Ads

সন্তান তিনের কম নয়

এহসানুল হক জসীম

আমরা তরুণ প্রজন্ম; আরেক প্রজন্মকে পৃথিবীতে আনা ও রেখা যাবার গুরু দায়িত্ব এখন আমাদেরই উপর। পারছি কি আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে? আমাদের এই প্রজন্মের বেশির ভাগেরই অবস্থা এমন– আমরা নিজেদেরই দেখাশোনা করতে হিমশিম খাচ্ছি। সেখানে আরেক প্রজন্মকে পৃথিবীতে সুন্দরভাবে নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করবো কেমন করে!

কমপক্ষে তিনটি সন্তান না নিলে জনসংখ্যার ভারসাম্য ঠিক রাখা মুশকিল হবে। তিনটি সন্তান! আমাদের প্রজন্মের অনেকে এখন আমরা বিয়ের পর প্রথম কয়েক বছরের মধ্যে একটি সন্তানও নিতে চাই না। সন্তান নেয়া ও তাকে বড় করার অনবরত ঝামেলা থেকে আমরা মুক্তি চাই। এমনিতেই চাপের ঠেলায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি, যেখানে এক সন্তানের চাপ নিতে পারছি না অনেকে; সেখানে তিন সন্তানের চাপ সইবো কেমনে!

জনসংখ্যার চাপ কমানো; স্ত্রীর চাকুরী ও স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি জীবনধারণের খরচ বেশি হওয়া, অনেকটা নিজেকে আধুনিক হিসেবে উপস্থাপন করা, ফ্যাশন এবং এনজয় করার জন্য এখন অনেকে সহজে সন্তান নিতে চায় না। অনেক মেয়ে বিয়ে করতে দেরী করে। অনেক দম্পতি প্রথম সন্তান নিতেও অনেক দেরী করে। বিশেষ করে এই প্রবণতা শহরের দম্পতিদের মধ্যে বেশি। এই দেরীর ফলে শেষে অনেকের সহজে প্রথম সন্তানই হয় না। অনেকের প্রথম সন্তান হওয়ার পর দ্বিতীয় সন্তান সহজে হয় না। শহরে একটি দম্পতির একটি সন্তান বড় হওয়ার মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে– সেকথা অনেকে এখন ভাবছেও না, বুঝতেছেও না।

এই যে বিয়ে করতে দেরী করা, সন্তান নিতে দেরী করা, সহজে সন্তান না নেওয়া এবং নানা পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অনেকের সন্তান সহজে না হওয়ার ফলে একটা সময় বাংলাদেশে একটা ভয়ংকর আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নগামী হওয়া– এটা হবে একটি ভয়ংকর দিক। এমন অবস্থা এখন চীন ও জাপানসহ কিছু উন্নত দেশে বিরাজ করছে।

সাম্প্রতিক অতীতে তারা আমাদের মতো ফ্যাশন, আধুনিকতা ও এনজয়মেন্টের পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস এবং অর্থনৈতিক কারণে সন্তান নেওয়ার প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ফলে এসব উন্নত দেশে এখন জন্মের হার মৃত্যুর হারের চাইতে কম। জাপানের মতো উন্নত দেশে বৃদ্ধদের আধিক্যের প্রবণতা তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ চীনে গর্ভধারণের হার খুবই কম হওয়ায় বিষয়টি তাদেরকে ভাবাচ্ছে। ভবিষ্যতে এর পরিণতি যে ভয়াবহ হবে– এমন আংশকায় তারা নতুন করে ভাবছে। ফলে অনেক উন্নত দেশ এখন সন্তান কম নেওয়ার ভাবনা পরিত্যাগ করার চিন্তা করতেছে। এই ভাবনায় সর্বশেষ যোগ দিলো চীন।

দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ নিম্নগামী হওয়ায় শেষমেশ বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলো চীনকে। দেশটিতে ৩ সন্তানের জন্ম দেওয়া বৈধ বলে আজ থেকে স্বীকৃত হলো। মে/২০২১ মাসের শুরুতে চীনের সর্বশেষ আদমশুমারির ফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, গত দশকে চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল সবচেয়ে কম। চীনের সর্বসাম্প্রতিক এই আদমশুমারির আগ থেকেই দেশটির বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে নেয়া যায় কিনা।

জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রোধে ১৯৭৯ সালে চীন ‘এক সন্তান নীতি’ গ্রহণ করেছিল। শক্তহাতে ওই নীতি বাস্তবায়নের কারণে সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে সক্ষমও হয়েছিল। কিন্তু পরে জন্মহার বেশি কমে যেতে থাকায় চীন এ নীতি থেকে সরে আসে। ২০১৬ সালেই চীন সরকার দম্পতিদের দুই সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়। তারপরও চীনে জন্মহারে ভারসাম্য আসেনি। ২০১৮ সালে সন্তান জন্মের হার ছিল এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন। একই সঙ্গে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা তরতর করে বাড়তে থাকে।

চীনের এই তিন সন্তান নীতি দেশটির জনসংখ্যা সমস্যার দ্রুতই কোনো সমাধান দিতে পারবে না। কারণ, এখন চীনের অনেক নারী এখন এক সন্তানও নিতে চায় না। এক সময় বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয় এবং এটা এখনো হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণকে যখন গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছিল বা অনেকদিন চলছিল; তখনকার প্রেক্ষাপটে সেটা প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়ে এখন আমরা তরুণ প্রজন্ম নিজদের দিক থেকে বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যত কী হবে– ভাবছি কি আমরা?

আমাদের এই তরুণ প্রজন্মের উচিত, সৃষ্টির ভারসাম্য এবং দেশের জনভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য অন্তত তিনটি সন্তান নেওয়া। ইয়েস, সন্তান তিনের কম নয়– এটাই ভাল বলে মনে করি। এখন অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু এক সময় হয়তো আমাদেরকে চীনের মতো ভাবতে হতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার আপনার নাতি-নাতনীরও আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা– এসব নিকটজনেরও প্রয়োজন রয়েছে।

লেখকঃ কলাম লেখক

এই ক্যাটেগরির আরও লেখা-

বেয়াড়া সন্তানকে কেউ শাসন করে না

আরও পড়ুন