তারিক হক
দেয়ালে লেখা লাল কালিতে
জার্মানিতে এক বন্ধুর সাথে আমি রবিবার জগিং এ যাই।
জগিং এর ফাঁকে ফাঁকে ওকে আমার জোকগুলো শোনাই।
ও হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে।
ও বলে, “জানো, জগিং এর পর আমি চার্চে যাই।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“চার্চে গিয়ে কী করো?”
ও বললো, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, উনি যেন তোমাকে সুমতি দেন।
আমি হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝলাম না।
যাহোক বন্ধু নেমন্তন্ন করেছিল ওর জন্মদিনে।
খুব সুন্দর বাড়ি। গর্বভরে সারা বাড়ি ঘুরিয়ে দেখালো।
বেডরুমে এসে দেখলাম খাটের উপরের দেয়ালে লাল কালিতে লিখা, “আমি পারবোই”।
আমি বন্ধুর দিকে একটু সন্দেহজনক ভাবে তাকালাম।
ও আমার দিকে হেসে বললো, “তারিক, তুমি যা ধারণা করেছ তা নয়”।
এটা আমার বৌ লিখেছে। ওর ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছিল।
ও জগিং করে ক্যান্সার সারিয়েছিল।
এই কথাগুলো ওর জন্য মোটিভেশন।
আমি বললাম,
– জগিং করে ক্যান্সার সারানো যায় এটা আমি প্রথম শুনলাম।
ও বললো,
– আমি জানি, তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে না। ওকে জার্মান টিভিতে সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। আমি তোমাকে ভিডিও দেখাচ্ছি।
ভিডিও দেখলাম।
ভদ্রমহিলা সাক্ষাৎকারে বলছেন, যেই মুহূর্তে শুনলাম আমার ক্যান্সার হয়েছে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, “আর কদিন বাঁচবো? উনি বললেন, বাঁচা-মরা খোদার হাতে। আপনি তো জগিং করেন। এমনভাবে জগিং করবেন, যাতে আপনার সমস্ত শরীর ঘামে চুপচুপে হয়ে যায়।
আমি জগিং শুরু করলাম। আজ চার বছর হয়ে গেছে, ডাক্তার আবার চেক করেছেন। আমার দেহে ক্যান্সার নেই।
আমি যতই ভিডিও দেখছি আর ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি।
জগিং করে ক্যান্সার দূর করা যায় এতো উদ্ভট কথা জার্মান ছাড়া আর কারো মাথাতেই আসবে না।
ইতিমধ্যে বন্ধুর স্ত্রী এসে হাজির হলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বিজয়ীর একটি হাসি দিলেন। আমার মাথা নত হয়ে গেলো এই আর্য রমণীর কাছে।
কবি হাসান মাহমুদের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করলো:
নারী! তুমি প্রিয়তমা, বনিতা, কলত্র, গৃহিণী।
নারী! তুমি জীবন-সাথী, গিন্নী, স্রোতস্বিনী ।
নারী! তুমি সুজলা, চপলা, চঞ্চলা, রূপরাণী।
নারী! তুমি সুরসী, কালোকেশী, অন্তঃরণী।
নারী! আমি নর। তোমার জন্য হই দিবাকর!
নারী! তুমি আমার বিশ্ব! তুমিহীনা আমি নিঃস্ব!
পাঠক, আপনি-আমি হলে কি করতাম? মরার আগেই মরে যেতাম তাই না?
খাওয়া শেষে ধন্যবাদ দিয়ে বাইরে বের হলাম। বুক ভরে দম নিলাম আর চিৎকার করে বললাম,
“আমি পারবোই”।
(লেখকের মন্তব্য: জার্মানির ক্যান্সার হেল্প এসোসিয়েশনের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে নিয়মিত ব্যায়াম চর্চায় ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শতকরা তিরিশ ভাগ কমে যায়।)
লেখকঃ মোটিভেশনাল লেখক ও জার্মানী প্রবাসী।
( লেখাটি তার “উত্তরণের স্বপ্ন” বই থেকে )