Ads

ইসলামে বিধবা নারীর যেমন অধিকার রয়েছে

ড. সাজেদা হোমায়রা

আমাদের সমাজে কয়জন লোক বিধবা বিয়ে বা ডিভোর্সিদের বিয়ে নিয়ে কথা বলেন? যতোটা কথা বলতে শোনা যায় ছেলেদের মাসনা, সুলাসা, রুবায়া (বহু বিবাহ) নিয়ে? আমাদের সমাজে কত অজস্র বিধবা মেয়ে, ডিভোর্সি মেয়ে আছে, যারা প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করে। তাদের জীবন কতোটা স্ট্রাগলের হয়, তা নিয়ে ক’জনই বা ভাবেন?

অনেক সময়ই কনজুগাল লাইফ অশান্তিময় হয়ে উঠে, সেক্ষেত্রে ডিভোর্সের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাধ্য হয়েই নিতে হয়। যদিও ডিভোর্স ইসলামে অনুমোদিত কম পছন্দনীয় কাজ। আবার কোনো মেয়ে হয়তো মধ্যবয়সে স্বামীহারা হয়েছেন, শুরু হয় তার একাকি জীবনযাত্রা অথবা এক সংগ্রামী জীবন।

আমাদের সমাজে ডিভোর্সি, বিধবা এবং বয়স হয়ে যাওয়া অবিবাহিত মেয়েদের খুবই অন্য চোখে দেখা হয়। এই তিন শ্রেণির মেয়েদের প্রতি আচার-আচরণ এমনভাবে করা হয়, মনে হয় তারা যেনো জীবনের সবচেয়ে জঘন্য পাপ কাজটি করেছে। তাদের ভবিষ্যত, তাদের ইচ্ছা, তাদের রুচি এগুলো নিয়ে কেউই ভাবে না। না ভাবে তাদের পরিবার, না ভাবে তাদের আশেপাশের মানুষ। এক মানবেতর জীবন কাটাতে হয় তাদের।

আমাদের উপমহাদেশীয় মুসলিমরা মেয়েদের একাধিক বিয়েকে খুব নিচু দৃষ্টিতে দেখে। তাদের মতে, বিধবা মেয়েরা কেন বিয়ে করবে? তাদের কাজ হলো, তারা তাদের স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে জীবন পার করে দেবে।

ইসলাম বিধবা ও ডিভোর্সি নারীকে শুধু বিয়ের অনুমতি দেয়নি বরং উৎসাহিতও করেছে। স্বামীর মৃত্যু বা ডিভোর্স হওয়ার পর নির্ধারিত সময় ইদ্দত পালন করার পর তারা নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কেউ তাকে বাধ্য করতে বা বাধা দিতে পারবে না।
রাসূল সা. এর যুগে মেয়েরা বিধবা বা ডিভোর্সী হলে পুনরায় বিয়ে করতেন এবং একে সম্মানের চোখেই দেখা হতো। আয়েশা রা. ছাড়া রাসূলুল্লাহ সা. এর সকল স্ত্রী ছিলেন বিধবা বা ডিভোর্সী। রাসূলের (সা.) যুগে বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা নারী সাহাবীদের আলাদা সময়ে একাধিক বিয়ে হয়েছে।

মহিলা সাহাবী আতিকা বিনতে যায়েদ রা. এর নাম শুনেছেন? আশারায়ে মুবাশশিরা সাহাবী সাঈদ ইবনে যায়েদ রা. এর বোন। আতিকা রা. এর পাঁচজন সাহাবীর সাথে বিয়ে হয়েছিল এবং একে একে পাঁচজন স্বামীর প্রত্যেকেই শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এতোজন শহীদের স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য আর কোনো নারীর নেই। তার তৃতীয় স্বামী ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এবং পঞ্চম স্বামী ছিলেন নবী সা. এর নাতি হযরত হোসাইন রা.।

আসমা বিনতে উমাইস রা. এর তিনটি বিয়ে হয়েছিলো। ঐতিহাসিক মূতার যুদ্ধে তাঁর প্রথম স্বামী জাফর ইবনে আবি তালিব রা. শহীদ হন। আসমা রা. হারান তাঁর প্রথম স্বামীকে। স্বামীকে হারানোর কষ্ট তাঁকে বেশ কয়েকদিন শোকাচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। জাফর রা. এর ঘরে তাঁর তিনজন ছেলে ছিলো। জাফর রা. এর ইন্তেকালের ছয় মাস পর আবু বকর রা.এর সাথে আসমার (রা:) বিয়ে হয়। বিয়েটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা. পড়ান। তাঁদের ঘরে একজন ছেলে ছিলো।

রাসূলুল্লাহ সা. এর ইন্তেকালের পর আবু বকর রা. খলিফা হন। খলিফা হবার প্রায় ২ বছরের মধ্যে আবু বকর রা. ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয়বারের মতো আসমা রা. বিধবা হন। আসমা রা. দুইবার বিধবা হবার পরও তৃতীয়বার তাঁর বিয়ে হয়। এবার তাঁর স্বামী হলেন ‘আল্লাহর সিংহ’ নামে খ্যাত আলী ইবনে আবি তালিব রা.। আলী রা. এর আপন ভাই ছিলেন আসমা রা. এর প্রথম স্বামী জাফর ইবনে আবি তালিব রা.।

বিধবা এবং ডিভোর্সি মেয়েদেরকে তাদের অনুমতিসাপেক্ষে বিয়ে দেয়া তার আশেপাশের মানুষেরই দায়িত্ব। একটি ইসলামি সমাজে বিধবা এবং ডিভোর্সী নারীরা ‘অপাংক্তেয়’ নন। একজন নারীর সামাজিক, মানসিক, শারিরীক এবং আর্থিক সুরক্ষার জন্য এটাই সর্বোত্তম ব্যবস্থা।

ইসলামে বিয়ে, ডিভোর্স পরবর্তী বিয়ে, বিধবা বিয়ে – এগুলো সহজ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে এগুলোকে কঠিন করে রাখা হয়েছে। অথচ যেটা প্রয়োজন ছিলো সেটা হচ্ছে বিধবা বিয়ে/ডিভোর্স পরবর্তী বিয়ে- এ ধরনের বৈধ বিষয়গুলোকে সহজ করা আর বিয়ে-বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে নেতিবাচক হওয়া।

শান্তি ও সুশৃঙ্খল দাম্পত্য জীবনের অনন্য মাধ্যম বিয়ে। প্রায়ই দেখা যায়, অল্প বয়সে কোনো নারী বিধবা হলে কিংবা ডিভোর্স হলে তাকে আবার বিয়ে দেওয়ার কথা কেউ ভাবে না। ভাবে না তার নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্বের কথা। অথচ তারও নিজের জীবন বলে কিছু আছে। এগুলো নিয়ে সামাজিকতার নামে প্রচলিত কুসংস্কার ভেঙে নিজ নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সমাজকে ভাবাটা খুব প্রয়োজন। আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন!

লেখকের এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বই

লেখকঃ সাহিত্যিক, কলাম লেখক ও ‘সেরা মানুষ ছিলেন যারা’ এর লেখক

 

 

 

 

 

 

 

লেখকের প্রকাশিত অন্য লেখা-

বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক সভ্যতা বিলীনের মারাত্মক পদক্ষেপ

আরও পড়ুন