Ads

কাতলাপুরাণ

অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমার এক বান্ধবীর ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম তার স্বামী নাকি হটাৎ করে কৃষ্ণভক্ত হয়ে উঠেছেন। দিন রাত জপ তপ করেন,নিরামিষ খান। মাথায় টিকিও রেখেছেন। পুরো বৈষ্ণব হয়ে গেছেন ২ বছর হল। তারপর থেকেই আর স্ত্রীর সঙ্গে ঘুমোন না,স্ত্রীর কাছে ঘেঁষেন না একদম। স্ত্রী বেচারি একটু সোহাগ করতে গেলেই স্বামী হাঁ হাঁ করে ওঠেন। বলেন কৃষ্ণ ভক্তের নাকি নারীর কাছে ঘেঁষতে নেই।

অনেকদিন ধরে এইরকম চলতে চলতে অবস্থা এমন চরমে পৌঁছে গেছে যে বউ চলে গেছে বাপের বাড়ি এবং ডিভোর্স করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে দুজনেই।এ কথা শুনে আমি একবার ওর স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম। বান্ধবীর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করলাম তাকে। এ কথা ও কথার পরে বললাম “আপনি কৃষ্ণের জন্য বউকে ছাড়ছেন ?”

তিনি বললেন,” বৈষ্ণবের নারীসঙ্গ করা উচিত নয় “।

আমি বললাম, “বলেন কী ! আমি তো বহু বৈষ্ণবকে দেখেছি তাদের বউ আছে ! রীতিমতন বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার করছে তারা !” একথা শুনে তিনি বললেন,”সেটা যারা করে তারা প্রকৃত ভক্ত নয়। যে প্রকৃত ভক্ত সে কখনই হরি ছাড়া আর অন্য কোনোদিকে মন দেবে না। আমি হলাম খাঁটি ভক্ত। তাই কানু বিনা আমি আর কোনোদিকেই চাইবো না ” ।

আমি বললাম, শ্রীকৃষ্ণ চারটি বিয়ে করেছেন এবং প্রতিটি স্ত্রীকে সন্তান দিয়েছেন আবার রাধিকার সঙ্গেও প্রেম করেছেন,সেই সঙ্গে গোপিনীদের সঙ্গেও করেছেন রাসলীলা । আর আপনি কৃষ্ণের জন্য আপনার একটা মাত্র বউকে ছেড়ে দিচ্ছেন ? কথাটা যে এত কাজে দেবে ভাবিনি। ভদ্রলোক নীরবে ফোন রেখে দিলেন। পরের দিন নাকি বউকে ফোন করে বলেছেন , ” যা হবার হয়েছে, তুমি ফিরে এসো ” । বউ বলল, ” ফিরব মানে ? তোমার কৃষ্ণের কী হবে ” ?

বর বলল , তার আবার কী হবে ? এতগুলো বউ আর প্রেমিকা সামলে আমার দিকে নজর দেবার তার সময় কোথায় ? কাল সকালেই এসো। আর আসার সময় নুরুর দোকান থেকে একটা ২ কেজির পাকা কাতলা এনো । কতদিন তোমার হাতে কাতলা মাছের পাতলা ঝোল খাইনি !

বিঃ দ্রঃ কাতলাপুরাণ একটি রম্য রচনা । এক কৃষ্ণ ভক্তের পরিবারের গল্প ।

লেখকঃ ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ও শিক্ষক

আরও পড়ুন