Ads

আমি কৃষকের মেয়ে

ইয়াসমিন রাব্বানী

মেয়েটি অবলীলায় বললো আঙ্কেল আমার বাবা একজন কৃষক।
মেয়েটির সঙ্গে থাকা মামা লজ্জায় মুখ নীচু করে পাশে বসা বন্ধুকে বোঝাতে চাইছেন কৃষক মানে অনেক জমি জমা আছে। প্রচুর কামলা খাটিয়ে জমি চাষ করান।
ও ছোট মানুষ আর এদেশে মানুষ হয়নি। মায়ের সাথে বিদেশে থাকে। এই সময়টায় মা মেয়ে দু’জনই দেশে আসে।
সিরিয়াল নম্বর এসে গেলো। তাই লজ্জার হাত থেকে আপাতত নিষ্কৃতি পেলেন মামা।
ডাক্তার দেখানো শেষ। গাড়িতে উঠেও ভাগ্নিকে শাসাতে পারলেন না।
বাড়ি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো।
ঘরে পা রেখে মুখ ভার করে বসে রইলেন মামা।
রাতের খাবার শেষ করে বোনকে ডাকলেন।
-ভাইজান ডেকেছেন?
– হ্যা, শোন রাবু এটা বিদেশ নয়। বিদেশে কৃষি কাজকে যতটা সম্মান দেয়া হয় এখানে তা হয় না। এটা নিতান্ত ছোট কাজ।
আমি সমাজে মাথা উঁচু করে চলি। তোমাদের সে কথাটা মাথায় রাখা উচিৎ।
– কেন ভাইজান? কেউ কিছু বলেছে?
— হ্যা,তোমার গুনোধার মেয়ে ডাঃ সামদানীর চেম্বারে বাইরে আমার বিশিষ্ট বন্ধু রহমান সাহেবের পাশে বসে গল্প করছিলাম।
এক পর্যায়ে রোমেলার কাছে রহমান সাহেব ওর বাবা কি করেন জানতে চাইলেন।
তোমার মেয়ে গর্বে বুক উচু করে বললো- আমার বাবা একজন কৃষক।

আমার মান সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিলো!!
– ভাইজান, এতে এত রাগ করার কী আছে! কথাতো সত্যি। কৃষক মানে জমিতে শুধু হাল বাওয়া না। এটা একটা পেশা।
আপনি জানেন রোমেলার বাবা একজন সৎ মানুষ। ফসলের টাকায় কত দরিদ্র পরিবার খেয়ে পরে বেঁচে আছে।
বছরে দু -তিন মাস আমাদের সাথে কাটায়। বাকি সময়টা এই হত দরিদ্র মানুষগুলোর আস্থার স্থল হয়ে বেঁচে আছে।
,- আমাকে আর জ্ঞান দিস না।
– ভাইজান আপনি গুরুজন।
তবে আমি আমার সন্তানদের মিথ্যা বলা শিক্ষা দেইনি।
বিদেশে কত হাজার হাজার মানুষ নিম্নমানের কাজ করে।তাদের সন্তানরা কেউ হীনমন্যতা ভোগে না।
এখানে আমার বান্ধবী রুনির হাজবেন্ড কী করে?
– গাড়ির ব্যবসা করে।
– রুনী সত্যি বলতে ভয় পায়।
আমি জানি ওর হাজবেন্ড উবার চালায়।
এটা সম্মানের চাকরি। ঘুষ খেয়ে ঢাকায় ছয় তলা বাড়ি – গাড়ি করেনি।
এখনো আমরা বুঝি না! কোনটা সম্মানের আর কোনটা অসম্মানের।
কাজ কোনটা অসম্মানের নয়।
আর একটা কথা, উচ্চশিক্ষিত মানুষ যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তবে সে মেরুদণ্ডকে সবল রাখে কৃষক।
একবার ভেবে বলুনতো ডাক্তার সাদমানীর তিন পুরুষ আগের অবস্থান!
আমরা এ দেশের ইতিহাস জানি। ১৯৭০ স্বাধীনতাত্তোর মাত্র কয়েকটি পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশেষ মর্যাদা পেতেন।
পরবর্তীতে শিক্ষাগত যোগ্যতায় নয় অর্থনৈতিক যোগ্যতার মাপ কাঠিতে কিছু মানুষ নিজেদের বিশেষ স্থানে বসিয়েছেন।
কর্মক্ষেত্রে কোন পদই ছোট নয়।
আপনি হয়তো উচ্চপদে আছেন।
কিন্তু আপনার একটি ভাই!
বেঁচে থাকার তাগিদে ছোট খাটো কর্ম সংস্থান করতে পেরেছে।
আমরা এখনো সেই স্থানে পৌঁছাতে পারিনি। যেখানে পরিবারের সবাই এক বাক্যে বলতে পারি আমরা শিক্ষিত ও অর্থনৈতিক ভাবে সফল পরিবার।
হ্যা,আমার স্বামী একজন কৃষক, কালোবাজারি – বা দূর্নীতিবাজ নয়।

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন