Ads

মুসলিম ইতিহাসে কত জন ইয়াযিদ ছিল ও তারা কেমন ছিল?

।। আরিফুল ইসলাম ।।

‘ইয়াযিদ’ নামটি মুসলিম ইতিহাসে বেশ পরিচিত নাম। অসংখ্য সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী তাদের ছেলের নাম রাখেন ইয়াযিদ। এমনকি অনেক সাহাবী, সাহাবীদের পিতার নাম ছিলো ইয়াযিদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রায় ১৪৭ জন সাহাবীর নাম ছিলো ইয়াযিদ। [১]  কেমন ছিল এই ইয়াযিদরা ?

অনেক সাহাবীর বাবার নাম ছিলো ইয়াযিদ। যেমন: হাওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার বাবার নাম ছিলো ইয়াযিদ ইবনে সিনান [২], আনসারী সাহাবী আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহার বাবা ছিলেন ইয়াযিদ ইবনে আস-সাকান রাদিয়াল্লাহু আনহু। ইয়াযিদ ইবনে আস-সাকান রাদিয়াল্লাহু আনহু উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। [৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। [৪]

ইসলাম গ্রহণের পর যেসব সাহাবী নিজেদের নাম পরিবর্তন করেন, তাদের বেশিরভাগ নিজেদের নাম রাখেন আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। সাহাবীদের মধ্যে বেশিরভাগ সাহাবীর এই দুটো নাম ছিলো। ‘আব্দুল্লাহ’ নামের সাহাবীদের সংখ্যা প্রায় ৬৯৯ জন, ‘আব্দুর রহমান’ নামের সাহাবীদের সংখ্যা প্রায় ২৪১ জন। [৫]

এই দুটো নামের পর দ্বিতীয়, তৃতীয় সারির সর্বোচ্চসংখ্যক সাহাবীর নাম ছিলো ইয়াযিদ। বনু উমাইয়্যার কাছে পছন্দনীয় নাম ছিলো এটা। ফলে, বনু উমাইয়্যা কয়েকজন খলিফা, গভর্নর পাওয়া যায় এই নামে। বনু উমাইয়্যার খলিফাদের মধ্যে ‘ইয়াযিদ’ নাম ছিলো অন্তত তিনজন খলিফার। তারা হলেন:

১। ইয়াযিদ ইবনে মুআবিয়া

২। ইয়াযিদ ইবনে আব্দিল মালিক

৩। ইয়াযিদ ইবনে ওয়ালিদ [৬]

আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুর বংশের অন্তত তিনজনের নাম ছিলো ইয়াযিদ। আবু সুফিয়ানের আপন নাতি ছিলো কুখ্যাত ইয়াযিদ ইবনে মুআবিয়া। ইয়াযিদ ইবনে মুআবিয়ার আপন নাতি ছিলো ইয়াযিদ ইবনে খালিদ।

অন্যদিকে, আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুর আরেক নাতি ছিলো উসমান ইবনে মুহাম্মদ। উসমান তার ছেলের নাম রাখেন ইয়াযিদ; ইয়াযিদ ইবনে উসমান।

ইয়াযিদ নামের অর্থ ‘তিনি ক্ষমতা ও সম্পদ বৃদ্ধি করেন’। নামের অর্থগত মিল দেখলে দেখা যায় এই নামের অনেক লোক ক্ষমতাবান ছিলেন, সম্পদশালী ছিলেন। তিন খলিফার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রশাসক, গভর্নর ছিলো। তাদের একজন হলো ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব।

খলিফা সুলাইমান ইবনে আব্দিল মালিকের সময় সে ছিলো বসরার প্রশাসক। কিন্তু, উমর ইবনে আব্দিল আযিয রাহিমাহুল্লাহ খলিফা হবার পর তাকে বহিষ্কার করেন এবং তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। [৭]

আরও পড়ুন-মুসলিম ইতিহাসের প্রথম বাদশাহ মুআবিয়ার বাবা তথা ইয়াজিদের দাদা কেমন ছিলেন?

বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে দেখা যায় সরকার পরিবর্তনের পর অনেকের চাকরি চলে যায়, ও.এস.ডি করা হয়। এটার অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক মতাদর্শ, রাজনৈতিক পলিসি। প্রথম প্রজন্মে এরকম বিস্ময়কর পরিবর্তন ছিলো সেনাপতির পদ। মুসলিম ইতিহাসে সেনাপতি হিশেবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতে তিনি ছিলেন মুসলিম বাহিনীর খলিফা। কিন্তু, উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হবার পর তিনি সেনাপতির দায়িত্ব খালিদ ইবনুল ওয়ালিদের কাছ থেকে নিয়ে সেই দায়িত্ব দেন আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। [৮]

ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাবকে নেককার উমর ইবনে আব্দিল আযিয যেমন গ্রেফতার করেন, তেমনি যালিম হাজ্জাজ বিন ইউসুফও তাকে গ্রেফতার করে, তার ওপর নির্যাতন চালায়। নির্যাতন কমানোর জন্য সে ঘুষ দিতে চায়। সে বলে, তার শাস্তি কমানো হলে সে ১ লক্ষ দিরহাম দিবে। প্রায় কয়েক কোটি টাকা। অতঃপর হাজ্জাজ তাকে ক্ষমা করে দেয়। [৯]

টাকা-পয়সা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে ইয়াযিদ ছিলো সিদ্ধহস্ত। সে প্রতিদিন তার এক বন্ধুকে ১০০ দিনার দিতো; যা কয়েক লক্ষ টাকার সমান। একবার সে একটি সফরে যাবার চিন্তা করলো। সফরে গেলে তো আর প্রতিদিন বন্ধুকে টাকা দিতে পারবে না, এজন্য সে এককালীন ৩০০০ দিনার দিয়ে গেলো। [১০]

৩০০০ দিনার আজকের যুগের প্রায় কয়েক কোটি টাকা।

একবার ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব হজ্জ করতে গেলো। সেখানে গিয়ে এক নাপিতের কাছে চুল মুণ্ডন করলো। নাপিতকে দিলো ১০০০ দিরহাম। নাপিত চুল কেটে সাধারণত ২-৩ দিরহাম পেতো।

আমাদের দেশের নাপিতরা চুল কেটে ৫০-৩০০ টাকা পায় সাধারণত। হঠাৎ করে কেউ যদি চুল কেটে ৫ লক্ষ টাকা পায়, তার কেমন লাগবে? মক্কার সেই নাপিতের অবস্থা তেমন হয়। সে এই সুসংবাদ তার মাকে জানাতে যায়। ইয়াযিদ যখন শুনলো নাপিত খুব খুশি হয়েছে, তখন বললো, “এই নাও আরো ১০০০ দিরহাম, এটা তুমি তোমার মাকে দিও।”

ইয়াযিদের দানশীলতা দেখে সেই নাপিত এতো খুশি হলো, তার আর সারাজীবন উপার্জন না করলেও হবে। ২০০০ দিরহাম দিয়ে সেই সময় অন্তত ২০০ টি ছাগল কেনা যেতো। একজন মানুষের ২০০ টি ছাগল থাকলে তার আর কিছু লাগে?

সেই নাপিত বলে উঠলো, “আল্লাহর কসম! আজকের পর থেকে যদি আমি আর কারো চুল কাটি তাহলে আমার বউ তালাক!”

ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব নাপিতের সরলতায় মুগ্ধ হয়ে হেসে ফেটে পড়লো। সে বললো, “তাহলে তোমাকে আরো ২০০০ দিরহাম দিলাম!” [১১]

চিন্তা করুন, একজন নাপিত একজন মানুষের চুল কেটে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা পেলো। তার সারাজীবন আর উপার্জন করতে হয়নি। কিন্তু, যে তাকে এতো টাকা দিলো, সে কি এতোই মহান ছিলো?

না, ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব এতো মহান কেউ ছিলো না। তার দুর্নীতি, জবরদস্তির কথা সবাই জানতো। এজন্যই তো উমর ইবনে আব্দিল আযিযের মতো মহান খলিফাকে তাকে বরখাস্ত করে জেলে পাঠান। হাজ্জাজ তাকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে অবশ্য হাজ্জাজ তার বোনকে বিয়ে করে!

প্রশ্ন হলো, ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব এতো টাকা কোথায় পেতো?

সে ছিলো মূলত একজন দুর্নীতিবাজ। তার কর্মকাণ্ড ছিলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সে আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ চালাতো, তারপর সেখান থেকে চাদা দাবি করতো। চাদা না দিলে গণহত্যা চালাতো। জুরজান অঞ্চল দখল করে সেখানকার মানুষকে হত্যা করে। প্রায় ৩ মাইলব্যাপী জায়গা লাশে ভরে যায়! সবসময় কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ছিলো তার কাজ।

ইয়াযিদ ইবনে আব্দিল মালিক খলিফা হবার পর এবার সে খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বসরা শহর দখল করে নেয়। অতঃপর যুদ্ধ শুরু হয় দুই ইয়াযিদের মধ্যে। খলিফা ইয়াযিদ ইবনে আব্দিল মালিক, বিদ্রোহী ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব। ১০২ হিজরীতে সংগঠিত সেই যুদ্ধে ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব নিহত হয়। [১২]

আরেক ইয়াযিদ ছিলো ইয়াযিদ ইবনে আবি মুসলিম। সে ছিলো মরক্কোর গভর্নর। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ মৃত্যুর পূর্বে ইয়াযিদকে খারাজের মালামালের দায়িত্বে নিযুক্ত করে। ওয়ালিদ ইবনে আব্দিল মালিক খলিফা হবার পরও সে এই পদে বহাল থাকে। ওয়ালিদ তার সম্পর্কে বলেন , “আমার, তোমার আর হাজ্জাজের উদাহরণ হলো এমন লোকের মতো, যার এক দিরহাম হারিয়ে যাওয়ার পর সে এক দিনার খুঁজে পায়।” [১৩]

অর্থাৎ, তাদের ১০০ টাকা হারালে তারা ১০০০ টাকা খুঁজে পায়।

আরও পড়ুন-  ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান ছিলেন উত্তম ইয়াজিদ

ইয়াযিদ ইবনে আব্দিল মালিক খলিফা হন। খলিফা হবার পর তিনি এক ইয়াযিদকে (ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব) হত্যা করেন, আরেক ইয়াযিদকে (ইয়াযিদ ইবনে আবি মুসলিম) আফ্রিকায় গভর্নর হিশেবে নিযুক্ত করেন। ক্ষমতা পাবার পর ইয়াযিদ তার নামের সাথে ‘সুবিচার’ করলো; সে অত্যাচারী হয়ে উঠলো! সেখানকার খারেজীরা তাকে ১০২ হিজরীতে হত্যা করলো। [১৪]

অর্থাৎ, একই বছর দুই ইয়াযিদকে হত্যা করা হয়; ইয়াযিদ ইবনে মুহাল্লাব ও ইয়াযিদ ইবনে আবি মুসলিম।

ইয়াযিদ নামের তিনজন খলিফা হলেও কেউই ৪ বছরের বেশি রাজত্ব করতে পারেননি। নবম উমাইয়্যা খলিফা ইয়াযিদ ইবনে আব্দিল মালিক ছিলেন গান-বাজনায় আসক্ত। তার উল্লেখযোগ্য সময় কাটতো গায়িকাদের সাথে। তার প্রিয় গায়িকা ছিলো হাবাবা। একবার হাবাবার সাথে একান্ত সময় কাটাচ্ছিলেন খলিফা ইয়াযিদ ইবনে আব্দিল মালিক। হাবাবার মুখে একটি আঙ্গুর ছুঁড়ে মারেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত আঙ্গুরটি তার গলায় আটকে যায়, হাবাবা দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। নিজের প্রিয় গায়িকাকে এভাবে ভুলবশত হত্যা করে তিনি বেশ অনুতপ্ত হন। ঘরে দরজা লাগিয়ে বসবাস শুরু করেন। হাবাবার মৃত্যুর ১৫ দিন পর খলিফা ইয়াযিদ ইবনে আব্দিল মালিক ইন্তেকাল করেন! [১৫]

ইয়াযিদ নামের আরেক খলিফা ছিলেন ইয়াযিদ ইবনুল ওয়ালিদ। তাকে ডাকা হতো ‘আন-নাক্বেস’ নামে। কারণ, তিনি সেনাবাহিনীর ভাতা কমিয়ে দেন![১৬]

মাত্র ছয় মাস মেয়াদী শাসনামলে তার তেমন কীর্তি নেই, তবে একটি বড়ো কুকীর্তি আছে। ক্ষমতায় আসার পর তিনি মানুষকে তাকদীর অস্বীকার করতে বললেন! মানুষকে কাদেরিয়্যা মতবাদ গ্রহণে বলপ্রয়োগ করেন! [১৭]

মুসলিম খলিফারা সাধারণ মানুষের আকীদা বিশ্বাসে ভ্রান্ত আকীদার জোর করে আরোপ করার কিছু ঘটনা পাওয়া যায়। এই ধরনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহর সাথে আব্বাসী খলিফাদের বিরোধ। তবে, উমাইয়্যাদের সময়েও রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্রান্ত আকীদার পৃষ্ঠপোষকতার এই ঘটনাটি পাওয়া যায়।

ইয়াযিদ নামের যালিম শাসক, ভ্রান্ত আকীদার লোকজনের পাশাপাশি এই নামে আলেমও পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইয়াযিদ ইবনে যুরাই রাহিমাহুল্লাহ। তিনি ছিলেন বসরার একজন বড়ো মুহাদ্দিস। তাঁকে ডাকা হতো ‘বসরার সুগন্ধী’।

সাহাবীদের মধ্যে প্রায় ১৪৭ জনের নাম ‘ইয়াযিদ’ হলেও তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন ইয়াযিদ ইবনে আবি সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি তাঁর বাবা, মা, ভাইয়ের মতো মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ যোদ্ধা, যোগ্য শাসক। হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ১০০ টি উট এবং ৪০ আউন্স স্বর্ণ প্রদান করেন। [১৮]

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে এক-চতুর্থাংশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেন। আবু বকর তাঁকে সিরিয়া বিজয় হলে সিরিয়ার আমির নিযুক্ত করার ওয়াদা করেছিলেন। উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু পূর্ববর্তী খলিফার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেন। তিনি সিরিয়ার গভর্নর হন। তাঁর সময়ে আমওয়াস প্লেগে আক্রান্ত হয়ে অনেক সাহাবী ইন্তেকাল করেন। যেমন: আবু উবাইদা, মুয়ায ইবনে জাবাল, সুহাইল ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম।

ইয়াযিদ ইবনে আবি সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু কয়েক মাস সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন। অতঃপর আমওয়াস প্লেগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।[১৯] এই মহামারী প্লেগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২৫,০০০ মুসলিম ইন্তেকাল করে! [২০]

বর্তমান সময়ে একেকটি ইউনিয়নে অন্তত ২৫,০০০ মানুষ বসবাস করে। সেই হিশেবে চিন্তা করুন এই প্লেগে প্রায় একটি ইউনিয়নের মানুষজন ইন্তেকাল করে।

সিরিয়া যাবার সময় তিনি সাথে নিয়ে যান তাঁর সৎ ভাই মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। ইয়াযিদ ইবনে আবি সুফিয়ানের বাবা-মা ছিলেন আবু সুফিয়ান ও যাইনাব বিনতে নওফেল। অন্যদিকে, মুআবিয়ার বাবা-মা ছিলেন আবু সুফিয়ান ও হিন্দ বিনতে উতবা।

আরও পড়ুন-ইয়াযিদ: মুসলিম ইতিহাসের ক্ষমতালোভী শাসক

একদিন আবু সুফিয়ান স্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বললেন, “দেখলে, এখন তোমার ছেলে আমার ছেলের অধীনে থাকবে। এখন কেমন লাগবে?”

হিন্দ বললেন, “যদি আরব ঐক্যের অস্থিরতা দেখা যায়, দেখবে আমার ছেলে আর তোমার ছেলের কী অবস্থান হয়।” [২১]

সত্যি সত্যি তাই হয়। ইয়াযিদ ইবনে আবি সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু ইন্তেকালের পূর্বে তাঁর সৎ ভাই মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানকে সিরিয়ার গভর্নর বানান। খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব মুআবিয়াকে সেই পদে বহাল রাখেন। [২২]

মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথমবারের মতো সিরিয়ার গভর্নর হলেন। দীর্ঘ ২০ বছর তিনি এই পদে বহাল থাকেন, অতঃপর খলিফা হন। সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী গভর্নরের পদে থাকেন মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর ক্ষমতার উত্থান শুরু হয় সৎ ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হিশেবে। পূর্বের খ্রিস্টান শাসিত সিরিয়াকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন।

ইয়াযিদ নামের অনেক যালিম, দুর্নীতিবাজদের মধ্যে আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলে ইয়াযিদ ইবনে আবি সুফিয়ান ছিলেন উত্তম। এজন্য তাঁকে ডাকা হয় ‘ইয়াযিদ আল-খায়র’ বা কল্যাণীয় ইয়াযিদ।

অন্যদিকে তাঁর ভাতিজা ইয়াযিদ ইবনে মুআবিয়া ছিলো মুসলিম ইতিহাসের প্রথম যালিম শাসক; যার শাসনামলে অনেক সাহাবীকে হত্যা করা হয়, মর্মান্তিক কারবালা, হাররার ঘটনার দায়ী ছিলো এই ইয়াযিদ। যার ফলে, মুসলিম ইতিহাসের অনেক আলেম তার ওপর লানত বর্ষণ করেন এবং তার ওপর লানত দেয়া যে ইসলামে বৈধ, সেটা নিয়ে বই লিখেন আল্লামা ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ।

উমাইয়্যাদের মধ্যে অনেকের নাম ছিলো ইয়াযিদ। আব্বাসীদের হাতে উমাইয়্যাদের পতনের মাধ্যমে ‘ইয়াযিদ’ নামের লিগ্যাসীরও পতন ঘটে। ব্যতিক্রম ঘটনা বাদ দিলে এরপর আর কোনো শাসক, খলিফার নাম ইয়াযিদ ছিলো না। পরবর্তী যুগের মুসলিমদের মনে এই নামের প্রতি ঘৃণা জন্মে। অনেক পুণ্যবান সাহাবী, তাবে-তাবেয়ীর নাম ইয়াযিদ থাকা সত্ত্বেও এই নাম শুনলে মুসলিমদের মনে ভেসে উঠে কারবালার দৃশ্য, তারা এই নামে স্মরণ করে কুখ্যাত ইয়াযিদ ইবনে মুআবিয়াকে। কেউ লানত বর্ষণ করে, কেউবা চুপ থাকে।

চলবে….

[ লেখকের রাজতন্ত্র লেখা থেকে রাজতন্ত্র -৩]

আগের পর্ব-জাহেলী আরবের সেরা সুন্দরী হিন্দ বিনতে উতবা যিনি ইয়াজিদের দাদী

লেখকঃ আরিফুল ইসলাম, লেখক ও ইসলামী কন্টেন্ট রাইটার

আরও পড়ুন