Ads

অহেতুক ইগো এবং আমরা

খাদিজা ইয়াসমিন

মাঝে মাঝে আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই ইগো কি? কেন ইগো থাকে মানুষের মাঝে? এটা কি খুব দরকারী? কিন্তু আশপাশের কিছু মানুষকে দেখে বুঝেছি তারা কতটা স্ট্রিকলি ইগো ধারন করে রাখে তাদের মনে।
ইগো একধরনের অহমিকা, স্বার্থপরতা, নিজেকে নিয়ে বড়াই করা। এমন অনেকেই আছেন, তারা নিজেকে এত আহামরি কিছু ভাবেন যে- আপনি যদি তার মধ্যে কিছু ভুল দেখে থাকেন, সংশোধনের উদ্দেশ্যে তাকে ভুলটা ধরিয়ে দিলে স্বীকার তো করবেই না উলটো আপনাকেই নানান কথা শোনাবে, কথা বন্ধ করে দিবে, বা চোখের বিষ হয়ে যাবেন। অথচ সে এটা ভাববেনা যে, নিজের একটু আত্মপর্যালোচনা করে দেখি সত্যি এরকম কিছু আছে কিনা? ভুল, দোষ যদি থাকে সেটার সমাধান নিশ্চয়ই আছে, সেটা খুঁজি। ভুল বা দোষ স্বীকার করায় কোন পাপ বা অসম্মানের কিছু নেই।ভুল যেকোন মানুষের হতে পারে, কোন মানুষই কি ভুলের উর্ধ্বে?

আবার এমন অনেককেই দেখবেন যারা মানুষের গুনকে সম্মান করতে জানেনা, নিজেকে নিয়েই পড়ে থাকে, নিজের গুনে নিজেই মুগ্ধ, অন্যের ভালো গুন দেখে মনে মনে ঈর্ষা করে বাট প্রকাশ করেনা। আমি বলবো এই টাইপের মানুষ কখনোই নিজের মনে শান্তি পায়না। যারা অন্যের ভালোয় খুশি হতে পারেনা তারা কখনো নিজে শান্তি পায়না। আহত পাখির মত ছটফট করে বেড়ায়।

নিজেকে নিয়ে বড়াই করা, অন্যকে হেয় করা অনেক মানুষের রুটিন কাজ। আমি এই, আমি সেই, আর ও! ওতো কিছুই পারেনা। আমি এত সুন্দর! ওর চেহারা দেখেই মনে হয় মানুষ খারাপ ইত্যাদি, আমার এত এত যোগ্যতা। সব মানুষের লেভেল, যোগ্যতা কখনোই সমান হবেনা। কিন্তু প্রত্যেক মানুষই তার স্ব স্ব জায়গায় সম্মানিত। এবং আমরা সম্মান করতে বাধ্য। আমি বড় কাজ করি, আর অন্যজন একটু ছোট কাজ করে বলেই সে কি অবহেলার পাত্র বা তাকে ইগনোর করা যায়? এরকম নিজের গুন, পদ, সৌন্দর্য এসব নিয়ে বড়াই তারাই করে যারা সত্যিকার অর্থে সম্মান পাবার যোগ্য না। বড়াই করা মানুষের সাজেনা, ‘বড়াই’ করার যোগ্যতা কেবল আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালারই আছে। ‘মানুষ’ হবে নম্র এবং বিনয়ী। অহেতুক ইগো, অহম এগুলো অনেকটা হিংসের মত। আর হিংসে মানুষের সমস্ত ভালো কাজ ধ্বংস করে দেয়।

আবার অনেককেই দেখবেন মতের সাথে না মিললে যাচ্ছে তাই বলবে, কিছু লোকের মনোভাব এমন সে যা বলে তাই ঠিক, কেউ চুল পরিমাণ দ্বিমত পোষন করলে সে ভুলের মধ্যে আছে ভাববে। মতের পার্থক্য থাকতেই পারে, যেহেতু মানুষ আলাদা মত সবসময় সেম টু সেম হবে এমন তো নয়। ধরে নিলাম তার মত ভুল তাই বলে তাকে হেয় করা বা অহেতুক তর্ক করা,গলাবাজি করা উচিত নয়। তাকে বোঝাবো নইলে চুপ থাকবো। সেটা না করে গালমন্দ করে নিজেরই ক্ষতি সাধিত হয়, এভাবেই মনে হিংসা বাসা বাধে।

ইগো থাকলে-
1. শান্তি পাওয়া যায় না ।
2. পজিটিভ চিন্তা করা যায় না। (কেউ নরমাল কিছু বললেও মনে হয় আমাকেই বললো) ।
3. অবিশ্বাস কাজ করে মনে ।
4. অন্যকে হেয় করা হয়, যেটা উচিত না ।
5. ইগো থাকলে ব্যক্তির মনোভাব থাকে, কথায় আমাকেই জিততে হবে তাই কখনো কখনো সত্য স্বীকার করেনা, বা যুক্তিহীন কথা বলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি করে। ।
6. অন্যকে গুরুত্ব দিতে জানে না ।

“আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ‌ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে। “
(সূরা লোকমানঃ১৮)

আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একলোক বলল: যে কোন লোক পছন্দ করে তার জামাটা ভাল হোক, তার জুতাটা ভাল হোক? তিনি বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর; তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হচ্ছে— সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।”[সহিহ মুসলিম]

আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: সম্মান হচ্ছে- আল্লাহর পরনের কাপড়; আর অহংকার হচ্ছে- আল্লাহর চাদর। যে ব্যক্তি এটা নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করে আমি তাকে শাস্তি দেই।”[সহিহ মুসলিম (২৬২০)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বাঁচো। কেননা, হিংসা মানুষের নেক আমলকে এমনভাবে ধ্বংস করে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ)

আসুন ইগো, অহম, বড়াই ভুলে বিনয়ী হই, আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন হই, একে অপরকে প্রাধান্য দেই সম্মান করি। দেখবেন নিজেও সম্মান পাচ্ছেন। মানুষকে ভালোবাসুন পাশে থাকুন। তখন নিজেও আর ভালোবাসার অভাববোধ করবেন না।

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

 

আরও পড়ুন