হবে। বইটি লেখক যেভাবে বুঝাতে চেয়েছেন তার ইন্টেশনটা আপনাকে ধরতে পারতে হবে। না বুঝে বা কম বুঝে আন্দাজে তার সমালোচনা করা হবে লেখকের প্রতি অবিচার। সর্বশেষ মনে রাখুন, আপনাকে নির্মোহ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। আপনাকে সৎ থাকতে হবে। অযথা প্রশংসা করবেন না, আবার আন্দাজে নিন্দেও করবেন না।

লেখকঃ কলাম লেখক

আরও পড়ুন