আবদুল্লাহ
বাবাকে বলেছিলাম ১০ হাজার টাকা দাও কক্সবাজার বেড়াতে যাব!
মুচকি হেসেই বললেন কবে যাবি?
বললাম ৫ দিন পর!
বাবা বললেন কাল থেকে একটা কাজ থাকায় ৩ দিন বাইরে থাকবো, তুই এই ৩টা দিন দোকানে একটু সময় দিস, ফিরে এসেই তোকে টাকাটা দিচ্ছি!”
আমি তো মহা খুশি!
আমি ৩দিন দোকান দেখাশুনা করি। এই তিন দিনে আয় হয় ৮২০ টাকা। আর এই ৩দিনে যে পরিমাণ কষ্ট হয়েছে মনে হয় না জন্মের পর থেকে আমি আমার জীবনে এত কষ্ট করেছি…
রাতে নিজের রুমে বসে যখন ফোন টিপছি তখন বাবা এসে বললো,
–এই নে তোর ১০ হাজার টাকা।
আমি বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— কিসের ১০ হাজার টাকা?
বাবা অবাক হয়ে বললো,
– তুই না কক্সবাজার যাবি বন্ধুদের সাথে?
আমি বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—বাবা আমি আগে বুঝতাম না টাকা ইনকাম করতে কতটা কষ্ট হয় তোমার তাই তোমার কাছে এতকিছু আবদার করতাম। আমি এই ৩ দিনে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি টাকা ইনকাম করার কষ্টটা। যে আমি ৩ দিনে ৫ হাজার টাকায় ইনকাম করতে পারলাম না সেই আমি কি না ২ দিনের জন্য ১০ হাজার টাকা আবদার করি!! এত টাকা খরচ করা আমাদের মত নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অপচয় ছাড়া কিছু নয় বাবা..
আমার কথা শুনে বাবা কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– তকে এত পন্ডিতগিরি করতে হবে না। বন্ধুরা সবাই যাচ্ছে তুইও যা। সমুদ্রের বিশালতা দেখলে তোর খুব ভালো লাগবে।
আমি বাবার হাত ধরে বললাম,
— বিশালতা দেখতে সমুদ্রে যেতে হয় না বাবা। তোমার চোখের দিকে তাকালেই বিশালতা দেখা যায়। যে বাবারা হাজার কষ্টের পরেও সন্তানের মুখে হাসি ফোটায়…এরচেয়ে বিশালতা আর কি হতে পারে!
খাবার টেবিলে বসে যখন খাচ্ছি তখন বাবাকে বললাম,
— বাবা, দোকানে ২জন কর্মচারী রাখার কোন দরকার নেই। আজ থেকে আমি দোকানে বসবো।
বাবা আমার কথার কোন উত্তর দিলো না। শুধু মাকে বললো,
– তারকারিতে এত ঝাল দিয়েছো কেন? ঝালে চোখেমুখে পানি চলে এসেছে…
আমি জানি তারকারিতে ঝাল হয় নি। বাবা চোখের পানি লুকানোর জন্য মিথ্যা কথা বলছে!