Ads

রক্তের দেনা

ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী

আমাদের নবী (সা) একটা হাদীসের মাধ্যমে যেন আমাকেই ডেকে বলেছেন, তোমার সামনেই তোমার যে সন্তান গুলো হচ্ছে ওরা কিন্তু সবাই আল্লাহর নিয়মে ও তাঁর দেয়া সিস্টেম মেনে জন্ম নিয়েছে। একে “ফিতরাহ” বলা হয়। ওদের দেহে- মনে, চিন্তায়- আচরণে, কান্নায় বা হাসিতে, আদর দেয়া ও নেয়ায় কোন স্বভাব বিপরীত, আল্লাহর ইচ্ছার বিপরীত, এমনকি দুনিয়ার সারা সৃষ্টির সাথেও কোন অসঙ্গতি নিয়ে তারা দুনিয়ায় আসেনি।

এখানে সেই সেরা শক্ত পথ ছেড়ে খারাপের পথে কিন্তু তুমি বাবা মা ই তাদের নিয়ে যাচ্ছো। ঘুষ খাওয়া দেখিয়ে টাকার লোভী বানাচ্ছো। মিথ্যাময় জীবন দিয়ে ওদের মিথ্যুক বানাচ্ছো। অপকর্ম ও অশ্লীলতার সলীলে ডুবে ওদেরও গা ভিজিয়ে দিচ্ছো। তুমি গান শোন তাই ওরা পপ স্টার দের রাজা বানায়, তুমি নাচ দেখ তাই ওরা হিন্দুদের উদোম করা নাচে ডোবে, তুমি বাজে সময় কাটাও তাই ওরাও নানা রকম খেলায় মত্ত থাকে।

সেদিন আমি “কুন আনতা” নাশীদটা শুনছিলাম, আর আমার মোবাইলে কিছু মেসেজের জবাব দিচ্ছিলাম। আমার মেঝ মেয়ে দৌঁড়ে যেয়ে আর দুই বোনকে ডেকে নিয়ে এলো। বললো, “দেখ দেখ, আব্বু কেমন ভাবে মাল্টিপল কাজ একসাথে চালাচ্ছে। আর আমরা করলেও সরদারজি কেমন ক্ষেপে যায়”। আমার বৌ হাসলেন, এবং বললেন, “দেখলে তো রক্তের দেনা”!!

ছোট ছোট বাচ্চাগুলো আমার সামনে বড় হয়ে উঠছে। এখন আমার বড় মেয়ে আমাকে অনেক কিছু শেখায়। দর্শনের নানা দিক বোঝায়, মনোবিজ্ঞানের অনেক দিক আমার চোখে মেলে ধরে, যা আমার কাছে আঁধারে গুপ্ত ছিলো। ওকে দেখি আর ভাবি ও কি সেই ফিতরাতের উপর আছে? নাকি আমি আসল পথ থেকে দূরে সরায়েছি। ওর বড় হওয়াতে আমার হাত, আমার অবদান কতটুকু আছে?

আমাদের নবী (সা) যেন আমাকেই ডেকে বলে গেছেন, দেখ, তোমার সন্তানেরা কিন্তু মুসলিম হবে- এইটাই হবে রক্তের দেনা। ফিতরাতের দাবী। তোমার দাদা, তোমার বাবার দেয়া এইটাই আমানাত। তুমি যেন ওদের খাঁটি মুসলিম বানায়ো।
আমি ভাবি, আহা কত নিঠুর ও নির্মম ভাবে আমাদের নবী (সা) বলে গেছেন, “বাবা মা তার সন্তানদের ইইয়াহুদি বানায়, খৃস্টান বানায়, আগুনপূজারী বানায়”। মানে এইগুলো সাধারনতঃ হয়ে থাকে। সুন্দর ভাবে হয়ে থাকে। হিন্দুর ছেলে হিন্দু হচ্ছে। খৃস্টানের ঘর ভর্তি খৃস্টান সন্তান। অগুনের উপাসকেদের আঙিনায় তাদের সন্তানেরা আগুনের ই পূজা করে। কাজেই, হে মুসলিম, তোমার সন্তানগুলো যেন তোমার মত মুসলিম হয়।

আমি ভয় পাই। আমি যে মুসলিম, আমার চেয়েও তো ভালো হওয়া দরকার ছিলো আমার সন্তানদের। কারণ তাদেরকে আমাদের চেয়ে ভালো দেশে ও ভালো স্কুলে পড়িয়েছি। তা কি তারা হচ্ছে? তারা এমন কি আমার মত ও হচ্ছে? না হতে পারলে আমার কি কোন দায় দেনা আছে?
রাতের এই শেষাংশে আমার মনে হচ্ছে, আমি ইবরাহীমের (আ) মত সফল পিতা বোধ হয় হতে পারছিনা, পারছিনা বোধ হয় আমার প্রিয় মুহাম্মাদের (সা) দেয়া আমানাত আমার সন্তানদের কাছে ১০০% পৌঁছে দিতে। রক্তের এ দেনা কি শোধ করে যেতে পারবো??

লেখকঃ ইসলামী স্কলার ও প্রবাসী বাংলাদেশী, ইংল্যান্ড

আরও পড়ুন