Ads

আলোকিত জাতি গঠনে অন্তরায়ঃ নৈতিক শিক্ষার অভাব

।। মুহা. সিফাতুল্লাহ ।।

শিক্ষা ও নৈতিকতা একটির সাথে অন্যটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শিক্ষা একজন ব্যক্তিকে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে।আর নৈতিকতা মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলে। এ দুটির সমন্বয় হলে ব্যক্তি সৎ, চরিত্রবান, খোদাভীরু, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠে। যার ফলে নৈতিক শিক্ষা সমাজ দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম একটি হলো শিক্ষা। শিক্ষা একটি জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ড যেমন প্রাণীকে কর্মক্ষম করে তোলে, শিক্ষা তেমনি একটি জাতিকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে এবং উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে পারে। শিক্ষাহীন জাতি মেরুদণ্ডহীন প্রাণির মতো।

অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে ব্যক্তি জীবনে এবং সমাজে সফলভাবে প্রয়োগ করাই শিক্ষা। শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করে, মানব হৃদয়কে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে।

নৈতিকতা মানুষের সবচেয়ে উন্নত গুণ ও বৈশিষ্ট্য। সততা, সদাচার, শিষ্টাচার, সৌজন্যমূলক আচরণ, সুন্দর স্বভাব, সুমিষ্ট কথা, উন্নত চরিত্র এসব কিছুর সমন্বয় হলো নৈতিকতা। দৈনন্দিন কার্যক্রম ও সামাজিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মানুষ যে সকল নীতি, আদর্শ এবং সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনগত অনুশাসন মেনে চলে তার সমষ্টিকেই নৈতিকতা বলে। নৈতিক অনুশাসনের প্রভাবে মানুষ আইন মানে, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করে না এবং রাষ্ট্রের অনুশাসনকে শ্রদ্ধা করে।
নৈতিকতার সংকট হলো সামাজিক অবক্ষয়। নৈতিকতা যেমন সমাজকে সুচারুরূপে গড়ে তুলে তেমনি নৈতিকতার সংকট একটি সমাজকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিয়ে যায়।  সাম্প্রতিক  সামাজিক অবক্ষয় জনিত কারণে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। অনৈতিকতার প্রভাবে নৈতিকতা প্রায় বিলুপ্ত।

আরও পড়ুন-

ধার্মিকতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব যেমন হবে

পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মনোবৃত্তিতে ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। পরিণতিতে সমাজ ও পরিবারের বেজে উঠেছে ভাঙ্গনের সূর। নষ্ট হচ্ছে পবিত্র সম্পর্কগুলো। চাওয়া পাওয়ার ব্যবধান হয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি। ফলে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যা, হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধপ্রবণতা।

মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মত এমন নির্ভেজাল সম্পর্কের জায়গাগুলোতে ফাঁটল ধরেছে। ঢুকে পড়েছে অবিশ্বাস আর এর ফলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে সৃষ্টি হয়েছে আস্থার সংকট। সমাজে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের হার ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে পরকীয়ার মতো অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যদিও পূর্বে পরিবারকে মানবজাতির প্রাথমিক শিক্ষালয় বলা হতো, কিন্তু দর্শনের অভাবে পরিবারগুলো আর তেমন থাকছে না। উপযুক্ত জীবন দর্শনের অভাবে পরিবারগুলো এখন ভোগ-বিলাস, অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, পরশ্রীকাতর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।

আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতার প্রতিযোগিতায় পড়ে ভারসাম্যহীন সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ যুব সমাজ। নৈতিকতাহীন শিক্ষায় তারা দূরে সরে যাচ্ছে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া থেকে। হয়ে যাচ্ছে বখাটে, মাদকাসক্ত, ইভটিজার, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর।  সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ন্যায়নীতি ও ন্যায়বিচার।

স্যাটেলাইটের সুবাদে উন্মুক্ত উপসংস্কৃতির মাঝে দেশের সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় যুব সমাজ, এমনকি শিশুরাও ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার কল্যাণের নামে অকল্যাণ বয়ে আনছে। দেশে ভয়াবহ মহামারির ন্যায় দানা বাঁধছে সামাজিক অবক্ষয়।  এই অবক্ষয়ের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে জাহিলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত আরব সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষা ছিল কিন্তু নৈতিকতা ছিল না। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আবির্ভাবে সেই জাতিই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে রূপান্তরিত হলো। মানবতার মহান শিক্ষক মহানবী (স.) নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েই আরব জাতিসহ সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে জাহেলী যুগ থেকে বের করে আনেন, অশান্ত সমাজে শান্তির সুবাতাস বয়ে আনেন। শান্তি আনতে নৈতিক শিক্ষাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। আদর্শ পরিবার গড়ে তুলে সামাজিক শাসন নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন-

দৃষ্টিকে বিপথে যেতে দিলে সেটি হৃদয়কে অন্ধ করে দেয়

নৈতিক শিক্ষার প্রসারের জন্য শিক্ষা কারিকুলামে ধর্মীয় শিক্ষাকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, মসজিদের খতিব, আলেম সমাজ, শিক্ষকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিটি পরিবারের মাঝে নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

আসুন আমরা মহান আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দেখানো নির্ভুল জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়ে নৈতিকতা সম্পন্ন একটি আলোকিত জাতি গঠনে সহায়ক ভুমিকা পালন করি।

লেখকঃ লেখক ও শিক্ষক, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, উত্তরা ক্যাম্পাস, ঢাকা

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

 

আরও পড়ুন