Ads

প্রত্যেকটি পরিবারে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ সচেতনতা 

মাহফুজা শিরিন

যে মা তার ছেলে মেয়েদের স্কুলে ঢুকিয়ে গেটের বাইরে রোদে পুড়ে অপেক্ষা করে, হয়তো তারও একদিন স্বপ্ন ছিল শিক্ষিকা হয়ে বাচ্চাদের পড়াবার।
যে মেয়েটা রোজ নিজেকে একটুও সময় না দিয়ে, তড়িঘড়ি করে জটবাঁধা চুল নিয়ে খুব ভোরে চুলায় রান্না চাপায়। সেও একদিন ঝরঝরা চুল নিয়ে সাজতে ভালোবাসতো, সাজাতে ভালোবাসতো স্বপ্ন দেখতো, বিউটিশিয়ান হওয়ার।
যে স্ত্রী তার রাগী স্বামীর জন্য সময় মতো টেবিলে ভাত বেড়ে অপেক্ষা করে, কখন কাজ শেষে ঘরে আসবে।হয়তো তারও একদিন স্বপ্ন ছিল কাজ করে ঘরে ফেরার।
তরকারি আর মাছ কেটে ধুয়ে নকের কোনায় ঘাঁ বানিয়ে ফেলা মেয়েটিও ঐ হাতে কলম নিয়ে লিখতে পারতো অনেক কিছু।
যে বড় বোন তার পুলিশ অফিসার ভাইয়ের ইউনিফর্ম প্রতিদিন আয়রন করে গুছিয়ে দেয়, তারও একসময় ইচ্ছা ছিল অফিসার হয়ে ইউনিফর্ম পরার।
যে গেয়ো বউটার কর্কশ ভাষা আর ঝগড়ার জন্য পুরো এলাকা বিরক্ত, সেও একদিন তার সূরেলা কন্ঠের গান দিয়ে মাতিয়ে রাখতে পারতো সবাইকে।
শহরে বড় হওয়া আধুনিকা মেয়েটিকে খুব বেশি প্রতিপত্তি আর পরিচিতি দেখে বাবা মা দেরি না করে বিয়ে দিয়ে দেন, যে কিনা ছিল তার ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী। নাচ, গান,কবিতা আবৃতিতে ছিল সবার মধ্যমনি। তারও একদিন স্বপ্ন ছিল নিজের একটা পরিচিতি তৈরি করার।
কয়েকদিন আগে মেয়ের রান্না নিয়ে সখের বশে একটা পোষ্ট করেছিলাম।সেখানে এক ভদ্রলোকের কমেন্ট পড়ার পর আমার মাথায় কিছু চিন্তা আসে আর সেখান থেকেই আজকের এই লেখা। আমার ওই ভদ্রলোকের কথায় খারাপ লাগলেও বিনয়ের সাথে ভদ্রতা বজায় রেখে উত্তর দিয়েছিলাম।এ জন্য আমার কাছের অনেকেই রাগ করেছে, কেন আমি সিরিয়াস হইনি।সত্যি কথা বলতে গেলে, আমি সিরিয়াস হতে গিয়ে ভিতর থেকে সায় পাইনি।কারণ তার কথায় ফুটে উঠেছিল আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি খারাপ আচরণের করুন কিছু চিত্র।ওই ভদ্রলোকের দিক থেকে ছিল সচেতনতা মুলুক বানী।
সত্যিই তো! আমরা প্রায় পরিবারই মেয়েদের এমনভাবে বড় করি যে মেয়েদের জন্ম রান্না করার জন্য আর মেয়েরা যেন রান্না ছাড়া আর কিছুই পারবে না যা একেবারেই উচিৎ নয়।আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের মেয়েরা কিসে ভাল,কোথায় তার প্রতিভা। যে মেয়েরা নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে তারাও ঘর সামলায়,রান্না করে। তা হলে আর ঝামেলা কোথায়? পরিবারের সচেতনতাই বদলে দিতে পারে একটা মেয়ের জীবন।

আরও পড়ুন