Ads

আমরা ও আমাদের পরিবার, সবাই কি তবে স্বার্থের পিছনে?

।। জামান  শামস ।।

 

সকালে ফজর নামাজ পড়ে আমার নিত্যদিনের অভ্যাস লিখা,কখনো তাহাজ্জুদ পড়েও লিখি।তৈরী হলে আমার ফেসবুক পাতায় পোস্ট করি। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। লিখাটা পোস্ট করেই দেখতে পেলাম চিত্রনায়ক রিয়াজের শশুর ফেসবুক লাইভে,উপরে শিরোনাম উনার আত্মহত্যার খবর।চমকে গেলাম,সাথে কৌতুহল হলো তিনি মৃত্যুর পূর্বে কি বললেন তা শোনার জন্য।

 

পনেরো মিনিটের লাইভে যে কথাগুলো তিনি বললেন-দয়া করে একটু শুনুন।শুধুমাত্র দুনিয়ার আরাম আয়েশ, তথাকথিত উন্নতি আর মরীচিকার পিছনে ছুটতে গিয়ে নিজেদের পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। আল্লাহ না করুন,তাহলে এমন করুন ও মর্মান্তিক পরিনতি আমার আপনার জন্যও অপেক্ষা করছে।
Quote

 

“আমি মুহসিন,ঢাকায় থাকি।একসময় ভালো ব্যবসা করতাম।বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত,ব্যবসা বানিজ্য নেই।কিছুদিন আগে…. আমার ভিডিও লাইভে আসার কারণ হল-আমার যে এক্সপেরিয়েন্স তা অনেকের সাথে শেয়ার করলে তারা সাবধানতা অবলম্বন করতে পারবেন।

 

গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান।উনার সবই আছে।একমাত্র ছেলেটি আমেরিকা থাকে। মা মারা গিয়েছে শুনেও ছেলেটি আসলোনা। আমার আরেক খালার কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে।তার তিন ছেলে ইন্জিনিয়ার।দেশেই থাকে।তিনি ভাগ্যবান যে ছেলেরা মায়ের শেষ সময় পাশে ছিলো। আমার একটা মাত্র ছেলে।সে অস্ট্রেলিয়া থাকে।

 

আমি বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি।খালা মারা যাওয়ার পর আমার ভয় করছে।আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি-এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবেনা।আমরা যাই রোজগার করি সব স্ত্রী ছেলে মেয়েদের জন্য।একশত টাকা কামাই করলে তার বিশ পারসেন্টও নিজের জন্য খরচ করিনা,আশিভাগই তাদের পিছনে ব্যয় হয়। একসময় আয় ভালো,সেটা মেইনটেইন করতে না পারলে কেউই পসন্দ করেনা।

 

গত করোনা শুরুর আগে আমি বাংলাদেশে আসি।একা থাকা যে কি কষ্টের……আমার এখন আর পৃথিবীর প্রতি, পৃথিবীর মানুষের প্রতি….যাদের জন্য করেছি,তাদের প্রত্যেকের কাছে প্রতারিত হয়েছি।আমার এক বন্ধু আমার ২৫ লক্ষ টাকা মেরে দিয়েছে।আরেকজনকে ৭ লাখ টাকা দিয়েছিলাম পানির প্রজেক্টেক মেশিন আনতে।সেটাও এখন দেয়না।৫/৬ কোটি টাকা এভাবে মানুষের কাছে পাই। মানুষ কিভাবে এতো লোভাতুর হয়।অন্যের টাকা ছল চাতুরী করে নিয়ে যায়।পৃথিবীতে আপনিই আপনার।

 

ছেলে মেয়ে স্ত্রী কেউ আপনার না।আগে যেভাবে রেখেছেন সেটা মেইনটেইন করতে না পারলে কেউ বুঝবে না। আমি মেনট্যালী খুব আপসেট।জীবনে প্রতারিত হতে হতে….নিজের উপর নিজে এতটাই বিতৃষ্ণ হয়ে গেছি যে আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।

 

পিতামাতা যা উপার্জন করে তার সিংহভাগ সন্তানদের পেছনে খরচ করে। প্রকৃত বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে, ফ্যামেলিকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্যামেলি অনেক সময় বুঝতে চায় না। নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। যারা দেখছেন, তাদের সাথে এটাই শেষ দেখা। সবাই ভালো থাকবেন।’
আত্মীয় স্বজন যারা আছো, যেহেতু বাবাও আমাকে জায়গাটা দেয়নি, আমি যে কবরস্থানটা করেছি সেখানে আমাকে দাফন করো না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে একটি কবরস্থান হয়েছে, সেখানে তোমরা আমাকে দাফন করে দিও।

 

নিজেকে আর মানায় নিতে পারলাম না। যারা দেখছেন এটাই হয়তো আপনাদের সঙ্গে আমার জীবনের শেষ দেখা। পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। হয়তো আমি দুইদিন পরে যেতাম দুইদিন আগে যাচ্ছি। সবাই ক্ষমা করে দিও। ছেলে-মেয়েকে বলবো তোমরা দুইজনে মিলমিশে চলো। একে অন্যের খোঁজ খবর নিও, আর বাবা হিসেবে আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভালো থেকো।”
Unquote

 

আজকের আধুনিক জীবনে মূল্যবোধগুলো যেন উল্টে গেছে। বরাবরই পারিবারিক জীবন ছিলো সমাজের প্রাণকেন্দ্র। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আরো অনেক ঐতিহ্যের মতো এটাও আজ স্বার্থ ও “অনেক বড় হবার স্বপ্নে” আক্রান্ত। আর সেজন্য যেমন করেই হোক তার অর্জনচেষ্টা আমাদের পাগল বানিয়ে ছাড়ছে। এর ফলে দুনিয়াও হারাচ্ছি,হারাচ্ছি আখেরাতও।
মূলতঃ মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারনে ভুল করলে এমন পরিনতিই বাস্তব হতে পারে।

 

সাধারণতঃ সীমিত সম্পদ ও কম স্পৃহার লোকগুলোর জীবন যাপন সাধারণ হয়,সমাজবদ্ধতায় থাকে,পারিবারিক বন্ধনও এদের মজবুত।এদের মৃত্যু হয় ঘরভরা মানুষের মাঝখানে আল্লাহর নাম মুখে পক্ষান্তরে বিত্ত বেসাতি ও পরিবারবিচ্ছিন্ন মানুষগুলোর মৃত্যু হয় একাকী,নীরবে।মৃত্যুর মতো কঠিন যন্ত্রনাকাতর মূহুর্তে এক ফোটা পানি মুখে দিবার কেউ কাছে নেই।
অতএব, আসুন, আমরা আল্লাহকে মেনে চলি, আমাদের রক্তের বন্ধন অটুট রাখি। এই ঘটনাটি চিন্তা করলে অনুধাবন করা যায় যে, পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখা আমাদের শুধু আজকের নয়, সব সময়ের জন্য প্রয়োজন। এটা আমাদের মাঝে স্থিতিশীলতার বোধ এবং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়। আসুন, আমাদের পরিবার-পরিজনের, আমাদের আত্মীয়-স্বজনের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকি।

 

লেখকঃ সাবেক অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ, পরিবার ও নিজেকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য নানা ধরণের

আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন  এবং

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন