Ads

ফিলিস্তিন বিবাদে আরব নেতৃত্ব, ইতিহাসের এক ঝলক

জিয়াউল হক

১৯১৮ সালের জুন মাসে Zionist Commission এর পক্ষ থেকে সিরিয়ায় Weizmann সফরে এলে হুসেইনের পুত্র ফয়সাল প্রথমবার, অক্টোবরে লন্ডনে দ্বিতীয়বার এবং ৩রা জানুয়ারি, ১৯১৯ প্যারিসে তৃতয়িবার গোপন বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে উভয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। Faisal-Weizmann Agreement নামে পরিচিত চুক্তিটির দুটি প্রধান শর্র্ত ছিল; ১. The parties committed to carrying into effect the Balfour Declaration of 1917, calling for a Jewish national home in Palestine. ২. Disputes were to be submitted to the British Government for arbitration.

অর্থাৎ: ১. পক্ষদ্বয় ১৯১৭ সালের বেলফোর ড্ক্লিারেশন বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ করবেন অঙ্গিকার এবং ২. এ কাজে কোনরকম বিবাদ তৈরি হলে ব্রিটিশ সরকারই তার মিমাংশা করবেন।

এটি ছিল ফিলিস্তিনিদের বুকে ছুরিকাঘাত। ফয়সলের বাবা শরিফ হুসেইন এ ধারার সূচনা করেছিলেন, ১২ই সে্েপটম্বর ১৯১৬ মিশরের ইসমাইলীয়াতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত Sir Henry McMahon এবং ৬ জন কুটনীতিবীদের সাথে এক গোপন বৈঠকের মাধ্যমে। উক্ত বৈঠকে হুসেইনকে ও পরবর্তিতে প্যারিসের বৈঠকে তার পুত্র ফয়সলাকে ব্রিটেন ফিলিস্তিনের প্রস্তাবিত যে ম্যাপ ধরিয়ে দেয়, সেখানে তারা স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনকে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখেন। পিতা পুত্র হেজাজে আরব রাষ্ট্র পাবার আশায় কোনরকম প্রতিবাদ করেনি।

তার আগেই অবশ্য ৩রা জানুয়ারি, ১৯১৬ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে Sykes–Picot Agreement গোপন চুক্তি হয়। এ চুক্তি বলেই তারা খেলাফত পরবর্তি মধ্যপ্রাচ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। বিশ্বযুদ্ধ পরিণতির দিকে এগুতে থাকলে World Zionist Organization, Zionist Federation ও The British Jewish community তৎপর হয়। তারা হুসেইন ও ফয়সলকে পাশ কাটিয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দী আরব নেতা ইবনে সউদকে এগিয়ে নিয়ে আসে।

ইবনে সউদ হেজাজ থেকে শরিফ হুসেইনকে তাড়াতে তৎপর হন। তবে তার আগে তিনিও ব্রিটেনের দূত Sir Percy Cox এর কাছে নিজের হাতে লিখিত অঙ্গিকারনামা দেন যে, অসহায় ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনভূমি ছেড়ে দিতে তার কোনরকম আপত্তি নেই।

১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ খেলাফত বিলুপ্ত হলে ফিলিস্তিনের (এবং বৃহত্তর অর্থে মুসলিম বিশ্বের) মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ে। একই সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ ধরে আরবদের ঐক্যও ভেঙ্গে যায়। এরই মধ্যে ১৪ই মে, ১৯৪৮ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে ১৫ই মে যুক্তরাষ্ট তিনদিন পর রাশিয়াও স্বীকৃতি দেয়।

প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে শরিফ হুসেইন ভার্সাইল চুক্তি অস্বীকার করে খেলাফত বিলুপ্তির একদিন পর ৫ই মার্চ ১৯২৪ নিজেকে খলিফা ঘোষণা করলে ৯ই মার্চ ফিলিস্তিনের গ্রান্ডমুফতি ও মুসলিম নেতারা বায়াত নেন। ব্রিটেন ও মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে লন্ডন থেকে দূত হিসেবে প্যালেস্টাইন বিষয়ক সচিব General Clayton কে পাঠায়। জেনারেল ক্লেইটন হুসেইনকে খুব কড়া ভাষায় বলেন;
It had benefited Britain during the war to contemplate making him the Muslim Caliph only when he had some helpful part to play in Allied military and political efforts. At the moment, the king was no longer useful, making the acquisition of the title… inappropriate

ভাবার্থ: যুদ্ধের সময় তাকে (শরিফ হুসেইনকে) মুসলমানদের খলিফা করাটা তাদের জন্য লাভজনক ও প্রয়োজন ছিল, আজ সে প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আজ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খলিফা হবার দাবীর মধ্যে কোন যৌক্তিকতা নেই।

এর পরের ইতিহাস সবার জানা। অন্যান্য চুক্তির মতো কাজ আদায় হবার পরে ইহুদিরা আরবদের সাথে, বিশেষ করে, শরিফ হুসেইন ও তার পুত্র ফয়সলের সাথে কৃত সকল চুক্তিকেই নর্দমায় নিক্ষেপ করে। কিন্তু সেদিন ওসমানীয় খেলাফত হতে বেরিয়ে আসা ও হেজাজের বুকে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর শরিফ হুসেইন, তার পুত্র ফয়সল ও ইবনে সউদ ফিলিস্তিনি নিয়ে যে ভুমিকা পালন করেছেন, সেটা আজ একশত বসর পরেও সউদি আরবকে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে এক আর্থিক সাহায্য ছাড়া কার্যকর রাজনৈতিক ও সামরিক কোন পদক্ষেপ নেয়া হতে নৈতিকভাবেই অক্ষম করে রেখেছে।

এই জন্যই বলি, জাতীয় রাজনীতিতে নেতা বা নেতাদের ভুলের মাশুল গুনতে হয় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে কুটনৈতিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞাহীন গোপন বৈঠক নিয়ে আরব নেতারা কিংবা তাদের উত্তরসূরীগণ কি কখনও আত্মসমালোচনা করবেন না? সত্য উপলব্ধীর সময় কি এখনও হলো না?

লেখকের আগের লেখাঃ সমাজ বদলায় সময়োচিত প্রাজ্ঞ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপে, আবেগে নয়

লেখকঃ ইংল‍্যান্ডের বেসরকারী মানসিক হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ও লেখক, ইংল‍্যান্ড

আরও পড়ুন