।। প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।
ইসলামী শিক্ষায় দায়িত্ব পালনে যোগ্যতার গুরুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করলে তা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তা একটি গুরুতর অপরাধ। কুরআন এবং হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যাক।
আল-কুরআনের আলোকে:
১. কুরআনে দায়িত্বশীলতা ও যোগ্যতার নির্দেশনা:
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা আমানতসমূহ (দায়িত্ব) তাদেরই হাতে অর্পণ কর যারা এর উপযুক্ত এবং যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার কর, তখন ন্যায়বিচার কর।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৫৮)
এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা একটি অপরিহার্য শর্ত। অযোগ্য ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব দেওয়া আমানতের খেয়ানত হিসেবে গণ্য হবে।
হাদিসের আলোকে:
১. অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া কেয়ামতের আলামত:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যখন দায়িত্ব এমন ব্যক্তিকে দেওয়া হবে যে এর যোগ্য নয়, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা কর।” (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫৯)
এই হাদিসে রাসূল (সা.) সতর্ক করেছেন যে, যখন দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির হাতে যায়, তখন তা সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলার সূচনা ঘটায়। এটি একটি কেয়ামতের আলামত।
২. যে ব্যক্তি দায়িত্ব চায়, তাকে দায়িত্ব না দেওয়া:
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“আমরা সেই ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিই না, যে তা চায় বা তার জন্য জোরাজুরি করে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৭৩৩)
এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, দায়িত্ব চাওয়া ব্যক্তির পরিবর্তে এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত, যে যোগ্য এবং নিজের ইচ্ছার বাইরে দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহী।
আরও পড়ুন-
অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়ার ফলাফল:
১. সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি:
অযোগ্য ব্যক্তিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে সমাজে অবিচার, দুর্নীতি, এবং অগ্রগতির বাধা সৃষ্টি হয়।
২. চাকুরীদাতার দায়-দায়িত্ব:
একজন চাকুরীদাতা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে যোগ্য ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে অযোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দেন, তবে তিনি অন্যায়ের সহযোগী হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় কাজে সহযোগিতা করে, সে সেই অন্যায়কারীর মতোই দায়ী।” (তিরমিজি, হাদিস ২০০৯)
৩. কেয়ামতের ময়দানে জবাবদিহিতা:
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“কেউ অন্যের বোঝা বহন করবে না। প্রতিটি প্রাণের কৃতকর্ম তার সামনে উপস্থিত করা হবে।” (সূরা আন-নাজম, আয়াত ৩৮-৩৯)
সুতরাং, চাকুরীদাতা তার অন্যায়ের জন্য কেয়ামতের ময়দানে জবাবদিহি করবেন এবং অযোগ্য ব্যক্তির ব্যর্থতার জন্য দায়ী হবেন।
উদাহরণ:
১. ইতিহাসে শিক্ষণীয় উদাহরণ:
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) দায়িত্বের বণ্টনে সতর্ক ছিলেন। তিনি বলতেন, “যে ব্যক্তি ক্ষমতা চায়, তাকে সে ক্ষমতা দিও না। কারণ, ক্ষমতা চাওয়া ব্যক্তির মাঝে লোভ এবং স্বার্থপরতা থাকে।”
২. সমাজের বাস্তব উদাহরণ:
একজন শিক্ষক যদি যোগ্য না হন এবং তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এভাবে, সমাজে অযোগ্য নিয়োগের কারণে সামগ্রিক ক্ষতি হয়।
উপসংহার:
কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা একটি মৌলিক শর্ত। অযোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি বা দায়িত্ব দিলে চাকুরীদাতা কেয়ামতের ময়দানে তার সমস্ত পাপের অংশীদার হবেন। এটি থেকে বাঁচতে আমাদের দায়িত্বের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে এবং শুধুমাত্র যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে।
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল- [email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১)
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।