Ads

নারী ও পুরুষ হোক পরস্পরের সহযোগী

।। ড. সাজেদাহোমায়রা।।

 

হিজরতের নির্দেশ আসার পর উম্মু সালামা রা. এর স্বামী আবু সালামা রা. সিদ্ধান্ত নিলেন, পরিবার সহ মদীনায় চলে যাবেন কিন্তু তখন তাঁর কাছে ছিলো মাত্র একটি উট। সেই একটি উটে করে আবু সালামা, তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে- এই তিনজনের জার্নিটা ছিলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আবু সালামাকে স্ত্রী ও সন্তান সহ মদীনায় যেতে উম্মু সালামার ফ্যামিলি থেকে বাধা দেয়া হলো। তারা বললো, ‘আমরা আমাদের মেয়েকে এমন খারাপ অবস্থায় যেতে দেব না।’

 

ফলে আবু সালামা একাই মদীনায় রওয়ানা করলেন এবং উম্মু সালামা রা. তাঁর ছেলে সহ মক্কায় রয়ে গেলেন। উম্মু সালামা রা. বলেন, ‘মক্কায় আমি একাকী আবতাহ উপত্যকায় একটি টিলার উপর বসে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁদতাম। এভাবে প্রায় সাত/আটদিন চলে যায়। একদিন এক শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি আমার এ দুরবস্থা দেখে ভীষণ কষ্ট পেলেন। তিনি আমার পিতৃগোত্রের কাছে আমাকে আমার স্বামীর কাছে পাঠাতে অনুরোধ করেন। তিনি তাদেরকে আমার অসহায়েত্বের কথা এমন আবেগভরা শব্দে প্রকাশ করেন যে তাতে আমার পিতৃগোত্রের লোকদের মনে দয়ার সঞ্চায় হয়। তারা আমাকে আমার স্বামীর কাছ যাওয়ার অনুমতি দেন। আমি উটের উপর হাওদায় বসলাম এবং সালামাকে কোলে করে সওয়ার হয়ে গেলাম।

 

মক্কা থেকে একাকি বের হয়ে তান‘ঈম পৌঁছালাম। সেখানে কাবার চাবি রক্ষক উসমান ইবন তালহার সাথে দেখা হলো। তিনি আমার ইচ্ছার কথা জেনে, আমার সাথে আর কেউ আছে কিনা তা জানতে চাইলেন। বললাম, ‘না, আর কেউ নেই। শুধু আমি ও আমার এই শিশু সন্তান।’ একথা শুনে তিনি আমার উটের লাগাম মুট করে ধরে টানতে টানতে উটের আগে আগে চলতে লাগলেন। যখন আমরা কোন মানযিলে পৌঁছতাম এবং আমাদের বিশ্রামের প্রয়োজন পড়তো, তিনি উট বসিয়ে দিয়ে দূরে কোন গাছের আড়ালে চলে যেতেন। আবার চলার সময় হলে তিনি উট প্রস্তুত করে আমার কাছে এসে বলতেন ‘উটে বসুন।’ আমি উটের পিঠে আরাম করে বসার পর তিনি লাগাম ধরে আগে আগে চলতে থাকতেন। পুরো ভ্রমণটাই এই নিয়মে হয়েছিল। যখন আমরা মদিনার কুবায় পৌঁছলাম ইবনে তালহা আমাকে বললেন, ‘আপনার স্বামী আবু সালামা এখানেই আছেন।’ আল্লাহর উপর ভরসা করে আমি মহল্লার মধ্যে ঢুকে গেলাম এবং আবু সালামার দেখা পেয়ে গেলাম। এভাবে উসমান ইবনে তালহা রা. আমাকে আবু সালামার সন্ধান দিয়ে আবার মক্কার দিকে যাত্রা করেন।
ইবনে তালহা রা. এর চমৎকার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে উম্মু সালামা রা. বলেন: “আল্লাহর কসম! আমি উসমান ইবনে তালহার চেয়ে বেশি ভদ্র সঙ্গী আর কখনও দেখিনি।” উসমান ইবনে তালহা রা. এর এই সহানুভূতি ও সহমর্মিতার কথা হযরত উম্মু সালামা রা. সারাজীবন মনে রেখেছিলেন।(আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৩/১৬৯)
উম্মু সালামা রা. এর এই ঘটনাটি আমাকে প্রচণ্ড বিমোহিত করেছে। একজন অচেনা দ্বীনি ভাই আরেকজন বোনের জন্য কী চমৎকার করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন! একা একজন নারীকে কাছে পেয়েও সেখানে ছিলো না এতটুকু কামনার ছোঁয়া, ছিলো না এতটুকু অনিরাপত্তার ছোঁয়া।
কখনো কখনো বিপদে-আপদে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে বা নির্জন পথে-ঘাটে একজন নারীর নন মাহরামের সঙ্গ বা তার কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা নেয়া অনিবার্য হয়ে পড়তে পারে।
.
দুঃখজনক হলেও সত্যি! আমাদের সমাজের বেশিরভাগ ঘটনাই আমাদের মনে বদ্ধমূল করে দিয়েছে যে, পুরুষ মানেই কামুক। পুরুষ মানেই ধর্ষক। পুরুষ মানেই দুষ্চরিত্র। পুরুষ মানেই অশ্লীলভাষী। পুরুষ মানেই অনিরাপত্তা।কিন্তু এই বদ্ধমূল ধারণার বাইরেও তাকিয়ে দেখুন! চারপাশ জুড়ে রয়েছে অন্যরকম কিছু গল্পও!

 

কতো ছেলেদের দেখেছি, নতুন কোনো শহরে পথ চিনতে না পারা অচেনা কোনো মেয়ের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অথবা পাবলিক বাসে একজন মেয়েকে সম্মান করে সিট ছেড়ে দিয়েছে। ফেইসবুকে কতো ছেলেদের দেখেছি, ডেলিভারির পেশেন্টের জন্য রক্তের সন্ধানে উৎকণ্ঠা! ব্যস্ততা!

 

সব ছেলেরাই কোনো এক মমতাময়ী মায়ের আদরের সন্তান অথবা কোনো এক মায়াবতীর ভালোবাসার পুরুষ।চারপাশ থেকেই মানুষ শেখে। শৈশব, বয়ঃসন্ধি আর বেড়ে ওঠার সময়টা তার বাকি জীবনকে প্রভাবিত করে। প্রত্যেকটা ছেলের সেই সময়গুলো হোক ইতিবাচকতায় ভরা। ছেলেরা মেয়েদের পাশে থাকুক সহযোগী হয়ে, সহমর্মি হয়ে। থাকুক নিরাপত্তার ছায়া হয়ে….

 

লেখক: ইসলামী বিষয়ে কলাম লেখক  

 

 

নারী পুরুষ হোক সহযোগী- নারী পুরুষ হোক সহযোগী – নারী পুরুষ হোক সহযোগী
আরও পড়ুন