তারিক হক
চলুন, জীবনটাকে গড়ি। আপনি পৃথিবীতে একজন ইউনিক মানুষ, আপনার মতো আর কেউ নেই।
আমেরিকান টেলিভিশনের জনপ্রিয় তারকা অপরাহ বলেছেন, ‘এতে কিছু যায়-আসে না, আপনি কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় আপনার জন্ম । বিজয়ের চাবিকাঠি শুধু আপনার হাতে।’
আমি চল্লিশ বছর ধরে বিদেশে আছি, রাশিয়ায় ছিলাম, জার্মানিতে জীবন কাটিয়ে দিলাম। জীবনে যা কিছু অর্জন করেছি, আমি নিজে। আপনি হয়তো বলবেন, আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করেছেন। এটা সত্যি। কথায় আছে, খোদা তাদেরই সাহায্য করেন, যারা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, পৃথিবী আপনার হাতের মুঠোয়।
আজকে আমি যে বিষয় নিয়ে শুরু করছি, তা হলো কিভাবে আমি আমার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছব, লক্ষ্য অর্জন করব।
এসব নিয়ে আমার একটি ফর্মুলা আছে। আপনি যদি এই ফর্মুলা মেনে চলেন, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জন করবেনই।
আপনার প্রথম পদক্ষেপ
আপনার জীবনের লক্ষ্য কী সেটা জানুন। এর উত্তর কিন্তু সহজ নয়। আমি বড়লোক হতে চাই, আমি বিখ্যাত হতে চাই এটা কোনো লক্ষ্য নয়। এটা হলো ইচ্ছা,অভিলাষ; লক্ষ্য অন্য জিনিস। আপনাকে সুস্পষ্ট লিখতে হবে আপনি কী চান।
চারটি শব্দ “What do I want” ?
আপনার প্রথম পদক্ষেপ, আপনি এটা খাতায় লিখে ফেলুন। মুখে বলবেন না, খাতায় লিখে ফেলুন। লিখুন, লিখুন, আবারও বলছি, লিখুন।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ
সময়সীমা নির্ধারণ করুন। কবে নাগাদ ? কালকে, দু’মাস পরে, আগামী ছ’মাসে, আগামী পাঁচ বছরে। আমাদের মগজ শুধু ইতিবাচক চিন্তা করতে পারে (এটা আমার কথা নয়, সাইকোলজিস্টরা বের করেছেন)। কখনও নেতিবাচক কথা বলবেন না, দেখবেন আপনার অবচেতন মন এটা ঠিকই গ্রহণ করেছে।
তৃতীয় পদক্ষেপ
নিজেকে বিশটি প্রশ্ন করুন, কিভাবে আপনি লক্ষ্যে পৌঁছবেন। বিশটি উত্তর লিখুন। বই পড়ুন, গুগলে যান, বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞেস করুন। উত্তর পেয়ে যাবেন। উত্তর খাতায় লিখে ফেলুন।
চতুর্থ পদক্ষেপ
আপনার খাতায় বিশটি উত্তর লেখা আছে। এ থেকে একটি পরিকল্পনা বের করুন, কোনটি আগে করবেন, কোনটি পরে। ইতালীয় সাইকোলজিস্ট প্যারেটো ১৮৯৫ সালে যেটা আবিষ্কার করেছেন তা হলো, আপনার জীবনের ২০% কাজ এনে দেবে ৮০% কাজের চেয়ে বেশি সাফল্য। এখন প্রশ্ন হলো, কোন ২০% কাজ আপনাকে এনে দেবে সাফল্য। চিন্তা করুন, দেখবেন আপনি উত্তর পেয়ে যাবেন। অগ্রাধিকার আর সুযোগ এ দুটি কথা সব সময় মনে রাখবেন।
পঞ্চম পদক্ষেপ
আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন এত দিন লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেননি। বিশটি প্রশ্ন করুন, বিশটি উত্তর লিখুন। উত্তরগুলো যেন অকপট হয়। উত্তরগুলো যাচাই করুন। হয়তো আপনার অর্থাভাব, হয়তো ভুল বিশ্বাস, হয়তো মনে ভয়।
একটি উদাহরণ দিচ্ছি :দশজন মানুষের একটি দল একসঙ্গে হাঁটছে। সবার আলাদা বয়স। আপনার কী মনে হয়, সবাই যদি একসঙ্গে হাঁটতে চায়, কার গতিতে হাঁটতে হবে? জানেন কার? সবচেয়ে যে বুড়ো অথবা সবচেয়ে যে বাচ্চা, তার। তার মানে এই, জীবনের সবচেয়ে যেটা দুর্বলতা, সেটাই আপনার জীবনটা নিয়ন্ত্রণ করছে, তাই না। আপনার ঐ দুর্বলতা দূর করুন।
ষষ্ঠ পদক্ষেপ
আপনার জীবনের লক্ষ্য আছে, আপনি সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন, আপনার লিখিত পরিকল্পনা আছে, কাজে নামুন। কালকে না, পরশু না, সামনের সপ্তাহে না; আজকে, এই মুহূর্তে। কিছু একটা করুন।
আর বলবেন না, আজকে আমার শরীরটা খারাপ, কালকে বিকেলে আমার বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বিয়ে, পরশু থেকে শুরু করব। এটা সবচেয়ে বড় ভুল। আজ এই মুহূর্তে কাজে নামুন, এখনই কিছু একটা করুন।
সপ্তম পদক্ষেপ
আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, প্রতিদিন কিছু একটা করবেন। পাঁচ মিনিট হোক, দশ মিনিট হোক, প্রতিদিন কিছু করবেন। এটি এমন একটি জিনিস, আপনি লাভবান হবেনই। আপনি যদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিদিন কিছু করেন, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনি সিদ্ধি লাভ করবেনই। আমি আমার জীবনে যত মিলিয়নেয়ারের সঙ্গে আলাপ করেছি, সবাই আমাকে বলেছেন, এই একটিমাত্র অভ্যাস তাঁদের জীবনে সফলতা এনে দিয়েছে।
একজন খ্যাতিমান মানুষ বলেছেন, ‘আমি সব সময়ই জিতব।’ এর কারণ এই নয় যে আমি অন্যদের চেয়ে বেশি মেধাবী বা অন্যদের চেয়ে বেশি প্রতিভাবান। যেহেতু আমি কখনও হতাশ হব না, আমি কখনও আমার লক্ষ্য থেকে সরব না।
বলুন, আমার জাহাজের আমি ক্যাপ্টেন। বলুন, আমার জীবন হাতের মুঠোয়, আমার জীবন হাতের মুঠোয়।
লেখকঃ
সাহিত্যিক ও প্রবাসী বাংলাদেশী, জার্মানি