Ads

হিজাব মুসলিম নারীর শালীনতার মুকুট

।। মহীয়সী ।।

‘হিজাব’ মুসলিম নারীর শালীনতার মুকুট। মুসলিম নারীর আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধির তলোয়ার। জুলাইয়ের স্ফূলিঙ্গের আন্দোলনে হিজাবী নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। হিজাবী মানেই ঘরকোণে নয়, হিজাব মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের পোশাক। কিন্তু  পোশাকের স্বাধীনতা যেখানে মূখ্য, হিজাবী নারীরা সেখানে গৌণ। এই পোশাক ও পরিহিতাকে সমাজ- রাষ্ট্র উভয়ের সম্মান জানানো, দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন, হিজাবীদের নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূরের পাশাপাশি পোশাক বৈষম্যের শিকার নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ————–  নাদিয়া আফরোজ

হিজাব মুসলিম নারীর ঈমান

নিশাত আর লিমা

 

হিজাব শুধুমাত্র এক টুকরো কাপড়ই নয়, হিজাব মুসলিম মেয়েদের শালীনতা রক্ষা আর সৌন্দর্য ঢাকার অবলম্বন ।  হিজাব মুসলিম নারীদের ওপর সৃষ্টিকর্তার দেয়া ফরজ বিধান। আল্লাহ তায়ালা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন, তারা যেন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজেদের চাদরের এক অংশ মুখের উপর নামিয়ে রাখে আর চলার জন্য শুধুমাত্র চোখ খোলা রাখে। পরিচয় শনাক্তকরণের নাম করে নারীকে বাধ্য করা হচ্ছে হিজাব খুলতে। অথচ আধুনিক যুগে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করে খুব সহজেই পরিচয় শনাক্তকরণের কাজটি করা যায়। হিজাবের মাধ্যমে নারীর সৌন্দর্য ঢাকা থাকে, যার ফলে পুরুষের লোলুপদৃষ্টি আর ইভটিজিং এর মতো ঘটনাসমূহ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। হিজাব শুধুমাত্র নিজের আব্রু রক্ষার জন্য নয়, তার সাথে একজন পুরুষের কামনার দৃষ্টি থেকে নারীর সৌন্দর্যকে হেফাজত করারও মাধ্যম ।

শিক্ষার্থী, নিশাত আর লিমা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

শিক্ষাঙ্গনে হিজাবীদের হেনস্তা বন্ধ হোক

মালিহা রহমান তাসনিয়া

 

হিজাব মুসলিম নারীর সম্মানের প্রতীক। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হয়েও বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের বোনদের এখনো হয়রানি হতে হয় নিকাব ইস্যুতে। শিক্ষাঙ্গন মেধা বিকাশের ক্ষেত্র, চিন্তা তৈরির কারখানা। কাজেই একজন নারীকে বিচার করতে হলে তা হওয়া উচিৎ তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী। পোশাকের স্বাধীনতা  যদি বাকি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হয়,তবে নিকাব পরিধানকারীর জন্য কেন তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিকাব পরে ক্লাস করা, ভাইভা বোর্ডে বা হলে পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে হিজাব, নিকাব খোলা নিয়ে হেনস্তার করা হয়। শ্রেণি উপাস্থাপনাতে  ভালো প্রস্তুতির পরও নিকাব ইস্যুতে নম্বরে বৈষম্য করা হয়। তাই নিরাপত্তার অজুহাতে মুসলিম নারীর অধিকার লংঘনের এ অনুশীলন বন্ধ করা জরুরি।

শিক্ষার্থী,মালিহা রহমান তাসনিয়া, প্রয়াস ইনস্টিটিউট অফ স্পেশাল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ বিইউপি

 

হিজাব  মুসলিম নারীর শালীনতার প্রতীক

ইসাবাহ নুফায়ের

 

হিজাব মুসলিম নারীদের  ব্যক্তিত্বের বাহক । সমাজে অনেক নারী হিজাবকে স্বাধীনতা, আত্মপরিচয় ও গর্বের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছেন, যা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তারা হিজাব পরে কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। হিজাব কোনো বাঁধা নয়  বরং নারীর শক্তি ও মর্যাদার প্রতিফলন। হিজাব নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শক্তিশালী করে। অনেক নারী হিজাব পরেও চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষিকা, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশায় সফল হচ্ছেন। হিজাব শুধু ধর্মীয় অনুশীলন নয়, এটি নারীর জন্য এক আত্মমর্যাদার ঢাল, যা তাকে আরও সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ করে তোলে। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাজে হিজাব পরিহিত নারীদের প্রতি আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা জরুরি।

শিক্ষার্থী,ইসাবাহ নুফায়ের,আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়

 

হিজাবী মানেই জঙ্গি নয়

তৌফিকা জাহান তীব্র

 

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কতৃর্ক হিজাব পরিধান মৌলিক বিধান যা মুসলিম নারীদের জন্য নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাতের মতোই ফরয। কিন্তু মুসলিম নারীরা এই বিধান পালন করতে গিয়ে জঙ্গি বা উগ্রবাদের ট্যাগের শিকার হয়।

হিজাব কখনোই উগ্রবাদ বা সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত নয়। ইসলাম শান্তি ও সহানুভূতির ধর্ম এবং হিজাবের উদ্দেশ্য হলো নারীদের শালীনতা এবং সম্মান বজায় রাখা। ইসলাম কোনো অবস্থাতেই সহিংসতা বা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের অনুমোদন দেয় না।

হিজাব পরিধান করাটা নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা ইসলামিক বিধান অনুসারে আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্য এবং শালীনতা প্রকাশের একটি উপায়। এটি একটি ধর্মীয় কর্তব্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি অন্যতম উপায়।

শিক্ষার্থী, তৌফিকা জাহান তীব্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

টেলিভিশনের পর্দায় হিজাব কেন স্বাভাবিক নয়?

ফারহা খানম

 

বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে হিজাব পরিহিত নারীদের উপস্থিতি এক শব্দে বলা চলে ‘বিরল’। হিজাব শুধু ইসলামী শরিয়তের একটি প্রতীকই নয় বরং এটি বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্কৃতিও বটে। তাহলে হিজাবকে কেন দেশের ব্রডকাস্ট ট্রান্সমিশন মিডিয়াগুলোতে করে রাখা হয়েছে সংকীর্ণতার প্রতীকস্বরূপ? প্রচলিত সৌন্দর্যের মানদণ্ড কিংবা দর্শকপ্রিয়তার অজুহাতে হিজাবধারীদের প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করা হয়। অথচ, যোগ্যতার প্রশ্নে তাঁরা কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা-বাণিজ্য সকলক্ষেত্রে তাঁরা সারা বিশ্বে গৌরবের সাথে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বৈচিত্র্য ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গণমাধ্যম হোক সবার, কেবল নির্দিষ্ট পোশাকধারীদের নয়।

শিক্ষার্থী,ফারহা খানম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীঃ নাদিয়া আফরোজ, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

বোরকার প্রয়োজনীয়তা ও  গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরতে গিয়ে বোরকা প্রবন্ধের শুরুর দিকে তথাকথিত আধুনিকাদের কটাক্ষ করে বেগম রোকেয়া বলেন,

“আমি অনেক বার শুনিয়াছি যে আমাদের “জঘন্য অবরোধ প্রথা” ই নাকি আমাদের উন্নতির অন্তরায় । উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত ভগ্নীদের সহিত দেখা সাক্ষাৎ হইলে তাঁহরা প্রায়ই আমাকে “বোরকা” ছাড়িতে বলেন । বলি উন্নতি জিনিসটা আসলে কি? তাহা কি কেবল বোরকার বাহিরেই থাকে? যদি তাই হয় তাহলে জেলেনী, চামারিনী, ডুমিনী, প্রভৃতি স্ত্রীলোকেরা আমাদের অপেক্ষা অধিক উন্নতি লাভ করিয়াছে ।”

[বোরকা, মতিচূর, প্রথম খণ্ড (পৃষ্ঠাঃ ৫৯, রোকেয়া রচনাবলী)]

বোরকা প্রবন্ধের শেষে বেগম রোকেয়া এভাবে ইতি টেনে বলেছেন-

“যাহা হউক,পর্দা কিন্তু শিক্ষার পথে কাঁটা হইয়া দাঁড়ায় নাই । এখন আমাদের শিক্ষয়িত্রীর অভাব । এই অভাবটি পূরণ হইলে এবং স্বতন্ত্র স্কুল কলেজ হইলে যথাবিধি পর্দা রক্ষা করিয়াও উচ্চশিক্ষা লাভ হইতে পারে । প্রয়োজনীয় পর্দা কম করিয়া কোন মুসলমানই বোধ হয় শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রসর হইবেন না । আশা করি, এখন আমাদের উচ্চশিক্ষা-প্রাপ্তা ভগিনীগণ বুঝিতে পারিয়াছেন যে বোরকা মোটের উপর মন্দ নহে ।”

[বোরকা, মতিচূর, প্রথম খণ্ড (রোকেয়া রচনাবলি, পৃষ্ঠাঃ ৬৩)]

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যার মঙ্গল চানতাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন। (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন