Ads

কুরআন ও বাইবেলের আলোকে হযরত সুলাইমান (আ.) এর অপরিমেয় জ্ঞান

জি.মোস্তফা

প্রসিদ্ধ নবি হযরত সুলাইমান (আ.) ছিলেন হযরত দাউদ (আ.)-এর সবচেয়ে ছোটো ছেলে।তার আসল ইবরানি নাম ছিলো সোলোমন।এটি ছিলো সলীম শব্দের সমার্থক।খ্রিস্টপূর্ব ৯৬৫ অব্দে তিনি হযরত দাউদের স্থলাভিষিক্ত হন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৯২৫ পর্যন্ত ৪০ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুয়ত, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও তাঁর পিতার রাজত্বের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁকে এমন কিছু নিয়ামত দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবিকে দান করা হয়নি। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি দাউদের জন্য সুলাইমানকে দান করেছিলাম, সে কতই না উত্তম বান্দা। অবশ্যই সে ছিল আমার প্রতি সদা প্রত্যাবর্তনশীল।’ (সূরা : সাদ, আয়াত : ৩০)।

হযরত সুলাইমান (আ.) জ্ঞান বিজ্ঞানের অজস্র শাখায় পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। কুরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে,

” ওয়া লাক্বাদ আ-তাইনা দাঊদা ওয়া সুলাইমানা ইলমা”।অর্থাৎ আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রদান করেছিলাম।(সূরা আন-নামল,অায়াত,১৫)

তৎকালীন সময়ের প্রচলিত অনেক ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। পাখি ও পিপীলিকার ভাষাও তাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিলো।পক্ষীকুলকে তাঁর অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি তাদের ভাষা বুঝতেন। আল্লাহ বলেন,

‘সুলাইমান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল এবং বলেছিল, হে লোক সকল! আমাদের পাখিদের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের সব কিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট মর্যাদা।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৬)

পিপীলিকার ভাষাও তিনি বুঝতেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে সুলাইমান তার সৈন্যদল নিয়ে পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল, তখন পিপীলিকা (নেতা) বলল, হে পিপীলিকা দল! তোমরা নিজ নিজ গৃহে প্রবেশ করো, অন্যথায় সুলাইমান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদের পিষ্ট করে ফেলবে। তার এ কথা শুনে সুলাইমান মুচকি হাসলেন।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ১৮-১৯)

আল্লাহ তাআলা সুলাইমান (আ.)-কে বাল্যকালেই গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দান করেছিলেন।বিচার কার্যে তার গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়।
বকরির পালের মালিক ও শস্যক্ষেতের মালিকের মধ্যে পিতা দাউদ (আ.) যেভাবে বিরোধ মীমাংসা করেছিলেন, বালক সুলাইমান তাঁর চেয়ে উত্তম ফয়সালা পেশ করেছিলেন। ফলে দাউদ (আ.) নিজের আগের রায় বাতিল করে পুত্রের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। (দেখুন—সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৭৮-৭৯)।

সুলাইমান (আ.)-এর গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি সম্পর্কে আরেকটি ঘটনা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দু’জন মহিলার দুটি সন্তান ছিলো। একদিন নেকড়ে বাঘ এসে একটি বাচ্চা নিয়ে যায়। তখন প্রত্যেকেই বললো, তোমার বাচ্চা নিয়ে গেছে, যেটি আছে ওটি আমার বাচ্চা। বিষয়টি ফয়সালার জন্য ওই দুই মহিলা দাউদ (আ.)-এর কাছে এলো। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার পক্ষে রায় দেন। তখন তারা বেরিয়ে সুলাইমান (আ.)-এর কাছে আসে এবং সব কথা খুলে বলে। সুলাইমান (আ.) তখন একটি ছুরি আনতে বলেন এবং বাচ্চাটাকে দুই টুকরো করে দুই মহিলাকে দিতে চাইলেন। তখন কনিষ্ঠ মহিলা বললো, আল্লাহ আপনাকে অনুগ্রহ করুন, বাচ্চাটি ওই মহিলার। তখন সুলাইমান কনিষ্ঠ মহিলার পক্ষে রায় দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬৯) এভাবে কৌশলে তিনি সত্য উদঘাটন করেছিলেন।

তিনি অসংখ্য জ্ঞানের সূত্র ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলেন।স্বচ্ছ স্ফটিকের অট্টালিকাও নির্মাণ করেছিলেন তিনি।ইতিহাসবিদদের মতে তিনি ছিলেন প্রাচীন সিরীয় বর্ণমালার আবিষ্কারক।

পবিত্র বাইবেলে তাকে বিরাট একজন শাসক ও প্রভাবশালী নবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাইবেলে তার জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে-

“আর ঈশ্বর সলোমনকে বিপুল জ্ঞান ও সূক্ষ্ম বুদ্ধি এবং সমুদ্র তীরস্থ বালুকার ন্যায় চিত্তের বিস্তীর্ণতা দিলেন।তাহাতে পূর্বদেশের সমস্ত লোকের জ্ঞান ও মিসরীয়দের যাবতীয় জ্ঞান হইতে সলোমনের অধিক জ্ঞান হইলো।”
(পবিত্র বাইবেল, রাজাবলি,১,৪: ২৯-৩৪)

কতিপয় গবেষকের মতে, পীথাগোরাস এবং সক্রেটিস ছিলেন হযরত সুলাইমান (আ.) এর ছাত্র। তার কাছ থেকেই তারা জ্ঞান আহরণ করেছিলেন।(সংক্ষিপ্ত)
লেখকঃ কলাম লেখক 

আরও পড়ুন