Ads

কলম্বিয়া সরকার ও ফার্ক গেরিলাগোষ্ঠী

।। আসাদ পারভেজ ।।

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে আলোচিত দেশটির নাম ‘কলম্বিয়া’। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত দেশটি ১৮১৯ সালের পূর্বে সাম্রাজ্যবাদী স্পেনের উপনিবেশ ছিল। কলম্বিয়ার জনগণ ১৮১৯ সালে ‘সাইমন বলিভার’র নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী স্পেনিশ বাহিনীকে পরাজিত করে পরাধীন ভূমিতে স্বাধীনতার পতাকা উড়ায়। কলম্বাসের নামে স্বাধীন ভূমি ‘কলম্বিয়া’।

কলম্বিয়ার ইতিহাস তার প্রতিবেশি দেশগুলোর মতোই রক্তাক্ত এবং সংগ্রামের কাহিনীতে ভরপুর। কখনো স্প্যানিসদের বিরুদ্ধে, তো কখনো অন্তকলহ, কখনো ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে কিংবা কখনো একটি সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী সমাজ গড়তে। মুক্তি পাগল কলম্বিয়ানরা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মাদক উৎপাদনকারী ও চোরাচালানের জন্য বিখ্যাত।কিছু গেরিলা সংগঠনের জন্মের ভেতর দিয়ে কলম্বিয়া হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠে।। যাদের প্রত্যেকে অঞ্চল কেন্দ্রিক স্বাধীনতা চেয়ে বসে। আবার কিছু সংগঠন পুরো সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। ১৯৬৪ সালে গঠিত Revoloutionary Armed Forces of Colombia(FARC) এমনই একটি সংগঠন, যার প্রতিষ্ঠাতা ম্যানুয়েল ভেলেজ। মার্কসবাদী গেরিলা গোষ্ঠী ফার্ক কলম্বিয়া সরকারের কাছে বিদ্রোহী জঙ্গি গ্রুপ হলেও অন্যদের কাছে গেরিলা সংগঠন। গোষ্ঠীটি ‘কলম্বিয়ার বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী’ নামে পৃথিবীতে বেশ পরিচিত।

ফার্ক প্রতিষ্ঠার পেছনের কাহিনী: লাতিন আমেরিকার পুরো অঞ্চলে ভূস্বামী আর ধনী ব্যবসায়ীদের রমরমা অবস্থা। চরম দারিদ্রতাই কলম্বিয়ার মাটিতে বামপন্থী চিন্তা চেতনার জন্ম দেয়। দরিদ্র জনতার মাঝে শিক্ষামন্ত্রী হোর্হে গাইতান ছিলেন বামঘেষা জনপ্রিয় নেতা। তিনি আমজনতাকে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাতেন। ১৯৪৮ সালে নির্বাচনকালীন সময়ে তার প্রেসিডেন্ট হওয়া প্রায় নিশ্চিত। এমনই সময়ে তিনি হুয়ান সিয়েরা নামক যুবকের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তার হত্যাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া দাঙ্গা ১০ বছর চলতে থাকে। লা ভায়োলেন্সিয়া নামে পরিচিত এই দাঙ্গা ২ লক্ষ জীবনহানির বিনিময়ে ১৯৫৮ সালে শেষ হয়। এই সময় ন্যাশনাল ফ্রন্ট নাম দিয়ে যৌথভাবে ক্ষমতায় আসে উদার ও রক্ষণশীল ঘরানার দুটি দল।তথাপি দাঙ্গা বন্ধ হলেও গুমোট পরিস্থিতি আর ধনী দরিদ্র্যের বৈষম্য থেকে দেশটি বেরিয়ে আসতে পারেনি।

মার্কেতালীয় প্রজাতন্ত্র বনাম ফার্কের উত্থান: ১৯৫৮ সালে ক্ষমতায় বসা ন্যাশনাল ফ্রন্ট জনতার ওপরে নিপীড়ন শুরু করে। স্বভাবসুলবভাবেই সুযোগ সন্ধানি যুক্তরাষ্ট্র এতে হস্তক্ষেপ করে। ন্যাশনাল ফ্রন্ট অস্তিত্ব বাঁচাতেদেশের কৃষি জমির বিশালাংশ মার্কিন ব্যবসায়ী বার্নার্ড কুরির নিকট লিজ দিতে হয়। এতে করে চার লক্ষের অধিক লোক বেকার হয়ে শহরে আশ্রয় নেয়, যা থেকে আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই কৃষক-শ্রমিকদের মাঝে বামদলের অস্তিত্ব বিরাজমান। সংকটময় সময়ে বামদের উৎসাহে দেশের দক্ষিণাংশের নানাস্থানে কৃষক-শ্রমিক সম্বিলিতভাবে প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলে। ন্যাশনাল ফ্রন্টের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ১৯৬১ সালে ম্যানুয়েল ভেলেজ কলম্বিয়ার দক্ষিণাংশের পাহাড়গুলোর একটি এলাকাকে মার্কেতালীয় প্রজাতন্ত্র নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। শুরু হয় সরকারি বাহিনীর আক্রমণ। মার্কিন মদদে সরকার স্বাধীনতাকামীদের উপর অত্যাচার বাড়িয়ে দেয়। অবশেষে ৬০০ বর্গ কিলোমিটারের এই প্রজাতন্ত্রে ১৯৬৪ সালে স্বাধীনতার মহাস্বপ্নে ৪৮ জন মিলেশিয়া ফার্ক প্রতিষ্ঠা করে।

রাশিয়া আর কিউবার সহায়তায় কলম্বিয়ার মাটিতে ফার্ক ভীত মজবুত করতে সক্ষম হয়। তাদের অস্ত্রশস্ত্র আর প্রশিক্ষণে শক্তিশালী সেনাদল গঠন করে। ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যম তারা বিশ্বকে জানান দেয়। শুরু হলো সরকার বনাম গেরিলা সংগঠন ফার্কের দর কষাকষি। ১৯৮৪ সালে কলম্বিয়ান কম্যুনিস্ট পার্টি এবং অন্যান্য বামদল নিয়ে তারা প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন নামে নতুন দল গঠন করে। নব্বই দশকের পরপরই দেশ জুড়ে গৃহযুদ্ধ। এরইমধ্যে দেশের বিশালাংশ ফার্ক গেরিলাদের হাতে আসে।

কার না অর্থ লাগে! তাই ফার্কের নানা কার্যক্রমে অর্থের প্রয়োজনে তারা মাদক পাচার, অপহরণসহ অবৈধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। তাতে করে দলটির জনপ্রিয়তা কিছুটা হ্রাস পায়।১৯৯৯ সালে ফার্ক মিনিমাম তিনহাজার অপহরণ করে। বিশহাজার সদস্যের সেনাদল নিয়ে দেশের উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব আর দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ বর্গ মাইল নিয়ন্ত্রণে নেয় গেরিলা সংগঠন ফার্ক। এই সময় দেশের ভেতরে সেনাবাহিনী ও সরকার থেকে ফার্ক অধিকতর চাপে পড়ে।
একুশ শতকে এসে সরকার আর ফার্কের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এই সময়ে ফার্ক প্রতিষ্ঠাতা ম্যানুয়েল ভেলেজ মারা যান। তার মৃত্যুর পর ২০০৮Ñ৯ সালে বহু যুদ্ধা নিহত ও আহত হয়। বাম নেতা আলফান্সো কানো (মোনো জোজেই) নিহত হওয়ার পর ফার্ক অস্তিত্ব সংকটে পড়ে।
২০১২ সালে হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। তার আহ্বানে সরকার ও ফার্ক এক টেবিলে বসতে রাজি হয়। অবশেষে কিউবার মধ্যস্থতায় ৪৮ বছরের সশস্ত্র সংঘাতের ইতি টানতে ২০১২ সালে রাজধানী হাভানাতে কলম্বিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী ফার্ক গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু। কলম্বিয়ার সরকার এই আলোচনাকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে আখ্যায়িত করেন।

২০১৬ সালের ২৩ জুনকিউবার রাজধানী হাভানায় প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরে, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল বেচলেট, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্গ বেরেন্ডাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস ও ফার্ক কমান্ডার রডরিগো এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ বিরতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হবার পর কিউবার রাজধানী হাভানায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস আবেগ প্রবণ হয়ে বলেন, কলম্বিয়ার সংঘাতময় জীবনযাপনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। শান্তিতে বসবাস করার মানে কি তাও আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। আজ একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে। আশা করি আমাদের দেশটিতে শান্তি ফিরবে এবং আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য মুক্তির ইতিহাস রেখে যাব। জনাব সান্তোস আরো বলেন, ‘চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি আগামী মাসে স্বাক্ষরীত হতে পারে। চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির প্রয়োজনে সমগ্র দেশের জনগণের পরামর্শ তিনি গ্রহণ করবেন। তার জন্য তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে একটি গণভোট পরিচালনা করবেন। তিনি এও বলেন, এই সুন্দর কার্যক্রমে বিরোধী দলের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে’।

বিশ্লেষকদের ধারণা, গত ৫২ বছরে কলম্বিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী ফার্ক গোষ্ঠীর মধ্যে সংগঠিত সংঘর্ষে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ মারা গেছে এবং ৫০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আধুনিক পৃথিবীর বুকে কলম্বিয়ার এই লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্ধ হবে।
পাঁচ দশকের বেশি সময়ের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে কলম্বিয়ার সরকার ও ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠী ঐতিহাসিক এক শান্তি চুক্তিতে উপনিত হয়। ২০১২ সালে কিউবার মধ্যস্থতায় শান্তির উদ্যোগ সাড়ে তিন বছরে এসে ২০১৬ সালের ২৩ জুন হাভানায় তা যুদ্ধ বিরতি (অস্ত্র বিরতি) চুক্তির মাধ্যমে শান্তির সাফল্য দেখতে পায়।২৪ আগস্ট ২০১৬ সালে হাভানায় এক অনুষ্ঠানে কলম্বিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান উমবেরতো দে লা চাল্লে ও বামপন্থী গেরিলা বাহিনী রেভলিউশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া (ফার্ক)- এর প্রধান আলোচক ইভান মার্কেজ ‘ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে সই করেন।

দীর্ঘ সংগ্রামের পর কলম্বিয়ার ভূমিতে বিস্তৃতভাবে সামাজিক অন্তর্ভূক্তি, সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা এবং স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে উভয় পক্ষ একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছেন। চুক্তি ঘোষণার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কলম্বিয়ার সরকার ও ফার্ক ঘোষণা করছেÑ আমরা একটি চূড়ান্ত, পূর্ণাঙ্গ ও হালনাগাদ সমঝোতায় উপনীত হয়েছি’। চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে ফার্ক অস্ত্র সমর্পণ করে বেসামরিক জীবনে ফিরে যাবে।
চুক্তি শেষে আবেগগণ মুহুর্তে কলম্বিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান উমবেরতো দে লা চাল্লে বলেনÑ ‘আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছে গেছি; যুদ্ধ শেষ, এখন নতুন সূচনা- এই চুক্তি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের দ্বার উন্মােচন করলো’।
ফার্কের প্রধান আলোচক ইভান মার্কেজ বলেনÑ ‘এটা ছিল কঠিন একটা কাজ, উজ্জল ও অন্ধকার মুহূর্ত দুইটাই ছিল। কিন্তু আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করেছি। এখন আমরা বলতে পারি, আমাদের দেশকে আমরা এগিয়ে নিতে পারব’।

ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিটি বিশ্বনেতারা সাধুবাদ জানালেও কলম্বিয়ার সকল সাধারণ জনগণের কাছে তা গ্রহণীয় হয়ে উঠেনি। বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতা কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যালভারো উরিব চুক্তিটির ঘোর বিরোধীতা করেন। তার মতে, চুক্তিটিতে বিদ্রোহীদের খুব বেশি ছাড় দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ চুক্তির ফলে বিদ্রোহীদের স্বার্থ রক্ষা হবে’। তাই তিনি রক্ষণশীল কলম্বিয়ানদের কাছে আহ্বান জানান, যেন তারা গণভোটে চুক্তিটিকে প্রত্যাখ্যান করে। তার আহ্বানে নির্যাতিত কলম্বিয়ানরা সাড়া দেয়। ২ অক্টোবর ২০১৬ সালে শান্তি চুক্তি অনুমোদনের বিষয়ে অনুষ্ঠিত গণভোটে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ গণভোটের বিপক্ষে রায় দিয়ে শান্তি চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে। পক্ষে ও বিপক্ষে ভোটের পার্থক্য ৬৩ হাজার ছিল। মোট ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ গণভোটে অংশ নেয়।

গণভোটের পর কলম্বিয়া সরকারের সাথে বিদ্রোহী গ্রুপ ফার্কের শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার পর কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস হতাশ হলেও দমে যাবার মানুষ নন। তিনি শান্তি চুক্তিটি রক্ষণশীল কলম্বিয়ানদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করতে চুক্তির প্রশ্নবিদ্ধ ধারাগুলো সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট সান্তোস মানসিকভাবে কলম্বিয়ায় বিরাজমান সংঘর্ষ নিরসনে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তার অবদান স্বরূপ নোবেল কমিটি ৭ অক্টোবর, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট সান্তোসকে শান্তি পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করে।

১২ অক্টোবর ২০১৬ ফার্ক নেতা টিমোলিয়ন হিমেনেজ শান্তি চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমাদের সকলকে একটা ভাল ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সংগ্রাম করতে হবে এবং এক্ষেত্রে ক্ষমা হতে পারে একটি শ্রেষ্ঠ উদাহারণ। ২০ অক্টোবর ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট সান্তোস বলেন, আমরা বিদ্রোহী গ্রুপ ফার্কের সাথে শান্তি চুক্তির কিছু পরিবর্তন নিয়ে কলম্বিয়ার বিরোধী দলের কাছ থেকে কিছু প্রস্তাব চেয়েছি। বৈঠক হয়েছে। আশা করি বিরোধী দলগুলো এ বিষয়ে একটি যুক্তিযুক্ত প্রস্তাবনা দিবে। তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে বিদ্রোহী গ্রুপ ফার্কের সাথেও আলোচনা হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমরা একটি সমাধানে পৌঁছতে পারব। যারফলে, সরকারের মধ্যস্থতাকারী ও ফার্কের সমন্বয় টিম মিলে চুক্তিটিতে ৫০টিরও বেশি পরিবর্তন আনয়ন করে।

কলম্বিয়া সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসি নিশ্চিত করে, সকল জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২২ নভেম্বর ২০১৬ সালে হাভানায় কিউবা ও নরওয়ের মধ্যস্থতায় কলম্বিয়ার সরকার ও ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আবারো নতুন করে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।এর আগে করা চুক্তিটির বিপক্ষে ‘না’ ক্যাম্পেইন চালানো সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্তমান বিরোধী নেতা আলভেরো উরিবে এবারের চুক্তি আলোচনায় সংযুক্ত ছিলেন। নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের সময় কিউবার প্রেসিডেন্ট রাহুল কাস্ত্রোসহ নরওয়ের কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। নতুন শান্তি চুক্তির বিবৃতিটি কিউবা ও নরওয়ের কূটনীতিক পাঠ করেন।উভয় পক্ষ এক বিবৃতিতে জানান যে, অত্র যুদ্ধ বন্ধে আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি। চুক্তিটিতে কিছু পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যাখ্যা সংযোজন এবং বেশ কিছু সামাজিক গোষ্ঠীর অবদানের কথা স্থান পেয়েছে।

২২ নভেম্বর ২০১৬ সালের টেলিভিশন ভাষণে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান (জুয়ান) বলেন, অর্ধশতাব্দি ধরে প্রিয়জনকে হারোনো লাখ লাখ (২ লক্ষ ৬০ হাজার হত্যা ৫০ লক্ষ বাস্তু হারানো) কলম্বিয়ানকে দুর্ভোগে ফেলা আমাদের ইতিহাসের একটি বেদনাদায়ক ও কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি টানার সুবর্ণ সুযোগ আমাদের আছে। গত অর্ধ শতকে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নতুন এই চুক্তিটি সম্ভবত সবাইকে সন্তুষ্টি করতে পারবে না কিন্তু শান্তি চুক্তিগুলো এমনই হয়। সব সময় এগুলোর সমালোচনা শুনতে পাওয়া যায়- এর কারণগুলোর বোধগম্য এবং সেগুলোর প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তিনি আরো বলেন, এবারের নতুন চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য গণভোটের পরিবর্তে বিরোধী দলের সহযোগিতা নিয়ে কংগ্রেসে পেশ করা হবে। এতকিছুর পরও বিরোধী দলগুলো বলেছে, এবারের চুক্তিটিও মানবাধিকার লংঘনকারী বিদ্রোহীদের শাস্তি দেয়ার কোন সুযোগ রাখা হয়নি।

কলম্বিয়ার মাটিতে ফার্ক ছাড়াও গত পাঁচ দশক ধরে ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি নামক আরেকটি দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্রোহী গ্রুপ রয়েছে। ২ অক্টোবর ২০১৬ সালে গণভোটে ফার্কের সাথে করা কলম্বিয়া সরকারের শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হয়। তারপর সরকার শুধু ফার্কের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেনি, সাথে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্রোহী গ্রুপ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সাথে ২৭ অক্টোবর ২০১৬ সালে ইকুয়েডরের রাজধানী ‘কুইটোতে আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেন। এসময় প্রেসিডেন্ট সান্তোস উভয় পক্ষকে দ্রুত আলোচনা শুরুর তাগিদ দিয়ে বলেন, সময় বড় শত্রু তাই দ্রুত আলোচনা শুরু করতে হবে। তিনি আরো বলেন, তিন বছর পূর্বে বিদ্রোহী গ্রুপ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সাথে যে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা আমাদের চূড়ান্ত সাফল্য নিয়ে যেতে হবে।

প্রায় ২ হাজার ৫০০ যোদ্ধার ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সাথে কলম্বিয়া সরকারের শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর পিছনে অন্যতম উদ্যোক্তা ভেনিজুয়েলাসহ নরওয়ে, কিউবা, চিলি, ব্রাজিল ও ইকুয়েডর। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে গেরিলা সংগঠন ফার্ক রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দলের নাম অষঃবৎহধঃরাব জবাড়ষঁঃরড়হধৎু ঋড়ৎপবং ড়ভ ঈড়ষড়সনরধ.

পৃথিবীর বুকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামের সূচনা লগ্নে নবী ও রাসূল মোহাম্মদ (সা.)- এর মাধ্যমে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধির পর আর যদি কোন চুক্তিকে শান্তির জন্য নির্বাচিত করতে হয়, তাহলে কলম্বিয়া সরকারের সাথে বিদ্রোহী ফার্ক  গেরিলাগোষ্ঠীর শান্তি চুক্তিটি বেছে নিতে হবে।

 

 লেখকঃ আসাদ পারভেজ, গবেষক ও কলামিস্ট

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন।

এবং প্রিয় লেখক ! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected]

প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

 

আরও পড়ুন