।। ড. আজিজা সুলতানা ।।
এক
মাঠে দু দল চলে এসেছে। কিন্তু গোলকিপার ফরিদ আসেনি। অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কি আর করা! গল্প শুরু হয়ে গেল। মুয়াজের দাদা এসেছেন ঢাকায়। মুয়াজ খুব খুশি। কত কিছু সে জানতে পারছে দাদার থেকে। তার দাদা একজন বড় শিক্ষাবিদ সে সময়ে বিদেশে স্কলারশিপও পান। কিন্তু কি কারনে তার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তিনি ও তার বাবার একমাত্র ছেলে ছিলেন। ভাই বোনরা কেউ বাঁচেনি।
দাদার স্বপ্ন ছিল গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন। তখন ৪/ ৫ গ্রাম মিলেও একটা ইস্কুল ছিল না। কাদা মাড়িয়ে, পানি পেরিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে স্কুলে যেতে হতো। গ্রামের মানুষদের একত্রিত করে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তাই তিনি একজন অর্গানাইজার বটে। সেখানে প্রাইমারি পর্যন্ত কোন বেতন দিতে হতো না। গ্রামের মানুষদের টাকায় স্কুল চলত। দাদার ছাত্ররা বেশি বিদেশে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এখন আছে।
মুয়াজের কথা শেষ না হতেই সাঈদ শুরু করে।সাঈদ বলল,
“তোমার কথা শুনে আমার দাদারও একটা গল্প মনে পড়ল। গ্রামের কেউ কোনো সমস্যা বা তর্কে জড়িয়ে পড়লে সমাধান নেবার জন্য দাদার কাছেই তারা আসতো। আল্লাহ আমার দাদার মাথায় এত বুদ্ধি দিয়েছিলেন যে, সবাই সমাধান নিয়ে হাসিমুখে ফিরে যেত। যেকোনো সমস্যা খুব দ্রুত তিনি সমাধান করে ফেলতে পারতেন। আর মানুষে মানুষে মিলও করে দিতে পারতেন।”
“ও তাই বুঝি খেলার মাঠে গোলমাল হলে তুমি সব মিটমাট করে দাও। আমার নানার বাগান করা নেশা ছিল মানে গাছ লাগানো। আল্লার ইচ্ছায় যা লাগাতেন তাতেই এত বরকত হতো যে ফল ফসলে ভরে যেত। তখন তো এত নাতি নাতনি ছিল না। খাবে কে? জমির আইল ধরে রেখে দিতেন। যার যা প্রয়োজন নিয়ে যেত। তিনি নিজেও ছিলেন খুব স্বাস্থ্য সচেতন। ডাক্তারি পড়েননি তিনি।। তবে সেসময়ে দুই বছরের একটি ট্রেনিং নিয়েছিলেন। তার কাছে দূর দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসতো লোকজন। সুন্নাহ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতেন তিনি। আবার মাঝে মাঝে ইনজেকশনও ফুটিয়ে দিতেন।” সাঈদের ক্টহা শেষ হতেই ফুয়াদ বলল ।
আসলে আমাদের দাদা নানা বা পূর্বপুরুষদের মাঝে এমন বড় বড় তিন-চারটা গুণ খুঁজে পাবোই আমরা যদি আমরা তাদের নিয়ে চিন্তা করি। আমরা সেই গুণগুলোকে নিজেদের মাঝেও নিতে পারি।
দুই
বেশ অনেকদিন পরের কথা দাদার জীবনের গল্পগুলো মুয়াজকে এত বেশি উৎসাহিত করেছে যে, সে
চমৎকার একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে বাচ্চাদের জন্য।
যেখানে বাচ্চারা প্রকৃতির সাথে শেখে, ছোট বয়সেই তাদের সামর্থমত রিসার্চ করে, নিজেরা জার্নাল লেখে, লাইফ স্কিল ও আদব-কায়দা অর্জন করে। ম্যাথ, কোডিং ও রোবটিক্স এর মত বিষয়গুলো মজায় মজায় শিখে।
তার সাথে আছে ভাষা ও শরীরচর্চা।
সাঈদ বড় হয়ে একটি কাউন্সিলিং অ্যাসোসিয়েশন খুলেছে। অনেক মানুষ সেখান থেকে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মানসিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান পাচ্ছে। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ সামাজিক সম্পর্ক এতে অনেক ভালো হয়েছে।
একজন আরেকজনের বিপদে এগিয়ে যায়। একজনের বাচ্চা খারাপ পথে গেলে আরেকজন সাহায্য করে। যার বাচ্চা বিপথে যাচ্ছে তিনিও ব্যক্তিগত বিষয় বলে বোকামি না করে পজিটিভ শক্তি অনুভব করে। এভাবে একটি শক্তিশালী সামাজিক বলয় গড়ে ওঠে।
ফুয়াদ হয়েছে একজন স্বনামধন্য ডাক্তার। কয়েক বন্ধু মিলে একটি হসপিটালে দাঁড় করিয়েছে তারা।
সেখানে ডাক্তারদের সাথে কথা বললেই যেন অর্ধেক অসুখ সেরে যায়। ব্যবস্থাপনাও এমন স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর পরিবেশে যে, দ্রুত রোগী স্বাস্থ্য ফিরে পায়। প্রেসক্রিপশনে ঠিক ততটুকু ওষুধই লেখা থাকে যেটুকু না খেলেই নয়। কথায় কথায় এখানে তারা টেস্ট দেয় না। রোগীকে নিয়ে, ওষুধ নিয়ে কোন বাণিজ্য নেই।
আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের গর্ব। তাদের পথ অনুসরণ করে আমরা আগামী পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে পারি।
লেখকঃ লেখক ও শিক্ষক
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আ