Ads

ভালো থাকি, ভালো রাখি

ইশরাত জাহান রোজী

আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলার শুরুতেই জিজ্ঞেস করি “কেমন আছেন / আছো/ আছিস?” উত্তরে যতই আমরা ‘ ভালো আছি ‘ বলি না কেন সেই উত্তর কি সত্যিই ভালো থেকে বলি? সত্যিই কি ভালো থাকি আমরা ? আমরা ভালো থাকার চাইতে ভালো থাকার অভিনয়টাই বরং বেশি করি।কাছের মানুষগুলোর সাথে কথা বললেই প্রায় শুনতে হয়, “কিছুই ভালো লাগে না, জীবন একঘেয়েমি লাগে। কিচ্ছু ভালো লাগে না।”এমন করে বলতে না পারা মানুষের সংখ্যাও অসংখ্য।

পুরুষ মানুষ সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি(বেশিরভাগ) হওয়ায়, ভালো থাকা না- থাকার হিসাবটুকুও হয়তো করতে পারে না তারা। কথাটুকু মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য হয়তো বেশি প্রযোজ্য। তাদের নিজেদের ভালো থাকাটুকু বাস্তবতার চাকায় পিষ্ট হয় রোজ। তাদের মুখ ফুটে বলাও হয়ে উঠে না “ভালো লাগে না।”
‘ভালো আছি, ভালো থাকি ‘ বলাটায় যেন স্বভাবে পরিণত হয়ে যায় । কিন্তু, তবুও নিজেদেরকে ভালো রাখতে হবে নিজেদেরই স্বার্থে, পরিবারের স্বার্থে, প্রিয়জনের স্বার্থে!পুরুষ মানুষ বাইরের জগতে ব্যস্ত থাকায় তাদের সময় কেটে যায়। কিন্তু বাসায় থাকা সংসারী মেয়েদের জীবন সংসারের কাজ,বাচ্চাদেরকে সুন্দরভাবে মানুষ করা আর তার চিন্তাতেই কেটে যায়। তিন বেলা কী রান্না হবে- এটাও অবসর মুহূর্তকে ব্যস্ত রাখে।
মেয়েরা অন্যের জন্যই সম্ভবত নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, কিন্তু কতটুকু ভালো রাখে ?নাহ্, আমি মেয়ে বলেই মেয়েদের কথা বলছি তা নয়। আমার চোখে পুরুষ-নারী শুধুই মানুষ, যখন তাদের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করি।চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমরা একটা ঘন্টা সময় বের করে একদম নিজের জন্য ব্যয় করি কি?
কখনো কি সব কাজ ফেলে একটু ভালো থাকার আশায় আলমারি থেকে ভাঁজ ভেঙে একটা শাড়ি পরে আয়নার সামনে শুধুই নিজের জন্য নিজেকে সাজাই? বাসায় পুরুষ মানুষ নেই বলেই কি কখনো নিজের খুব পছন্দের রান্নাটা নিজের জন্য করি? স্টুডেন্ট লাইফের হারিয়ে যাওয়া শখ আবার নতুন করে কি জাগিয়ে তুলি নিজে একটু আনন্দ পাওয়ার জন্য ? স্কুল/কলেজে আবৃত্তি/গানে/নাঁচে হাত তালিতে মুখরিত হওয়া মেয়েটি সংসার ভুলে কখনো কি ঘুঙুর পায়ে নেঁচে উঠি শুধু নিজের জন্য? বৃষ্টির সাথে সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে কখনো কি গেয়ে উঠি নিজের জন্য গান? গুনগুন করে জানালার পাশে কবিতার বই নিয়ে আবৃত্তি করি কখনো শুধু নিজেকে একটু আনন্দ দেওয়ার জন্য কিংবা নিজের ভিতরের আবেগী সুপ্ত সত্তাকে একটু জাগিয়ে তুলতে?
বেশিরভাগ জবাব-ই ‘না’ আসবে। করি না এমন, পারি না এমন। ঘর-সংসার, পরিবার, সন্তান সবই আমাদের সেই সত্তাকে গ্রাস করে ফেলে! আসলে আমরা নিজের জন্য কম বাঁচি। নিজেকে ভালো রাখতে হবে, নিজের জন্য ভালো থাকতে হবে – এই কথাটাই বুঝি না। ‘ভালো আছি’ বলাটায় যেন স্বভাবে পরিণত হয়ে যায় ।আমরা আসলে নিজের জন্যই করি না অনেক কিছু।

 

আমি তখন কলেজে পড়ি। পড়ার চাইতে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতেই আমার আগ্রহ তখন বেশি। গানের প্রতি ভীষণ ভালোবাসা। শখ ছিলো গান শেখার। কিন্তু আমাদের পরিবারে রেডিওতে গান শোনাও যেখানে এলাউ ছিলো না, সেখানে গান শেখা ব্যাপারটা কেমন হতে পারে সহজেই অনুমান করা যায়।কিন্তু গান শেখা না হলেও কোরাস-এ গান গাইতাম কলেজের অনুষ্ঠানে। একবার কলেজে খুব শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর প্রিয় তালিকায় থাকা হাসি ম্যাডাম বললেন,
–“গান শিখো না কেন?”
–ফ্যামিলি থেকে এলাউ করবে না ম্যাডাম।
–নিজের জন্য শিখবা। তুমি বাইরে স্টেজে না গাইলেই হলো। নিজের জন্য গাইবা… ।ম্যাডামের কথাটা আজও কানে বাজে। নিজের জন্য গান শেখাটা হয়ে উঠেনি আমার।তবে, এই যে একটু আধটু লেখি সেটা একদম নিজের জন্য। নিজেকে ভালো রাখার জন্য।
“কেউ কাউকে ভালো রাখে না”- এটা বিশ্বাস করে নিজেকে নিজেই ভালো রাখতে হবে, ভালো থাকতে হবে।নিজের ভালো থাকাটা অন্যের উপর নির্ভরশীল না হওয়ায় ভালো।
কারণ, আমি এটুকুই বুঝি বা উপলব্ধি করি যে, আমাকে নিজেকে ভালো রাখতে হবে, কেননা আমি ভালো থাকলেই আমি আমার পরিবার, স্বামী, সন্তান এবং আমার কাছের প্রিয় মানুষগুলোকেও ভালো রাখতে পারব।সুতরাং, আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো থাকি, ভালো রাখি বা ভালো রাখার চেষ্টা করি।

 

(এই লেখাটুকু শুধুমাত্র আমার একান্ত উপলব্ধি, এখানে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার ।)

 

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলাম লেখক
লেখকের আবৃত্তি করা কবিতা
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন