Ads

জোরুজালেমে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে হযরত ওমর (রা:) এর অনুভুতি

খলিলুর রহমান

খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর (রা:) যখন মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করার জন্য বের হচ্ছিলেন, সে সময় তার পরিহিত জামায় ১৭ (সতেরোটি) তালি লাগানো ছিল।
খলিফা ওমর (রা:) যখন তালি যুক্ত জামা পরিহিত অবস্থায় জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন, সাহাবাদের মধ্য হতে কেহ হযরত আলী (রা:) কে বললেন, ইয়া আলী! আপনি হযরত ওমর (রা:) কে বলুন…… অন্তত আজকের দিনে তালি যুক্ত কাপড় খুলে একটু ভালো কাপড় পরিধান করার জন্য। কারণ তিনি ইহুদী-খৃষ্টানদের দেশে যাচ্ছেন। তারা হয়তো আমিরুল মু’মেনীনকে দেখে বিরূপ মন্তব্য করতে পারে। তারা এই বলে তিরস্কার করতে পারে যে, মুসলমানগন তাদের খলিফার জন্য একজোড়া ভালো কাপড়ের ব্যবস্থাও করতে পারে নি ।

আপনি খলিফা ওমর (রা.)-কে বুঝিয়ে বলুন। সাহাবাদের পীড়াপীড়িতে হযরত আলী (রা.) কথাটি বলার জন্য হযরত ওমরের কাছে গেলেন, কিন্তু এমন কথা বলার সাহস পেলেন না। কারণ ওমর (রা.) এমনিতেই গরম! তারপরও এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে মুখটাই বা খুলবেন কীভাবে। অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু কোনভাবেই বলতে পারলেন না। ফিরে এলেন সাহাবাদের কাছে । নিজের অপারগতা প্রকাশ করলেন। হযরত আলী (রা:) বললেন…. ‘আমি যখন বলার জন্য খলিফা এর কাছে গিয়েছি তখন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।’ এবার সাহাবাগণ পরামর্শ করলেন, ‘তাহলে একথা খলিফার কাছে কে বলতে পারে?’ সকলেই খেয়াল পেশ করল, আম্মাজান আয়েশা (রা:) এবং হাফসা (রা:) বলতে পারবেন। সকলে মিলে হযরত হাফসা (রা:) এর কাছে গেলেন। হযরত হাফসা (রা:) বললেন…….আমি রাসূল (সা:) এর স্ত্রী এবং খলিফা ওমরের মেয়ে। কিন্তু আমার পিতাকে একথা বলার সাহস আমার নেই। আমি একথা বলতে পারব না। হযরত আয়েশা (রা.) বলতে পারবেন।

সাহাবায়ে কেরাম (রা:) হযরত আয়েশার কাছে দরখাস্ত করলেন। অতঃপর তিনি হযরত উমর (রা:) কে ডেকে পাঠালেন। হযরত ওমর (রা:) আম্মাজান আয়েশা (রা:) এর পয়গাম পাওয়ার সাথে সাথেই উপস্থিত হলেন।

ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ:) একটি গ্রন্থে লিখেছেন যে, হযরত ওমর (রা:) হযরত আয়েশা (রা.)-এর সামনে দোজানু হয়ে বসে পড়েন। আয়েশা (রা:) বললেন, ‘আমিরুল মুমিনিন! আপনি যেহেতু খ্রিস্টানদের রাজ্যে যাচ্ছেন। এই জন্য আপাতত এই তালিযুক্ত পোশাক পরিবর্তন করে অন্য একটি ভালো জামা পরিধান করুন ।’
হযরত আয়েশা (রা:) এর কথা শেষ হতে না হতেই খলিফাতুল মুমিনীন কেঁদে ফেললেন। আয়েশাকে বললেন,

‘আম্মা আপনি কি আমাকে রাসুল (সা:) এর থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন? আপনার কি রাসূলের সাথে কাটানো সেই দিনগুলোর কথা মনে নেই যে, দিনের-পর-দিন নবীজি (সা.) উপবাস থেকেছেন, তিন দিন পর্যন্ত নবী (সা:) চুলায় আগুন জ্বলেনি। হে আয়েশা! আপনার কি সেই দিনগুলোর কথা মনে নেই যে, নবী (সা.) তালি যুক্ত কাপড় পরিধান করেছেন। আম্মাজান ! ওমর এই ছেঁড়া-ফাঁড়া তালি যুক্ত পোশাক পরে যে স্বাদ অনুভব করে তা বুঝানো সম্ভব নয়। ওমর অন্যকিছুতে আর এমন স্বাদ অনুভব করে না’।

সিরাতের কিতাব সমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, খলিফা হযরত উমর (রা:) যখন রাসূল (সা:) এর অসহায়ত্বের কথা আলোচনা করতে ছিলেন, তখন হযরত আয়েশা এবং হযরত হাফসা (রা.) দু’জনেই অঝোরে কাঁদতে ছিলেন।
অতঃপর খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর (রা:) তালি যুক্ত কাপড় পরিধান করেই মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় করার জন্য বের হন।
হযরত ওমর (রা.) যখন জেরুজালেম শহরে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে। ২২ লক্ষ বর্গ মাইলের বিশাল সাম্রজ্যের খলিফার হাতে উটের রশি। উটের উপর বসে আছেন ভৃত্য। মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) লক্ষ্য করলেন খলিফার গায়ে অতি সাধারণ সতেরটি তালিযুক্ত জামা। উটের রশি ধরে টানছেন মুসলিম বিশ্বের খলিফা। আর ভৃত্য বসে আছেন উটের উপর। এটা দেখে রোমানরা কি মনে করবে!

এসব ভেবে তিনি বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আমরা এমন এক জায়গায় আছি, যেখানের লোকেরা চাকচিক্য পছন্দ করে। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য দেখে মানুষের মর্যাদার বিচার করে। তাই আপনি যদি একটু ভালো পোষাক পরতেন। তাহলে তা কতোই না উত্তম হতো ! হযরত ওমর (রা.) আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.) এর কথায় রেগে গেলেন। তাঁর বুকে আঘাত করলেন। আর বললেন…….. আমি তোমার পক্ষ থেকে এই কথাগুলো আশা করিনি। এরপর হযরত ওমর (রা.) বললেন,

“আমরা হচ্ছি সেই জাতি যাদের মহান আল্লাহ ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আমরা যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন উপায়ে সম্মান খুঁজি তাহলে মহান আল্লাহ আমাদের অসম্মানিত করবেন”

লেখকঃ কলাম লেখক ও ব্যাংকার

লেখকের প্রকাশিত লেখা-নারীর শব্দহীন কান্না

 

আরও পড়ুন