Ads

আপনার পুরুষকে তার চাহিদা জানানোর স্বাধীনতা দিন

মুজতাহিদ ফারুকী
(গত ২০ জুন আন্তর্জাতিক বাবা দিবস উপলক্ষে এই লেখাটি যৌথভাবে লিখেছিলেন দুই নারী। একজন কানাডার স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্যাটি হাদজু, অরেকজন সেদেশের মানসিক স্বাস্থ্য কমিশনের প্রেসিডেন্ট লুই ব্রাডলি। আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। এ দিনের প্রতিপাদ্য হলো, ‘পুরুষ ও বালকদের সুস্বাস্থ্য’। প্রাসঙ্গিক ভেবে হাদজু ও ব্রাডলির লেখার অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরছি। এটি আমেরিকা মহাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হলেও আমাদের অঞ্চলের চিত্র খুব আলাদা নয় বলে আমার ধারণা। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে যদি আপনি একমত না-ও হন, তবু একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হবার জন্যই পড়তে পারেন।)
পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সোচ্চার হওয়া মূলত একটি নারীবাদী অবস্থান। আত্মহত্যা করে মৃত্যুর সম্ভাবনা নারীর চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে তিনগুণ বেশি। আর এধরণের মৃত্যুর পরিণামে দুঃখ ও ক্ষতি ভোগ করতে হয় বেঁচে থাকা মানুষ – অর্থাৎ তাদের স্ত্রী, কন্যা, মা ও বোনদেরকে – যা তাদেরকে জীবনহানির মারাত্মক ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়। মাদকাসক্তিজনিত মৃত্যুর সম্ভাবনা নারীদের চেয়ে পুরুষদের ক্ষেত্রে ছয় গুণ বেশি। (করোনাজনিত) বিচ্ছিন্নতার মধ্যে তাদের এই আত্মধ্বংস বন্ধ থাকে। এই মুহূর্তে যখন আমরা ঘরে আশ্রয় নিয়ে আছি, তখন ঘরোয়া সহিংসতার হার কমে আসছে।
বহু প্রজন্ম ধরে এক ধরণের অসচেতন পক্ষপাত ছেলেদেরকে পুরুষালী আচরণের দিকে চালিত করেছে যা তাদের আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রগুলো রুদ্ধ করে। এই ধারণাগুলো অবয়ব পেতে শুরু করে যখন আমাদের ছেলেরা একদম ছোট থাকে তখন থেকে। আমাদেরকে বলা হয়, তাদেরকে কঠোর প্রকৃতির করে গড়ে তুলতে। তাদেরকে ননীর পুতুল করে তোলার ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়। আমরা ছোট ছেলেকেও না কাঁদার শিক্ষা দিই, আর এটা দিই এর ফলাফল কি হবে সে বিষয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনা ছাড়াই।
সহপাঠীদের পক্ষ থেকে ছেলেদের ওপর চাপ আসা শুরু হতে পারে একেবারে কিন্ডারগার্টেনে পড়ার মত সময় থেকেই। সে সময় গোলাপি রঙ পছন্দ করা, পুতুল নিয়ে খেলা করা, এমনকি মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্যও তাদের খেলার সাথীরা ছেলেদের লজ্জা দিতে পারে। অনেক ছেলেকেই সুষ্ঠুভাবে, গঠনমূলক উপায়ে নিজেকে প্রকাশ করতে উৎসাহ দেয়া হয় না। আর খুব কম ছেলেরই অনুসরণ করার মত একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব থাকে। ছেলেরা প্রায়ই এই শিক্ষা পায় যে, বড় ধরণের আবেগ প্রকাশের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ হলো ক্রুদ্ধ হয়ে আঘাত করা। আমরা যখন একটি বৈশ্বিক মহামারির মোকাবিলা করছি, যখন ক্রমবর্ধমান হারে মানুষেরা চাপ ও উদ্বেগে ভুগছে, সেই মুহূর্তে পুরুষের জন্য সত্যিকারের জটিলতা দেখা দিচ্ছে, কারণ তাদেরকে কখনই শেখানো হয়নি কীভাবে রুমাল উড়াতে এবং সাহায্য চেয়ে ইঙ্গিত করতে হবে Ñ কারণ এই বিষয়টিকে তারা সাহসিকতা নয় বরং আত্মসমর্পণ হিসাবে দেখতেই অভ্যস্ত হয়েছে।
অভাবিত হলেও সত্য, আমাদের পুরুষ সহকর্মী, বৈবাহিক সঙ্গী ও বন্ধুদের আমরা বলতে শুনি, কীভাবে তারা মুখোমুখি আলোচনা থেকে দূরে থাকার চ্যালেঞ্জ নেন, অথচ খোলামেলা আলোচনা হয়তো আরও সহজে অনানুষ্ঠানিক সহায়তায় রূপ পেতে পারে। কেউ কেউ বলেন, যৌথভাবে অংশ নিলে কঠিন আলোচনাও মোলায়েম হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু মিলেমিশে প্রয়াস চালানোর সুযোগ না থাকায় এসব আলোচনা নিষ্ফল হয়ে যায়।
গায়ের রঙ, যৌন অভ্যাস, শারীরিক সক্ষমতা বা সামাজিক মর্যাদার কারণে বৈষম্যের শিকার হন যেসব পুরুষ তাদের ক্ষেত্রে জটিলতার স্তর আরও গভীর – যেহেতু পৌরুষের পূর্বধারণাসঞ্জাত সংজ্ঞার মধ্যে নিজেদেরকে দেখতে পারা তাদের জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে। পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা এককভাবে পুরুষদেরই কাজ এমন বক্তব্য আসলে সেই ঐতিহাসিক শিকড়কে অস্বীকার করা যা একটি সেকেলে আচরণগত প্রত্যাশার ধারণায় আমাদের সবাইকে আবদ্ধ করে রেখেছে। আমরা যখন বাবা দিবস পালন করছি, যখন আমাদের অনেকেই প্রিয়জন থেকে দূরে এবং সুপরিচিত ঐতিহ্য থেকে অপসৃত সেই সময়ে আমাদের সামনে একটি সুযোগ এবং দায়িত্ব এসে পড়েছে, সেটি হলো আমাদের জীবনে যেসব পুরুষ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ তাদের খোঁজখবর নেয়া।
আমাদের দাদা-নানা থেকে শুরু করে যাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সঙ্কটকাল চলছে আমাদের সেইসব বন্ধু ও প্রতিবেশী এবং আমাদের নিজেদের স্বামী বা সঙ্গী পর্যন্ত যারা নিজেদের মর্মযাতনা ও উৎকণ্ঠা ঢেকে রাখার জন্যই বাইরে সাহসী চেহারা প্রকাশ করছেন তাদের সবার জন্যই নারী হিসাবে আমাদের আর সেইসব অবৈধ সামাজিক নিয়ম বা কাজের সহযোগী হওয়া উচিৎ হবে না যা আমাদের সবাইকে ধ্বংস করবে। আপনার পুরুষটিকে নিজের চাহিদা জানানোর স্বাধীনতা দিন। তাদেরকে দেখিয়ে দিন যে তাদের জন্য সহায়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার উপকরণগুলো কোথায় পাওয়া যাবে। এবারের বাবা দিবসে শুধু আমাদের বাবার জন্য নয় বরং আমাদের সন্তান ও নাতিদের জন্যও এটি হতে পারে একটি বড় উপহার।
(কেউ পুরো লেখাটি পড়তে চাইলে নিচের হেডিং কপি করে গুগল করতে পারেন) Supporting men’s mental health uplifts all of us)
লেখক: কবি ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন