Ads

নেপথ্যের উল্টো পথ

আব্দুল্লাহ আরমান

“নারীদের পারিবারিক নির্যাতন ও অশান্তির জন্য নারীসমাজ নিজেরাও বহুলাংশে দায়ী”, কথাটা অনেকের নিকট একপেশে মনে হলেও তা অসত্য নয়। নির্যাতন ও কলহের ঘটনাগুলি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করলে এর বাস্তবতা সহজেই উপলব্ধি করা সম্ভব। পুরুষ বা স্বামী কতৃক অহরহ নির্যাতনের বিষয়টি তো নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার, যা মিডিয়ার সুবাদে এখন সবারই জানা। কিন্তু সে তুলনায় নারী নির্যাতনের পিছনে নারী সমাজের নেতিবাচক ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা শূন্যের কোঠায়।

নারীবাদ নারীকে তার অধিকার আদায়ে বহুমুখী ছবক দিলেও নৈতিকতাবোধ, সহনশীলতা, সৌহার্দপূর্ণ আচরণ ও পারস্পরিক সহাবস্থানের শিক্ষা দিতে তো পারেইনি বরং কিছুক্ষেত্রে উস্কে দিয়েছে। অপরদিকে পারিবারিক সম্প্রীতি রক্ষায় আলেম সমাজের ভূমিকা ও তৎপরতাও প্রয়োজনের তূলনায় অতি নগণ্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী অধিকার বাস্তবায়নে সমাজের সচেতন মহল সভা-সেমিনার ও বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোচনার ফুলঝুরি ঝরালেও এক্ষেত্রে নারীদের নেতিবাচক ভূমিকা বিষয়ে তারা কথা বলতে চান না কারণ অনেকের নিকট “নারীদের যৌক্তিক সমালোচনাও এখন নারী বিদ্বেষ হিসেবে গণ্য হয়!!”

একজন মেয়ে শশুরবাড়ি গেলে তার জা,শ্বাশুড়ি, ননদ ও অন্যান্য নারীদের অবচেতন মন পারিবারিক নেতৃত্বে তাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করে। নিজ বাবার বাড়িতে আদরে মানুষ হওয়া মেয়েটা সাংসারিক কাজে অদক্ষ হওয়ায় বারংবার হেনস্তার শিকার হয় নারীদের হাতেই। দুই ঈদ, বৈশাখী মেলা ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে মেয়ের বাবা তথাকথিত উপহার প্রদানের সামাজিক প্রথা(?) রক্ষা করতে সক্ষম না হলে অসহায় মেয়েটিকে বাবার অক্ষমতার জন্য যত কথা শুনতে হয় তার অধিকাংশই আসে বিভিন্ন নারীর পক্ষ থেকে।

এদেশের শ্বাশুড়ি তার মেয়ে জামাইকে আপ্যায়ন করতে হরেক রকম রেসিপির আয়োজন করলেও পুত্রবধূর প্লেটে মুরগীর রানটা তুলে দেয়ার মতো উদারতা তাদের আজও হয়নি। শ্বাশুড়ি চায় তার নিজের মেয়েটা স্বামীর বাড়িতে সুখের পায়রা হয়ে থাকুক কিন্তু পুত্রবধূকে যথাযথ মূল্যায়ন দূূরে থাক সামান্য ভুল বা অলসতা তার কাছে যেন অমার্জনীয় অপরাধ!

নানা অযুহাতে স্ত্রীর প্রতি ছেলেকে উস্কে দিয়ে দাম্পত্য কলহ তৈরীতেও শ্বাশুড়ি ও ননদদের জুড়ি নেই। পুত্রবধূকে মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন এমনকি হত্যায় শাশুড়ী-ননদদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা পত্রিকার পাতায় প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে। শুধু তাই নয়,কন্যার শ্বশুর বাড়ির পারিবারিক বিষয়ে অনর্থক নাক গলিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতেও তারা সিদ্ধহস্ত।

অপরদিকে বৃদ্ধাশ্রম তৈরী ও শেষ বয়সে অশ্রুসজল নয়নে বৃদ্ধ পিতা-মাতার একাকীত্বের জীবনের জন্য পুত্রবধূর নেতিবাচক ভূমিকা অন্যতম প্রধান কারণ। পরিবারের বৃদ্ধ মানুষগুলো তাদের কাছে লাঞ্ছিত, অবহেলিত ও কোনঠাসা। মেইনস্ট্রিম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বদৌলতে এরকম হাজারো ঘটনার সাক্ষী আমরা সবাই ।

নিজের গড়া সংসারে বৃদ্ধ মা-বাবা আশ্রিত ও বিপর্যস্ত। নিজে একজন নারী ও সন্তানের মা হয়েও স্বামীর মাকে মূল্যায়নে তারা যথেষ্ট উদাসীন। বনিবনা না হওয়ায় বৃদ্ধ বয়সে অনেক মাকে পৃথক সংসার এমনকি গোয়াল ঘরে বসবাসের খবরও আমাদের কানে আসে । দুঃখজনক হলেও সত্য শিক্ষিত নারীদের মাঝে সংসারের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা বেশী।

এগুলো আমাদের সমাজের খন্ডিত চিত্র ও ঘটনাগুলোর গুলোর সার্বিক মূল্যায়ন মাত্র, সংখ্যা উল্লেখযোগ্য না হলেও নিঃসন্দেহে এর ব্যতীক্রম আছে। ব্যতিক্রমী ও মহিয়সী মা ও স্ত্রীরা আছে বলেই আমাদের সমাজব্যবস্থা এখনও টিকে আছে।
নারী অধিকার রক্ষা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন, আলোচনা-সমালোচনা ও প্রচারণা বৃদ্ধি পেলেও আশংকাজনক হারে নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সরকার, প্রশাসন, আইন,আলেম সমাজ ও সচেতন মহলের প্রচেষ্টা তখনই পূর্ণ সফল হবে যখন নারীরা ‘নারী জাতি’কে মূল্যায়ন করতে শিখবে।

লেখকের আগের আর্টিকেল সত্যিকারের পুরুষ চাই

লেখকঃ ইসলামী বিষয়ে কলাম লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

আরও পড়ুন