Ads

মসজিদ কথনঃ মসজিদের সাধারণ কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য (পর্ব-০১)

মায়মুনা প্রীতি জোয়ার্দ্দার

মসজিদ শব্দটার শাব্দিক অর্থ করলে দাঁড়ায় সেজদা দেওয়ার স্থান কিন্তু মসজিদের ব্যাপকতা কোনোভাবেই এত সরলীকরণ অর্থ থেকে বোঝা সম্ভব নয়। মসজিদ তো সেই পবিত্র স্থাপনা যা আমাদের প্রতিদিন পাঁচবার সাফল্যের দিকে আহবান করে,যেখানে মুসল্লীরা খুঁজে পান তাঁদের আত্মার খোরাক।যুগে যুগে মসজিদ মুসলমানের সামাজিক,রাজনৈতিক কখনোবা সামরিক কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে।মসজিদের সাথে জড়িয়ে আছে মুসলমানের হাজার বছরের ঐতিহ্য।মসজিদ তার ভূমিকায় যেমন ব্যাপক, রূপবৈচিত্র্যেও তেমন বিস্তৃত।

অঞ্চলভেদে অন্যান্য বিভিন্ন স্থাপত্যকলার পাশাপাশি মসজিদেরও কাঠামোগত পরিবর্তন দেখা যায়। ইসলামের প্রসারতার ফলে ইসলাম শুধু মানুষের মনেই জায়গা করে নেয়নি, ইসলাম জায়গা করে নিয়েছে মানুষের সমাজে,সংস্কৃতিতে,স্থাপত্যে।বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অনন্য অসাধারণ কিছু মসজিদ।মসজিদগুলোর গঠনে বৈচিত্র যেমন আছে তেমনি আছে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য যা মসজিদকে করে তুলেছে তাৎপর্যপূর্ণ এবং অনন্য।চলুন মসজিদের সাধারণ কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিই

মিনার
মসজিদ সংশ্লিষ্ট টাওয়ার,আরবি শব্দ মানারাহ থেকে বাংলায় মিনার হিসেবে পরিচিত। মসজিদের সিম্বোলিক ফিচার হিসেবে মিনারকে উল্লেখ করলে একটুও কম বলা হয় না৷ মিনারের কারণে অনেক দূর থেকেও একটা অঞ্চলের মসজিদের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। মিনার মাথা উঁচু করে গর্বের সাথে জানান দেয় তার অবস্থান। প্রাথমিকযুগে মিনার থেকেই ভেসে আসতো মুয়াজ্জিনের আজানের সুমধুর সূর। তবে মিনার মসজিদের কোনো আবশ্যিক অংশ না, বর্তমানে মাইকের কারণে মিনার তার কার্যকারিতা অনেকটায় হারিয়েছে। যার ফলে আধুনিক স্থাপত্যে আমরা মিনারবিহীন মসজিদ দেখতে পাই, মিনার হারিয়েছে তার ট্রাডিশনাল চেহারাও।

এখানে আমার মতটা বলি,মসজিদকে কখনোই মিনারবিহীন করা ঠিক না,নকশায় বৈচিত্র্যের বদলে ট্রাডিশনাল যে রূপ সেটাকেই ধরে রাখা উচিত। কারণ মিনারের উপস্থিতিই বাহ্যিকভাবে মসজিদকে অন্য স্থাপনার থেকে আলাদা করে তোলে,একটা অঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেমন সেই অঞ্চলের মিনার সংখ্যা দেখলেই আঁচ পাওয়া যায়, তাছাড়া মিনারের কারণে অনেক দূর থেকেই আপনি মসজিদের অবস্থানটা চিহ্নিত করতে পারবেন,তাই মিনারের ধর্মীয় বিশেষ গুরুত্ব না থাকলেও সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে।

সুলতান আহমেদ মসজিদের গম্বুজ ও মিনার, মসজিদটি ব্লু মস্ক হিসেবেও সমান পরিচিত,ইস্তাম্বুল,তুরস্ক

মিহরাব
মসজিদের অন্দরে এই অর্ধবৃত্তাকার অবতল অংশটি অর্থাৎ মিহরাব মসজিদ স্থাপত্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যা সবসময় কিবলামুখী দেওয়ালে অবস্থান করে এবং এখান থেকেই ইমাম সালাতের ইমামতি করেন।মিহরাবের এই অর্ধবৃত্তাকার নকশার এক বিশেষ গুরুত্ব আছে, এই নকশা ইমামের আওয়াজকে পেছনে প্রতিফলিত করতে সহায়তা করে।এই নকশাটা ইসলামিক আর্টে অনেক জনপ্রিয়,বিভিন্ন দেওয়ালে,টাইলসে,বইয়ের প্রচ্ছদে,অনেক সময় আমরা আমাদের জায়নামাজে এই মিহরাব আকৃতির নকশাটায় দেখতে পাই।

মিম্বার
মিম্বার হলো সেই মঞ্চ যা আমাদের আলোকিত করে যেখান থেকে ডাক আসে পরিবর্তনের। এখান থেকেই খতিব খুতবা প্রদান করেন। মিম্বারের অবস্থান মিহরাবের ডানপাশে।প্রাথমিক যুগের মসজিদের মিম্বারগুলো সাধারণত কয়েকধাপযুক্ত সিড়ির উপরে অবস্থান করতো এবং কোনো কোনো সময় মিম্বার প্রতিরক্ষা বলয় দিয়ে ঘেরা থাকতো যাকে আরবিতে মাকসুরাহ বলে।ইসলামের প্রাথমিক যুগে খলিফারা ইমামতি করতেন,খুতবা প্রদান করতেন, এইসময় যেন শত্রুপক্ষের কেউ অতর্কিত হামলা না করতে পারে একারণেই প্রাচীন মসজিদগুলোতে মাকসুরাহর দেখা পাওয়া যায়।

Mihrab a
সুলতান বারকুক মসজিদের মিহরাব ও মিম্বার,কায়রো,মিশর

গম্বুজ
একটা মসজিদে গম্বুজের ভূমিকাটাও মিনারের মতোই, ধর্মীয় গুরুত্ব নেই, কিন্তু মসজিদ স্থাপনায় সিম্বোলিক।মসজিদে গম্বুজ যে থাকতেই হবে এমন না কিন্তু গম্বুজ ছাড়া মসজিদকে ঠিক মসজিদ বলে মনে হয় না। তবে গম্বুজের অন্যধরনের একটা গুরুত্ব আছে,গম্বুজের কারণে মসজিদের ভেতরের আওয়াজ বৃদ্ধি পায়,কিছুটা এমপ্লিফাই করে।অনেক সময় মসজিদের নামকরণ গম্বুজের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে করা হয়। উদাহরণ তো আমাদের কাছেই আছে,বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ,যদিও এই মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা ষাটটি নয় বরং একাশিটি। আর গম্বুজ ছাড়া মসজিদের কথা বলতে গেলে আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম তো আছেই!
(চলবে)

এই সিরিজের পরবর্তী পর্বগুলোতে মসজিদ সম্পর্কে পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন!

লেখকঃ শিক্ষার্থী,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

এই ক্যাটেগরির প্রকাশিত জনপ্রিয় লেখা-

জোরুজালেমে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে হযরত ওমর (রা:) এর অনুভুতি

আরও পড়ুন