Ads

নারীর প্রতি বিদ্বেষ ছেড়ে সহমর্মিতার হাত কবে বাড়াবেন?

।। মনসুর আলম ।।

শুধু বিয়ে করার সময় একজন গৃহস্থের বিপরীতে চারজন গৃহিণী রাখতে পারলে আমরা বড়ই আনন্দিত। সে হিসেবে একজন পুরুষ অফিসারের বিপরীতে চারজন নারী অফিসার থাকলে আমাদের আনন্দিত হবার কথা ছিলো।

একজন নারীর ভোট আর একজন পুরুষের ভোটে কি গুণগত পার্থক্য আছে? একজন পুরুষের ভোটের বিপরীতে কি দেড়জন নারী কিংবা দুইজন নারীর ভোট লাগবে?

মাটি কাটা, ইট/পাথর ভাঙা, গার্মেন্টস ইত্যাদিতে নারী শ্রমিকেরা পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় কম পারিশ্রমিক পায়। এমনকি সরকারি প্রজেক্ট কাবিখাতেও নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক কম।

Follow Mohioshi on Facebook

পুরো পরিবারের কাজকর্ম, বাসন ধুয়া, কাপড় ধুয়া, ঘর সাফাই, ক্ষেত্রবিশেষে রান্নাবান্নাসহ বাচ্চা দেখাশোনা করা গৃহকর্মীর বেতন গেইটের দারোয়ানের চেয়েও কম!

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সরকার নারীদেরকে একটু বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগে বেশিরভাগ নারীরা নিয়োগ পেয়েছেন। নারীদের করমুক্ত আয়ের সীমা পুরুষদের তুলনায় একটু বেশি। এগুলো কিছু মানুষের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 Follow Mohioshi on Instagram

আচ্ছা! বলুন তো এই যে মেয়েগুলো চাকরি পেলো, ওরা তো মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি। ওরা আমাদেরই মেয়ে, বোন, ভাগ্নি। নিজের বোন/ভাগ্নির সাথে হিংসা করতে আপনার পৌরুষে বাঁধে না?!

পারিবারিক অসহযোগিতা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, ইভটিজিং হাজারটা বৈষম্য মোকাবেলা করে আমাদের মেয়েরা যে নিজেদেরকে শিক্ষিত করছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব ঘাড়ে নিচ্ছে এতে আপনার বুক গর্বে স্ফীত হয় না! ছোটো ছোটো পদক্ষেপ নিয়ে সরকার যে নারীর ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করছে এজন্য কি সরকারকে ধন্যবাদ দিবেন না?! আপনার মেয়ে, আপনার পুত্রবধূ স্বাবলম্বী হলে আপনার পরবর্তী বংশধরদের জীবন সহজ হয়ে যায় না?!

আমাদের তো আরও অনেকগুলি সেক্টর রয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন, রাজনীতিতে কত শতাংশ নারীদের অংশগ্রহণ আছে? অথচ জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। আপনি পুরুষ, আপনার জন্য হাজারটা সেক্টর উন্মুক্ত – দুই/একটা সেক্টরে যদি নারীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় এত হিংসা করার কী আছে? বরং কম চ্যালেঞ্জিং সেক্টরগুলিতে নারীদেরকে পদায়ন করে চ্যালেঞ্জিং সেক্টরগুলিতে আপনার জন্য প্রতিযোগিতা কমিয়ে আনার জন্য সাধুবাদ জানাতে পারেন। আমাদেরই তো দায়িত্ব আমাদের মেয়েদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক কাজের পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। শিক্ষক হিসেবে একজন মায়ের চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে?

হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমাদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী কোটা, উপজাতি কোটা, পোষ্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সহ নানাবিধ কোটায় জর্জরিত। তাই বলে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের অগ্রাধিকার নিয়ে এতটা কটাক্ষ করতে হবে?! ভাব দেখে মনে হচ্ছে “বুদ্ধি প্রতিবন্ধী” নাম দিয়ে নতুন কোটা সংযোজন করতে হবে, সংখ্যাটা হুহু করে বাড়ছে।

Follow Mohioshi on Twitter

নার্সিং সেক্টরে পুরুষদের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে পুরুষ নার্সদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আর হ্যাঁ, রান্নাঘর এবং বাচ্চা পরিচর্যায়ও পুরুষদের ভূমিকা লজ্জাজনকভাবে কম; এতটাই কম যে দশমিকের পরে ভগ্নাংশের মতো চাইলে উপেক্ষা করা যায়।

আপনি মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কাবাডি সব খেলবেন আর তাদেরকে একটু লুডু কিংবা বেডমিন্টন খেলতেও দিবেন না?! এতটা স্বার্থপর তো আমরা হতে পারি না।

 লেখকঃ মনসুর আলম, প্রবাসী লেখক, সাউথ আফ্রিকা।

২০/১২/২০২২

আরও পড়ুন- জাহেলী আরবের সেরা সুন্দরী হিন্দ বিনতে উতবা

আরও পড়ুন