Ads

মহিলাদের জ্ঞান অর্জন

অধ্যাপিকা মৌলুদা খাতুন মলি 

প্রীতি-লতা দুই জমজ মেয়ের পর এক ছেলে সন্তান হওয়ায় হামেদ চাচার আনন্দ দেখে কে!! ঘটা করে গরু দিয়ে আকিকা করে তিনি ছেলের নাম রাখলেন- ‘সম্পদ’।প্রীতি-লতার যখন বিয়ে হয়- ওদের বয়স তখনো বারো পেরোয়নি। প্রাইমারী পাস করে সবে হাই স্কুলে যাতায়াত শুরু করেছে তারা। ভাল খানদানি ঘর-বর দেখে হামেদ চাচা দুই মেয়েকেই এক অনুষ্ঠানে বিয়ে দিয়ে দিলেন।

চাচার ধারনা- মেয়েদের অত লেখাপড়া শিখে লাভ কি ? যাবেতো পরের ঘরে। কামাই করে খাওয়াবে তাদের ছেলে- সম্পদ । তাই, একমাত্র ছেলে ‘সম্পদ’কে নিয়ে চাচা-চাচির আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। ছেলেকে তারা বিলাতফেরত ব্যারিস্টার বানাবেন। ছেলের পেছনে হামেদ চাচা কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালতে লাগলেন। কিন্তু সব টাকা পানিতে পড়তে লাগলো। এবার তিনি শহর থেকে বেশি বেতনে শিক্ষক এনে বাসায় রাখলেন। শিক্ষক সম্পদের পড়াশুনার দিকে না তাকিয়ে, তাস খেলার পার্টনার হলো।

কয়েক বছর অনেক চেষ্টা তদবিরের পর- সম্পদ কোনোমতে সেকেন্ড ডিভিশনে এসএসসি পাশ করে মদ-জুয়ার আসরে এক্কেবারে পার্মানেন্ট হয়ে গেল। এতদিন চুপিচুপি বাড়ির বাইরে খেলত। এখন প্রকাশ্যে নিজের ঘরে খেলে। উটকো নতুন নতুন সাংগো-পাংগো বাড়ি আসা শুরু করলো। অবস্থা ক্রমেই বেগতিক দেখে চাচা-চাচি ‘সম্পদ’কে বিয়ে দিতে চাইলেন। যেই কথা সেই কাজ। ঘরে নতুন বউ এলো- ‘চন্দনা’। গরিবের মেয়ে চন্দনা যেমন সুন্দরি- শিক্ষিতা; তেমনি নামাজি-পর্দানশীন। চাচা-চাচির আবার আনন্দ দেখে কে!!

পাড়া-পড়শি কানাঘুষা করতে লাগলো–“আহারে! জেনেশুনে এই নেশাখোরের সাথে এমন সুন্দরি মেয়েকে বিয়ে দিল কে? বিয়ে টিকবে তো? শুধু মেয়েটার জীবন নষ্ট”।ক’দিনেই চন্দনার কাছে সম্পদের চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কিন্তু ‘সবই ভাগ্যের দোষ’ বলে হাল ছাড়ার মতো মেয়ে চন্দনা নয়। সেও নাছোড়বান্দা। স্বামীকে সে উচ্চশিক্ষিত করে, সুপথে আনবেই…। শুরু হলো চন্দনার চিকিৎসা-‘জ্ঞান থেরাপি। রোজ শিক্ষামূলক ইসলামিক গল্প বলা, বই পড়ে শোনানো- বোঝানো ইত্যাদি।
‘শ্রম- সাধনা কখনো বৃথা যায়না’।

ধীরেধীরে শুরু হলো চন্দনার ‘জ্ঞান সাধনা’র বাগানে অংকুর গজানো। তারপর একদিন লতা-পাতা-ডালপালা-শাখা-প্রশাখায় ভরে গেল স্বপ্নের বাগান..!! চন্দনা সাকসেসফুল!!

ইসলামে- নারী-পুরুষ উভয়েরই জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব যেমন অত্যন্ত বেশি, তেমনি জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে পড়াশুনার বিকল্প কিছু নেই। যে ব্যক্তি যত বেশি পড়াশুনা করবে- নিশ্চয়ই তার জ্ঞানের পরিধি ততই বাড়বে। এ বিশ্বজগতে আল্লাহ্‌ পাকের অসংখ্য নিদর্শন আছে। কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই তা বুঝতে পারে, সাধারণ কেউ নয়।

আমরা জানি- রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, ‘পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক : ১)

ভেবে দেখুন,ইসলামের মৌলিক বিষয়- ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা কিন্তু পরে- পর্যায়ক্রমে এসেছে। প্রথম ওহি- ‘পড়ো’ অবতীর্ণ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে ইসলামিক স্কলাররা বলেন– কেবলমাত্র পড়াশুনা বা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই মানবজাতিকে সভ্য করা সম্ভব।

তাই ইসলামে পড়া বা জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম।
“একবার নবী মুসা (আ.) বনী ইসরাইলের এক সমাবেশে কথা বলছিলেন। এসময় তাঁকে প্রশ্ন করা হল,
“মানুষের মধ্যে বর্তমানে কে সর্বাধিক জ্ঞানী?”
মুসা (আ.) উত্তরে বলেন,
“আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী।”
আল্লাহ পাক তাঁকে বললেন,
“দুই সাগরের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা (খিজির আ.) রয়েছে, যে তোমার থেকেও জ্ঞানী।”
মুসা (আ.) তখন তাঁর সাথে দেখা করতে আগ্রহী হলেন।
কুরআনুল কারীমে হযরত মুসা (আ.) ও হযরত খিজির (আ.) এর এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যদিও এটি খুবই কমন একটি ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনা থেকে যে সত্য সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়- তা হলো, আল্লাহ পাক বান্দাকে যে জ্ঞান দান করেছেন তা অতি সামান্য । একেক ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক একেক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছেন।
মুসা আ. নবি হয়েও তিনি জ্ঞান অন্বেষণে বেড় হয়েছিলেন।

অথচ- দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে- আমরা কেউ কেউ (সবাই না) এমন আছি- যারা সামান্য পড়াশুনা করেই ভাবি- আমি পৃথিবীর অনেককিছু জানি। আমার মতো বিজ্ঞ জগতে হাতে গোনা। এ ধারণা ভুল- হাস্যকর। আসলে আমরা এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি জগতের তেমন কিছুই জানিনা। যা জানি- তা অতি নগণ্য। জানতে হলে- আমাদের জ্ঞানী মানুষের শরণাপন্ন হতে হবে, বেশি বেশি বই পড়তে হবে, চিন্তা-গবেষণা করতে হবে। বিভিন্ন উপায়ে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
★”নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে”।
(সূরা আল ফাতির : ২৮)
★ “নবী হে আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না- তারা কি সমান হতে পারে?”
(সূরা জুমার : ৯)।
# “প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।” (তিরমিযি)

“জ্ঞান সাধকের জন্য আসমান ও জমিনের সবকিছুই ক্ষমা প্রার্থনা করে”।
(আবু দাউদ ও তিরমিযি)।

জ্ঞানীর কলমের কালিকে শহীদের রক্তের চেয়ে দামি মনে করা হয়।পরিশেষে সবার প্রতি- বিশেষ করে নারীদের প্রতি আহবান-আসুন, বেশি বেশি বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নিজেকে জানি, জ্ঞান ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করি। কুরআন- হাদিস অনুযায়ী জীবন গড়ি।আমিন।

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলেজের শিক্ষক 

আরও পড়ুন

মেয়েদের লেখাপড়া এবং চাকরি

আরও পড়ুন