।। শিমুন লিজা ।।
বাংলাদেশে নারী অধিকার সংস্কার কমিটি সম্প্রতি একটি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। যদিও পুরো বিষয়টি এখনও প্রকাশ্যে আসেনি, তবে মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবনায় মুসলিম পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের প্রসঙ্গ রয়েছে। এই ঘোষণার পর থেকেই সামাজিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে—এই সংস্কারের আওতায় যাদের জীবন সরাসরি প্রভাবিত হবে, সেই নারীদের কণ্ঠ কোথায়?
বাংলাদেশের এক বিশাল সংখ্যক নারী পর্দানশীল। কেউ বোরকা পরেন, কেউ হিজাব। তাদের অনেকেই মাদরাসায় পড়েছেন বা ধর্মীয় জ্ঞানচর্চায় যুক্ত। তারা ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে জীবনযাপন করেন, এবং মুসলিম পারিবারিক আইন—যেমন বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ইত্যাদি—তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই সংস্কার-কমিটির সদস্যদের মধ্যে এমন কোনো নারীর উপস্থিতি নেই, যিনি হিজাব পরিধান করেন, কিংবা যিনি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত।
প্রশ্ন উঠছে—এই নারীরা কি দেশের নারী নন? তারা কি নিজেদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তা প্রকাশের অধিকার রাখেন না? নারী অধিকার যখন প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে এসে দাঁড়ায়, তখন একটি গোষ্ঠীর ভেতরেই আরেকটি গোষ্ঠী উপেক্ষিত হয়ে পড়ে।
যেখানে একজন যুবক হিজাব সম্পর্কে মন্তব্য করলে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়, সেখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গঠিত একটি কমিশনে হিজাবি বা মাদরাসা-পড়ুয়া নারীর স্থান না থাকা যেন কোনো আলোচনার বিষয়ই নয়। এই দ্বিচারিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজের তথাকথিত “উন্নত” গোষ্ঠী প্রায়ই বিশ্বাস করে তারাই ঠিক জানে কোনটা সবার জন্য ভালো। এই মনোভাব আসলে একধরনের জ্ঞানগত দমননীতি—epistemic violence—যেখানে একটি শ্রেণির অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস ও বুদ্ধিবৃত্তিকে অগ্রাহ্য করে অপর শ্রেণির মতামতকে একমাত্র মান্য সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আরও পড়ুন-
নারীর মর্যাদা ও আধুনিক বিভ্রান্তিঃ ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক বাস্তবতা
তথাকথিত সংস্কার যদি হয় প্রতিনিধিত্বহীন, বিশ্বাসবিচ্ছিন্ন ও কণ্ঠহীন, তবে তা সংস্কার নয়, বরং আধিপত্যের নতুন রূপ। যারা সমাজের প্রান্তে থেকে পর্দার আড়ালে থেকেও পূর্ণ মর্যাদায় জীবন যাপন করেন, তাদের কথা না শুনে, তাদের বিশ্বাসকে অস্বীকার করে নারীর ‘অধিকার’-এর নাম নিয়ে যা কিছু হয়, তা আসলে নারীত্বের প্রকৃত বৈচিত্র্য ও বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে।
একটি সমাজের উন্নয়ন তখনই টেকসই হয়, যখন সেই সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা ও জীবনচর্চা মর্যাদা পায়। শুধু এক শ্রেণির ভাষ্য দিয়ে সকল নারীর ভবিষ্যৎ রচনা করা হলে, তা হবে অবিচারের আরেকটি সূক্ষ্ম, নীরব রূপ।
লেখক পরিচিতিঃ শিমুন লিজা একজন কলমসৈনিক, যিনি সমাজ, নারীর অবস্থান এবং ইসলামিক মূল্যবোধ নিয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন। মানবিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতার মিশেলে তিনি পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে আগ্রহী।
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১)
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।