Ads

মিডলম্যান । সংসারে পুরুষের ভূমিকা

আব্দুল্লাহ আরমান

সংসার একটি হৃদপিণ্ডের ন্যায়। প্রতিটি সদস্যের শিরা উপশিরায় যখন ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের শোণিত প্রবাহ নির্বিঘ্নে চলাচল করে তখন সচল হৃদক্রিয়া একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়। এরপর বিয়ের পর স্ত্রী ও মায়ের মাঝে  মিডলম্যান হিসাবে পুরুষ সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারলে আরও মোহনীয় হয়ে উঠে সব কিছু ।

মস্তিষ্কের ডোপামিন ভালোবাসার অনুভূতির মূল নিয়ামক। ডোপামিনের সিক্ত পরশে পারিবারিক সম্পর্ক টিকে থাকে দিনের পর দিন। ডোপামিনের এই মধুর খেলার শাব্দিক রূপই হলো ‘ভালোবাসা’, যা সাংসারিক সুখ-সিন্দুকের অব্যর্থ চাবিকাঠি। ডোপামিনের সেই কোমল পাত্রে যদি অহেতুক রাগ, পারস্পরিক অবমূল্যায়ন, হিংসা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদির ফোঁটা ফোঁটা বিষ মিশে যায় তখন ‘সংসার’ নামটুকু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তিক্ততার ঘুণপোকা একটু একটু করে হৃদয় ঘরের চৌকাঠ অন্তঃসারশূন্য করে দেয়।

যেসব কারণে সংসার ধীরে ধীরে কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয় তন্মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো পুত্রবধূ ও শ্বাশুড়ির মুখোমুখি অবস্থান। কোনো এক অজানা কারণে এই দুটি মানুষ চিরকাল একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। অবমূল্যায়ন, বিরূপ আচরণ, ভুল বোঝাবুঝি ও একে অপরকে বুঝতে না পারা/চাওয়ার প্রবণতা থেকে তারা আমৃত্যু বের হতে পারে না। মা-স্ত্রী এবং উভয় পরিবারের একের পর এক অভিযোগ যে মানুষটাকে সবচেয়ে বিব্রত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে সেই হলো ‘মিডলম্যান’।

সংসারে জন্মদাত্রী ও জীবনসঙ্গিনীর প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতে হয় এই মিডলম্যানকে। উভয়ের মধ্যকার অন্তঃকোন্দলে নিরপেক্ষ বিবেচনায় নির্দোষের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করলেও অপরপক্ষের ভালোবাসা ও আস্থা হারানোর ঝুঁকি থাকে, এটা এমনই স্পর্শকাতর বিষয়! ন্যায়-অন্যায় যাই হোক তাদের উভয়ই চায় তার স্বামী বা সন্তান সর্বদা সমর্থন দিয়ে তার পাশে থাকুক। তাই উভয়ের মন রক্ষা করে চলা মিডলম্যানের জন্য এক অসম্ভব অগ্নি পরীক্ষাই বটে!

শ্বাশুড়ি ও পুত্রবধূর পারস্পরিক সামাজিক ও আইনি অধিকার এবং সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গঠনে আলেমসমাজ, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও আইনবিদগণ গঠনমূলক নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি স্ত্রী/শ্বাশুড়ি কতৃক নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, সচেতন মহল ও বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া বেশ সরব ভূমিকা পালন করলেও মিডলম্যানদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। অথচ সহনশীলতা ও বিচক্ষণতার সাথে মধ্যস্থতা করা সম্ভব হলে তাদের সম্পর্কের দূরত্ব ও তিক্ততা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

মধ্যস্থতা করার সবচেয়ে সেরা উপায় হলো ভালো ও মনোযোগী শ্রোতা হওয়া! মিডলম্যান উভয়ের অভিযোগ এমনভাবে শোনা যাতে তারা মনে করে তার কথার যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কিছু অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া, কিছু নালিশ জাস্ট মনে রাখা, কিছুর সত্যতা যাচাই করা, কিছু অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রত্যেককে আলাদাভাবে সুন্দর করে বুঝানোর চেষ্টা করা, আবার কখনো দ্বন্দ্ব জিইয়ে না রেখে তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করা…..এক কথায় বিচক্ষণতার সাথে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে উপযুক্ত সিন্ধান্তে উপনীত হওয়াই যোগ্য মিডলম্যানের কাজ। মীমাংসার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই একজনের পক্ষ নিয়ে আরেকজনের সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। উভয় পক্ষের আস্থা ও সম্মান অটুট রেখে সাধ্যমতো ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানই এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।

পারস্পরিক এই অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কের ব্যতীক্রম উদাহরণ থাকলেও তার সংখ্যা কোনভাবেই উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের নয়। বহু নারী নির্যাতন, পারিবারিক কলহ, ডিভোর্স, বৃদ্ধাশ্রম তৈরী ও হত্যাকান্ডের নেপথ্যে স্ত্রী/শ্বাশুড়ির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। তাই স্বামী বা সন্তান যদি মিডলম্যান হিসেবে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয় তাহলে এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের পথ অনেকটাই সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস!

(বই থেকে সংক্ষেপিত)
প্রকাশিতব্য বইঃ বিনি সুতোর বাঁধন

লেখকঃ ইসলামী বিষয়ে কলাম লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

লেখকের প্রকাশিত লেখাসমূহ-

সত্যিকারের পুরুষ চাই

অনন্যা

অন্য পত্রিকায় প্রকাশিত সদৃশ লেখা –

দাম্পত্য জীবন সুখী করার উপায়

আরও পড়ুন