Ads

নারীদের উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান

।। মেহমেত গোরমাজ ।।

রাসূল (সা) বলেছেন, “জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুমিন নর নারীর জন্য ফরজ।” এখানে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। একটি সভ্যতা বা একটি উম্মত কখনোই একটি ডানা দিয়ে উড়তে পারে না। রাসূলে আকরাম (সা) মদীনাকে একটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেছিলেন। নারী এবং পুরুষ উভয়ই সেখানে একসাথে জ্ঞানার্জন করেছেন।

নারী ও পুরুষকে জ্ঞানের ক্ষেত্রে কখনোই বিভাজন করা যাবে না, কাউকে কোনো ধরনের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আমাদের পুরুষ আলেমের যতটুকু প্রয়োজন, মহিলা আলেমের ততটুকুই প্রয়োজন। যে জাতি তার নারীদেরকে মূর্খ বানিয়ে রাখে সেই জাতির দ্বারা কখনোই কোনো ভালো কাজ করা সম্ভব নয়। তাদের পক্ষে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ, মানুষ গঠনকারী, প্রজন্ম গঠনকারী হচ্ছে নারীগণ। যে জাতি মহিলাদের মূর্খ রাখবে, তাদের পরবর্তী প্রজন্মও মূর্খ হবে— এটাই তো স্বাভাবিক ।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নারী এবং পুরুষকে একই মূল থেকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিগত দিক থেকে নারী এবং পুরুষ সমান এবং তাদের মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য নেই। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করবো।’ তিনি কখনই বলেননি যে শুধুমাত্র পুরুষরা খলিফা হবে, নারীরা খলিফা হবে না।

পুরুষরা যতটুকু আল্লাহর খলিফা, নারীরাও ততটুকুই আল্লাহর খলিফা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন ওহী পাঠিয়েছেন সেটি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য পাঠাননি। সেটি তিনি নারীদের জন্যও পাঠিয়েছেন। ওহীর উদ্দেশ্যগত দিক থেকে নারীরাও আল্লাহর উদ্দেশ্য, পুরুষরাও আল্লাহর উদ্দেশ্য। পৃথিবীতে ‘আমর বিল মা’রূফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার’ তথা সৎ কাজের আদেশ প্রদান ও অসৎ কাজের নিষেধাজ্ঞা প্রদানের যে দায়িত্ব মানুষের উপর অর্পিত হয়েছে, সেই দায়িত্ব তিনি নারী-পুরুষ উভয়ের উপরই দিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনে ‘মুমিন নারী এবং মুমিন পুরুষ একজন আরেকজনের বন্ধু। একজন আরেকজনের সহযোগী। তারা একসাথে সত্যের আদেশ এবং অপকর্মের বিরোধিতা করবে’ (সূরা আত তাওবা)— এ কথাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) চারটি আইডিওলজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, শিরক, দাসত্ব, সাম্প্রদায়িকতা বা বর্ণবাদ ও জেন্ডারইজম তথা নারীকে ছোট করে দেখা। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কাউকে ছোট করে দেখা একটি চরম জাহেলি চিন্তা।

আরও পড়ুন-

নারীর জন্য সমঅধিকার নাকি নায্য অধিকার জরুরী ?

রাসূল (সা) এমন এক সময়ে এই সকল ভ্রান্ত আইডিওলজির মোকাবেলা করেছেন, যখন তারা কন্যাশিশুদেরকে জীবন্ত কবর দিতো। শুধু নারীদের সাথে কথা বলার জন্য মসজিদে নববীতে তিনি সপ্তাহের দিন ধার্য করেছিলেন। সেই দিন তিনি তাদেরকে ইসলাম শিক্ষা দিতেন। তিনি তাদেরকে লেখাপড়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হযরত আয়েশা (রা) সাহাবীদের মধ্যে সবচাইতে বড় আলেম ছিলেন। তিনি ২২২০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি কুরআনের কিছু কিছু আয়াত নাযিল হওয়ার সময় সাক্ষী হিসেবে ছিলেন। তিনি ছিলেন কিছু কিছু আয়াতের নাযিল হওয়ার উপলক্ষ্য।

পরবর্তীতে জেন্ডারইজম তথা ‘জিনছি’ চিন্তা মাঝেমধ্যে মুসলমানদের উপর আপতিত হয়েছে। এমনকি এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য তারা এ রকম বানোয়াট হাদীস পর্যন্ত সৃষ্টি করেছে— “তোমরা তাদেরকে লেখাপড়া শিক্ষা দিও না।” যে গ্রন্থ নাযিল হওয়া শুরুই হয়েছে ‘ইকরা’ (পড়) দ্বারা, সেই গ্রন্থ কীভাবে মুমিনদের অর্ধেককে বলতে পারে যে তোমরা পড়তে ও লিখতে পারবে না? এটা কীভাবে সম্ভব?

ইমাম বুখারীর উস্তাদদের মধ্যে নয় জন নারী উস্তাদ ছিলেন। এই নয় জন নারী থেকে তিনি রেওয়ায়েত গ্রহণ করেছেন। ইলমুল হাদীসে অনেক নারী রাবী রয়েছেন।

নারী হওয়ার কারণে তাদেরকে নিচু করে দেখা, খাটো করে দেখা, এ ধরনের যত কথা আছে এগুলো রাসূলুল্লাহর কথা হতে পারে না। নারীদের আকলে কমতি আছে, নারীদের আকলে ঘাটতি আছে, এ রকম কোনো রেওয়ায়েতই আল্লাহর রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। আল্লাহর রাসূলের (সা) নামে এ রকম কোনো রেওয়ায়েত নেই। ‘মহিলারা দ্বীনের ক্ষেত্রে অর্ধেক’— এ ধরনের কোনো রেওয়ায়েতকে আল্লাহর রাসূলের (সা) সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। এ সংক্রান্ত হাদীসসমূহকে তারা ভুল বুঝে, ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেদের স্বার্থের জন্য। এই সকল রেওয়ায়েতসমূহ ‘কুল্লি আসাস’ তথা সামগ্রিকতার মূলনীতির ভিত্তিতে বুঝতে হবে ।

আমি একজন মুহাদ্দিস। এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ‘নারীদের দ্বীনের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে’ এটা কখনোই বলতে পারবেন না। কেউ এমনটি বললে বুঝতে হবে, তিনি ঐ হাদীসকে আদৌ বুঝতে পারেননি।

আমাদের মেয়েদেরকে সকল ধরনের মন্দ বিষয় থেকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু একটি খারাপ থেকে রক্ষা করতে গিয়ে যেন তাদেরকে আমরা দশটি খারাপের মধ্যে নিপতিত না করি। সবচাইতে বড় খারাপ বিষয় হচ্ছে মূর্খতা। আমরা জাহালতকে কখনোই আমাদের নারীদের উপর চাপিয়ে দিতে পারি না।

লেখকঃ ইসলামী চিন্তাবিদ এবং তুরস্কের ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে  লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ  লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি ।  আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন