Ads

পর্দাহীনতা আধুনিকতার লেবাসে পশুত্বের উল্লাস

।। আলী ওসমান শেফায়েত ।।

আধুনিকতার সংজ্ঞা আজ বড়ই ঘোলাটে। পোশাকের স্বল্পতা আর শরীর প্রদর্শনের অবাধ ছাড়পত্রকে যেন এক শ্রেণির মানুষ আধুনিকতার চর্চা হিসেবে ধরে নিয়েছে। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। পর্দাহীনতা আধুনিকতা নয়, বরং এটি আধুনিকতার লেবাসে পশুত্বের উল্লাস। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মানুষ পোশাক পরিধান করতে শিখেছে শালীনতা ও আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য। সেই ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে যারা শরীরকে পণ্য বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে, তারা আসলে নিজেদের পশু প্রবৃত্তিকেই উস্কে দিচ্ছে।

আধুনিক বিজ্ঞান ও মনস্তত্ত্বও এই ধারণাকে সমর্থন করে না। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের সৌন্দর্য তার ব্যক্তিত্বে, তার জ্ঞানে, তার রুচিতে। শরীর প্রদর্শনের মাধ্যমে সাময়িক দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেলেও, তা স্থায়ী সম্মান বা ভালোবাসা এনে দিতে পারে না। বরং, এটি বিপরীত লিঙ্গের মনে কামনা ও লালসার জন্ম দেয়, যা সমাজে নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশকে নষ্ট করে।

তথাকথিত আধুনিকতার ধ্বজাধারীরা প্রায়শই ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলেন। নিশ্চয়ই একজন মানুষের নিজস্ব রুচি ও পছন্দের স্বাধীনতা থাকা উচিত। কিন্তু সেই স্বাধীনতা যখন অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়, যখন তা সামাজিক মূল্যবোধ ও শান্তির পরিপন্থী হয়, তখন তাতে লাগাম টানা জরুরি। পর্দাহীনতার নামে যখন নারী নিজেকে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির সামনে উপস্থাপন করে, তখন সে প্রকারান্তরে নিজেকে দুর্বল ও ভোগ্যপণ্যে পরিণত করে। এতে নারীর সম্মান যেমন ভূলুণ্ঠিত হয়, তেমনি পুরুষের মধ্যেও নারীকে কেবল ভোগের বস্তু হিসেবে দেখার মানসিকতা তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুন-

প্যারেন্টিং কী, কেন এবং কীভাবে?

আমরা ভুলে যাই, আধুনিকতার প্রকৃত ভিত্তি জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, শিল্পকলা আর মানবিক মূল্যবোধের উন্নতিতে। একটি সমাজ কতটা আধুনিক তা বিচার করা হয় সেখানকার মানুষের চিন্তাভাবনার প্রসারতা, নারীর প্রতি সম্মান, আইনের শাসন এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানের ওপর ভিত্তি করে। পোশাকের স্বল্পতা বা শরীর প্রদর্শন কখনোই একটি আধুনিক সমাজের পরিচায়ক হতে পারে না। বরং, এটি একটি অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে বাহ্যিক চাকচিক্য আর ক্ষণিকের উত্তেজনাই মুখ্য হয়ে ওঠে।

আজকের সমাজে তথাকথিত আধুনিকতার নামে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, তা আদতে নারীকে দুর্বল ও অরক্ষিত করে তুলছে। বিজ্ঞাপনের ঝলমলে দুনিয়া থেকে শুরু করে ফ্যাশনের নামে শরীর প্রদর্শনের অসুস্থ প্রবণতা – সর্বত্রই নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই ফাঁদে পা দিয়ে অনেক নারী মনে করছেন এটাই বুঝি আধুনিকতা, এটাই বুঝি তাদের মুক্তি। কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন না, তারা আসলে এক গভীর অন্ধকার গহ্বরের দিকে ধাবিত হচ্ছেন, যেখানে তাদের সম্মান, নিরাপত্তা এবং আত্মমর্যাদা বিপন্ন।

আসুন, আমরা আধুনিকতার ভুল ব্যাখ্যা পরিহার করি। পোশাকের স্বল্পতাকে নয়, বরং জ্ঞান, বিবেক ও মানবিক গুণাবলীকে আধুনিকতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করি। নারীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করাই হোক আমাদের প্রধান লক্ষ্য। পশুত্বের উল্লাস নয়, বরং শালীনতা ও সৌন্দর্যের সুস্থ সমন্বয়েই নিহিত রয়েছে একটি আধুনিক ও উন্নত সমাজের পরিচয়।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।

ইমেইল : [email protected]

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

 

 

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন