Ads

অষ্টমীর আরাধনা

অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ মহাষ্টমী। দেবীর শ্রীচরণে অঞ্জলি দেবার দিন। দিয়েছেন নিশ্চয়ই অনেকে ? মন্ত্র উচ্চারণের সময় খেয়াল করেছেন কী কী বলেছেন ? রূপং দেহি,ধনং দেহি,যশ দেহি,বলং দেহি,পুত্রঙ দেহি,এটা দেহি,ওটা দেহি ইত্যাদি। শুধু দাও আর দাও। দেবীর সামনে দাঁড়িয়ে তো নিজেকে ফাঁকা, শূন্য করে দেবার কথা। কিছু চাইবারই তো থাকবেনা। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনের নামই তো পূজা। জাগতিক তুচ্ছ চাওয়া পাওয়ার অনেক উর্ধে ভক্ত ও ভগবানের সম্পর্ক। তাছাড়া আমাকে চাইতেই বা হবে কেন ?

আমার জন্য যা ঠিক,যতটা ঠিক তা তিনি আপনিই দেবেন যদি তিনি মাতৃরূপা হন। কারণ মা জানেন সন্তানের কী প্রয়োজন,কতটা প্রয়োজন। আর মা কিছু না দিলেও আফসোস নেই। কারণ আমিই সৎ, চিৎ,আনন্দ,অর্থাৎ সচ্চিদানন্দ। সেই অমোঘ বেদমন্ত্র আমরা সকলেই জানি। ” সো অহম ” অর্থাৎ আমিই সে। আমাতেই তিনি বা তাঁর মধ্যেই আমি। তাঁর সঙ্গে লীন হয়ে আছে যে জীবসত্ত্বা তার আর কীইবা চাওয়ার আছে ? যদি এসব ভারী ভারী তত্বকথা বাদও দিই তাহলেও আমার এই আটপৌরে জীবনে এত বিপুল কিছু চাওয়ার নেই যা আমাকে দিয়ে চাওয়ানো হচ্ছে। মোহ, মায়া, কামনা,বাসনা,লোভ,ঈর্ষা,ক্রোধ,অহঙ্কার এইসব রিপু থেকে মুক্তির নামই বৈরাগ্য আর বৈরাগ্যের অপর নামই সাধনা। এই রিপুগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে খুব সহজসাধ্য কাজ নয়। তবে সাধারণ মানুষকে পূজার মাধ্যমে বা আরাধনার মাধ্যমে সচেতন করে দেওয়া দরকার যাতে এই রিপুর তাড়না গুলো সম্পর্কে সে সতর্ক হয় এবং তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা সে করতে পারে। যতই আমরা বিভিন্ন পার্থিব জিনিস চাইব ততই আমাদের ভিতরে আকাঙ্খার বৃদ্ধি হবে। আর আকাঙ্খা মনের শান্তি ও স্থিতি নষ্ট করে। তাহলে কেন এইসব মন্ত্র বলানো হবে যা মানুষের লিপ্সা বা লোভ বাড়িয়ে দেয় ?

আর সব থেকে খারাপ লাগে যখন মন্ত্র বলে দিচ্ছে পুত্রের জন্য প্রার্থনা করতে । দেবী তো নারীশক্তি। তাঁর কাছে কেন কন্যা চাইব না আমরা ? মন্ত্র তো এরকম হতে পারত “সন্তানং দেহি ” । সন্তান বললে পুত্র কন্যা দুটোই বোঝায়। তা না বলে শুধু পুত্র চাইতে কেন শেখানো হচ্ছে ? এসব মন্ত্র মানুষকে কী মন্ত্রণা দিচ্ছে ? অঞ্জলি মানে তো সমর্পণ । সব কিছু ঈশ্বরের পায়ে সঁপে দিয়ে মুক্ত হয়ে যাওয়া,খালি হয়ে যাওয়া। অঞ্জলি মানে কি চাওয়া ? একদমই নয়। তাহলে অঞ্জলি দেব কেন ? বা দিলেও এইসব মন্ত্র কেন বলব ? যদি ভক্তিই বড় কথা হয় তাহলে দেবীমূর্তির সামনে বসে ধ্যান করুণ, নিজেকে রিক্ত,শূন্য করুণ আর নিজের ভিতরের অগাধ ঐশ্বর্যকে উপলব্ধি করুণ। আর নাহলে স্রেফ ফুচকা খান, ঘুরে বেড়ান।

অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

লেখকঃ ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক, কলকাতা

আরও পড়ুন