Ads

নারী অধিকার মানে কি শুধুই স্লোগান?

।। শিমুন লিজা ।।

“নারী অধিকার” মানে কি শুধুই স্লোগান? না কি বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু নিশ্চিত করার লড়াই? গতকাল রাতে আমি নিজে হসপিটালের ইমারজেন্সিতে ভর্তি ছিলাম। সবার মাঝে একধরনের ব্যস্ততা, উৎকণ্ঠা। এমন সময় পাশের বেডে একজন আপুর কান্না আমার মনোযোগ কাড়লো। জিজ্ঞেস করলাম, “আপু, কি হয়েছে? কাঁদছেন কেন?”

কান্নাভেজা গলায় তিনি বললেন—

“আমার আগেও দুইটা কন্যা সন্তান আছে। এবারও গর্ভে মেয়ে সন্তান। আমি ছয় মাসের গর্ভবতী। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুবই বিরক্ত। তারা এই সন্তানের জন্য চিকিৎসা খরচ করতে চায় না। বরং বলেছে আমাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে যাতে কম খরচ হয়। আমার ডায়াবেটিস আছে, শরীর দুর্বল। কিন্তু কোনো যত্ন নেই, চিকিৎসা নেই। এতোদিনে বাচ্চাটাকে ফেলে দেওয়া যেত না বলেই টিকে আছে। আপু, দোয়া কইরেন যেন মাইয়াডারে লইয়া বাঁচতে পারি…”

এই কান্নার শব্দ থেমে গেলেও আমার ভেতরের রাগ, ক্ষোভ আর অসহায়ত্ব কিছুতেই থামছে না।

আরেকটা ঘটনা শেয়ার করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হওয়া এক আপু। আপুর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। বিয়ের পর চট্টগ্রামের ধনী পরিবারে যোগ দেন। প্রথমদিকে চেম্বার, প্রাকটিস সবই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পরপর দুটি সন্তান হবার পর, সন্তানদের কোথায় রেখে অফিসে যাবেন—এই চিন্তায় কোনো সহযোগিতা না পেয়ে, শ্বশুরবাড়ির সহযোগিতা তো দূরের কথা, মা’ও পাশে থাকতে পারেননি।

অবশেষে সব ছেড়ে দেন। আজও কষ্ট করে বলেন, “তন্দ্রা, এত কষ্ট করে, এত পড়াশোনা করে, এত বড় রেজাল্ট—সবই কি শুধু বাড়ির কাজ আর চুপচাপ সহ্য করার জন্য ছিল?”এই দুইটা ঘটনা কি ব্যতিক্রম? না। এই গল্পগুলো প্রতিদিন আমাদের চারপাশে ঘটে। কিন্তু যারা নারীর অধিকার নিয়ে স্লোগান দেন, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ফেমিনিজম’ নিয়ে উচ্চকিত—তাদের কজন এগুলো নিয়ে কথা বলেন?

কজন ফেমিনিস্ট নারী বলেন—

প্রতিটি কর্মস্থলে যেন একটি ডে-কেয়ার সেন্টার থাকে।প্রতিটি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নারীর জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক গৃহবন্দী ও নির্যাতিত নারীদের জন্য সেফ হোম ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থা হোক।নারীর পরিবারে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন রোধে আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক। কই? কোথায় তাদের পদক্ষেপ? কোথায় তাদের প্রকৃত লড়াই?

আরও পড়ুন-

সমাজ কি সত্যিই চায় নারী চিন্তাশীল হোক?

বরং আমরা দেখি, কিছু তথাকথিত নারী অধিকারের কর্মী এমনসব ‘অধিকার’ চায়—

রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে ধূমপানের স্বাধীনতা, বিবাহপূর্ব যৌ*নাচারকে স্বাধীনতা বলে প্রমোট করা, ইসলামী মূল্যবোধকে ‘রক্ষণশীলতা’ বলে গালি দেওয়া।

প্রশ্ন জাগে—এটা কি আসলেই নারী অধিকার?

আমার কাছে নারী অধিকার মানে—

একজন নারী যেন শুধু নারী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে বাঁচতে পারে। তার মৌলিক চাহিদা—চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান—সবকিছুতে যেন মর্যাদার সাথে সুযোগ পায়। সে যেন স্বামীর বাড়ি কিংবা নিজের বাড়ি—কোথাও কারও লাঞ্ছনার শিকার না হয়। সে যেন গর্ভে মেয়ে সন্তান ধারণ করায় ‘অপরাধী’ হয়ে না ওঠে।সে যেন সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেও নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

এই অধিকার নিশ্চিত করাই আসল লড়াই। এই দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, সমাজের প্রতিটি সচেতন মানুষের। নারীর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে হলে আগে এই মৌলিক জায়গাগুলোতেই দাঁড়াতে হবে।

না হলে “নারী অধিকার” শুধু স্লোগানেই থেকে যাবে, বাস্তবে তা হবে আরেকটি নির্লজ্জ ভণ্ডামি।

লেখকঃ ইসলামী বিষয়ে কলাম লেখক

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন