।। ডঃ সাবরিনা নাজ ।।
বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসের জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগাম – (UNEP) – এর এবছরের বির্ধারিত থিম “Harmony with nature and sustainable development” অর্থাৎ প্রকৃতির ঐক্যতান এবং টেকসই উন্নয়ন। এখানে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান UNEP প্রথমেই স্বীকার করে নিয়েছে প্রযুক্তি যতই এগিয়ে যাক না কেন, জীবন বিত্ত বৈভব যত হোক না কেন, মানুষ প্রকৃতির সন্তান। মানুষ জীববৈচিত্র্যের অংশ। জাতি হিসাবে মানুষের বিকাশ, অস্তিত্ব এমন কি পরিবর্তিত পরিবেশ ও প্রতিবেশগত পরিস্থিতিতে এককভাবে মানুষের টিকে থাকা সম্ভব না। প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ পালন, সম্পৃক্ততা স্বীকার ও ধারণ করে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের মঙ্গল নিহিত ।
এবারের থিমকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই, পৃথিবীর সকল জীব তা আণুবীক্ষনিক হোক অথবা দৃশ্যমান হোক, প্রাণী হোক উদ্ভিদ হোক সকলেই একে অপরের প্রতি আহার, বাসস্থান, প্রজননের জন্য নির্ভরশীল। পারস্পারিক নির্ভরশীলতা একটি আন্তঃ ও অন্ত সম্পর্কের জালিকা। যা সবসময় দৃশ্যমান নয়। তেমনিভাবে এখন পর্যন্ত মানুষের পক্ষে সকল জীবের সাথে পরিবেশের সকল প্রকরণের সঙ্গে সম্পর্কগুলো নিয়ে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভবপর হয়নি। পারষ্পারিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক ও পরিবেশীয় প্রকরণের শৃঙ্খল বিঘ্নিত হলে বিপর্যয় অনিবার্য।
আরও পড়ুন-
অনুজীব থেকে আরম্ভ করে মানুষসহ সকল দৃশ্যমান উদ্ভিদ ও প্রাণী খাদ্য ও শক্তির সুশৃঙ্খল জালের মাঝে আবদ্ধ। সূর্যালোক ব্যবহার করে আনুবীক্ষণিক উদ্ভিদ ( শৈবাল, কিছু ব্যাকটেরিয়া) ও দৃশ্যমান উদ্ভিদ সুর্যশক্তিকে খাদ্যে রূপান্তর করে। সেই খাদ্য তৃণভোজী, মাংসাশী ও সর্বভূক প্রাণী এবং অন্যান্য পরভোজী উদ্ভিদ গ্রহণ করে।
মানুষ নানানভাবে পরিবেশ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে অভ্যস্ত। নিজের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য, মান উন্নয়নের জন্য মানুষ নির্বিচারে সচেতন ও অসচেতনভাবে ধ্বংস করেছে প্রকৃতি, প্রাকৃতিক উপাদান ও জীববৈচিত্র্য। কোন নির্দিষ্ট স্থানের প্রাকৃতিকভাবে দীর্ঘকালের ক্রমাগমনের ফলে ওই স্থানের উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র্য গড়ে উঠে। নগরায়ন, শিল্প উন্নয়ন দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল বিবেচনায় না এনে বনায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণের নামে অপরিকল্পিত বিনোদন বা পর্যটন, দ্রুত বর্ধনশীল বিদেশীমাছ মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাকৃতিক জলাশয়ে অবমুক্তকরণ,ফসলী জমিকে জলাশয়ে রূপান্তর, আবার পুকুর ভরাট করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা মাটি, বায়ু ও পানি দুষণ আমাদের জীববৈচিত্র্য হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত।
এছাড়াও বনজ, ফলজ ও কৃষি, মৎস্য চাষ, পোলট্রি চাষে কীটনাশক অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ, আগাছানাশক ও অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক সার ব্যবহার মাটি, পানির অনুজীবসহ অন্যান্য জীব যেমন শামুক, ঝিনুক, প্রাকৃতিক স্থলজ, জলজ উদ্ভিদ প্রানীর নিবাস ধ্বংসের পাশাপাশি তারে জীবনের হুমকির কারণ হিসাবে ক্রিয়াশীল। দূর্ঘটনা বশতঃ প্রকৃতিতে চলে আসা আগ্রাসী উদ্ভিদ, দ্রুত বর্ধনশীল বৃক্ষ, নতুন ফলজ গাছ, শখের বশে লাগানো জলজ ও স্থলজ গাছ এবং হাইব্রিড সবজি বীজ আনা এবং চাষ করা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রচলন করা আমাদের উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র্যের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য বহুল অংশে আজও অনাবিস্কৃত। আবিস্কারের পূর্বে ধ্বংস হওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা জানলামও জীববৈচিত্র্যের অবস্থান থেকে বাংলাদেশের প্রাচুর্যতার কাহিনী। বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসে অঙ্গীকার হোক বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য আমার, একে রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের দায়িত্বও আমার।
লেখকঃ প্রফেসর, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ই-ডাক: [email protected]
লেখাটি নয়া দিগন্তে পূর্ব প্রকাশিত । নয়া দিগন্তে প্রকাশিত লেখার লিংক- বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস-২০২৫ ভাবনা
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।