তুরবাতুশ শিফা
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা: বলেন, ” রাসূল সা: এর তিরোধানের পর সর্বপ্রথম যে বিদআত প্রকাশ পায় সেটা হলো উদরপূর্তি। নিশ্চয় মানুষের পেট যখন পরিতৃপ্ত হয়, তখন তাদের নফস দ্রুত বেগে দুনিয়ার দিকে ধাবিত হয়।”)
মূলত পেট এবং লজ্জাস্থান হলো জাহান্নামের একটি দরজা। আর তার মূল হলো পরিতৃপ্তি। নফসের পরাজয় ও নতজানু হওয়া জান্নাতের একটি দরজা । আর তার মূল হলো ক্ষুধা। এতএব যে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করলো, সে মূলত জান্নাতের দরজাটিই খুলে দিল। কেননা এদুটি বিপরীতমুখী। উভয়ের মাঝে পূর্ব- পশ্চিমের দূরত্ব। যখন একটি নিকটবর্তী হয়, তখন অন্যটা দূরে সরে যায়।
আসুন, এবার আমরা ক্ষুধার্ত থাকার উপকারিতা গুলো জেনে নিই : —-
# অন্তর স্বচ্ছ থাকে। স্বভাবজাত বুদ্ধিকে আলোকিত করে। ব্যক্তিকে করে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন।
# অন্তর নরম থাকে। এমন পরিশুদ্ধি অর্জিত হয়, যার মাধ্যমে ব্যক্তি সাধনার স্বাদ আস্বাদন করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। আল্লাহর স্মরণ তার অন্তরকে প্রভাবিত করে।
# বিনয় ও নমনীয়তা অর্জিত হয়। ঔদ্ধত্য, উল্লাস ও গোড়ামি দূর হয়, যা কিনা আল্লাহর স্মরণে গাফিলতি ও অবাধ্যতা সৃষ্টি করে।
# ক্ষুধার্ত ব্যক্তি কখনো বালামুসিবত ও আল্লাহর শাস্তির কথা ভুলে না, ভুলে না বিপদাপন্ন মানুষের কথা।
# ক্ষুধার কারণে সকল প্রকার গুনাহ ও বিশৃংখলার খাহেশাত নিস্তেজ হয়ে যায়। নফসে আম্মারাহ তথা গুুনাহ প্রবণ অবাধ্য মনের উপর কর্তৃত্ব লাভ হয়, কেননা সকল প্রকার অন্যায়ের সূচনাই হলো এই খাহেশাত ও নফসের শক্তি।
# ক্ষুধা ঘুম দূর করে। রাত্রিজাগরণে সহায়ক হয়। এটাই বান্দার মূল পুঁজি, বেশি ইবাদাতের সহায়ক। আর ঘুম হলো মৃত্যু, অধিক ঘুম জীবনকে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত করে।
# ইবাদাতে লেগে থাকা সহজ হয়। নিশ্চয় অধিক আহার ইবাদাতের প্রতিবন্ধক। সিয়াম পালন করা ঐ ব্যক্তির জন্যই সহজ যে ক্ষুধাকে নিজের অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে।
# অধিক আহার রোগব্যাধির অন্যতম প্রধান কারণ। আর রোগ ব্যাধি ইবাদাতে বাধা দেয়, অন্তরকে অস্থির করে রাখে, জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ।
আর ক্ষুধা? এর সব কিছু থেকেই মুক্ত, বরং এসমস্ত কিছুকে দূরে সরিয়ে রাখে।
# মিতব্যয়ী করে, খরচ কমায়। কারন, যে অল্প আহারে তুষ্ট,অল্প সম্পদই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
# ক্ষুধা নিবারণের পর অতিরিক্ত খাবার টুকু ইয়াতিম, মিসকিন, অভাবী মানুষদের দান করা সম্ভব হয়। এতে করে দাতা কিয়ামতের দিনে সাদাকাহর ছায়াতলে অবস্থান করবে। কেননা বান্দা যা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে দান করে তা অবশ্যই তার জন্য জমা থাকে।
আর যারা বেশি খায়, তা নিঃশেষ হয়ে যায়। যারা বেশি পরিধান করে, তাও পুরাতন হয়ে যায়, সুতরাং অতিরিক্ত খাবার দ্বারা ভুঁড়ি ভারি করা কিংবা তা জমিয়ে রাখার চেয়ে উত্তম হলো দান করে দেওয়া।
আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ভোগবিলাসিতায় অভ্যস্ত হবে, তার নফস তাতেই অাগ্রহী হয়ে উঠবে, তার স্বাদকে পছন্দ করবে, তার উপকরণের দিকে ধাবিত করবে। আর এই সমস্ত কিছুই তাকে পাপের দুয়ারে টেনে নিয়ে যাবে। মনে রাখা দরকার, খাহেশাত কখনো প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং মানুষের উচিৎ নফসের ব্যাপারে অমনোযোগী না হওয়া।
# অপচয়ের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে যা মন চায় তাই খাওয়া, মন যা চাই তাই করা।
মানুষের জীবন ধারণের সবচেয়ে মৌলিক এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ (অক্সিজেন)কে মহান আল্লাহ সহজ ও ফ্রি করে দিয়েছেন, মানুষের উচিত তার জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া। অথচ এ বিষয়ে আমরা একেবারেই গাফিল।
এই উপকারগুলো পেতে হলে আমাদের যা করতে হবে তা হলো:
# খাদ্যতালিকা পর্যাকক্রমে কমাতে হবে।
# যে ব্যক্তি অধিক খায়, সে হঠাৎ করে একেবারে কম খাওয়া শুরু করলে শরীর তা সইতে পারবে না, দুর্বল হয়ে যাবে, অত্যধিক কষ্ট হবে।
# এজন্য উচিত হলো ধীরে ধীরে অনুশীলনে অভ্যস্ত হওয়া। আর তা এভাবে যে, সে তার খাদ্যাভাস থেকে একটু একটু করে কমাবে।
ক্ষুধার্ত থাকতে শিখুন, সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
তথ্যসূত্র: সালাফদের ক্ষুধা
লেখক: ইমাম ইবনু আবিদ দুনিয়া র:
প্রকাশক: সীরাত পাবলিকেশন।