Ads

গীবত অন্তরের ব্যাধি

।। রাশেদুল ইসলাম ।।

সমাজে পাপের অভাব নেই। জেনা, ব্যভিচার, গীবত, অপবাদ, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, পরকীয়া, অশ্লীলতাসহ নানা ধরণের অন্যায় কাজ দিনদিন বেড়েই চলছে। কিছু কিছু পাপকে তো এখন আর পাপ-ই মনে করা হয় না। স্বাভাবিক ডালভাত মনে করা হয়। তেমনি একটি পাপকর্ম হলো “গীবত”। এই গীবত এক ধরণের অন্তরের ব্যাধি, আমরা আজকে এ বিষয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবো। ইন শা আল্লাহ!

আমরা অনেকেই এই কাজটি খুব ভালো করে সম্পাদন করতে পারি। ‘গীবত’। এটা যে কত ভয়াবহ অপরাধ আমরা তা কল্পনাও করি না।

গীবত মারাত্মক অপরাধ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এটা করে কেউ অনুতপ্ত হয় না। বরং আনন্দিত হয়। বান্দা যদি অপরাধ করে অনুতপ্ত হয় আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবত করে অনুতপ্ত হওয়া তো দূরের কথা বরং বেশ মজা পাওয়া যায়। ভুলে গেলে চলবে না, গীবত হল অন্তরের ব্যাধি।

রাসুল সাঃ ইরশাদ করেন “গীবত হল তোমার ভাইয়ের এমন আচরণ বর্ণনা করা, যা সে অপছন্দ করে।” (সহীহ মুসলিম -১৮০৩)

আমরা আড্ডায় অনুপস্থিত বন্ধুটিকে পচানি দিতে গিয়েও এ কাজটি করে ফেলি। আমরা ভাবি, বন্ধুদের আড্ডায় এরকম না হলে চলেই না। হয়তো মনের অজান্তেই গীবত করে ফেলি। দুঃখ শেয়ার করতে গিয়েও করি।

কিন্তু মনে রাখা দরকার ইসলামে গীবত হারাম। হারাম মানে হারাম-ই। তাবৎ পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানী, দার্শনিক, মুফতিরা এসেও একে হালাল করতে পারবে না। পারবেই না। আর হারামকে হারাম মনে করা ঈমানী দায়িত্ব। হারামকে হারাম মনে না করা কুফরী।

গীবতের অনেক ক্ষতি। আপনি যার গীবত করছেন তার আমলনামায় আপনার নেক আমলগুলো অটোমেটিক চলে যাচ্ছে এবং তার বদ-আমলগুলো আপনার আমলনামায় জমা হচ্ছে। এটা ভাবলেই তো কষ্ট পাওয়ার কথা। এত কষ্ট করে নেক আমল করি আর সেটা কেউ একজন ফ্রি ফ্রি পেয়ে যাচ্ছে! কী সাংঘাতিক!!

এক্ষেত্রে আমাদের একটু কৃপণ হওয়া উচিত। আমি আমার নেক আমলগুলো কেন অন্যকে দিয়ে দেব? জনৈক আলিম বলেছেন (নাম মনে পড়ছে না)- আমি যদি কাউকে আমার নেক আমলগুলো দেয়ার ইচ্ছা করতাম তাহলে আমি আমার বাবা-মা’র গীবত করতাম। তাহলে দেখুন, কেউই তার নেক আমল অন্যকে দিতে রাজী না। এমনকি প্রিয়জনকেও না।

আরও পড়ুন- অন্তরের ব্যাধি সম্পর্কে উদাসীনতা নয়

অতএব, করনীয় কী?

আমাদের উচিত হবে যার দোষ/ভুল দেখছি তাকে তার ভুল ধরিয়ে দেয়া। তাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া। তার হেদায়েতের জন্য দু’আ করা।গীবতের চেয়েও সাংঘাতিক আরেকটি অপরাধ হচ্ছে বুহতান বা অপবাদ। বুহতান হল কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রটনা করা। এর কারণে নেক আমলই কবুল হয় না।

আপনি হয়তো আল্লাহর কাছে কোনো বিষয় নিয়ে অনেক দু’আ করছেন কিন্তু কবুল হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনি হয়তো কারো গীবত করে ফেলেছেন। অথবা কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন !! মনে রাখবেন, আল্লাহ তা’আলা বান্দার হক ক্ষমা করেন না।

গীবত ও বুহতানের আরেকটি পর্যায় হল চোগলখোরি। চোগলখোরি হল- একজনের কথা আরেকজনের কাছে লাগিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা। ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়া। অশান্তি ও অনৈক্য তৈরি করা। এসব মূলত শয়তানী কাজ। রাসুল সাঃ বলেছেন, চোগলখোর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী: ৬০৫৬)

আরও পড়ুন- ‘জিহবার নিয়ন্ত্রণ: একটি আবশ্যকীয় গুণ’

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো উপরে বর্ণিত অপরাধীদেরকে বিশ্বাস না করা। তাদেরকে উল্লিখিত পাপগুলোর শাস্তি ও ধমক সম্পর্কে অবগত করা। ওয়াজ ও নাসিহাহ পেশ করা। তাদেরকে মন থেকে ঘৃণা করা কারণ তারা আল্লাহর শত্রু। তাদেরকে এড়িয়ে চলা। কারণ পাপ সংক্রামক। তার পাপে আমরাও জড়িয়ে যেতে পারি।

তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, “যে লোক তোমার কাছে অন্যের দোষ বলবে, তুমি বুঝে নেবে যে, সে অবশ্যই তোমার দোষও অন্যের কাছে বলবে। এজন্যই অন্যের দোষ বর্ণনাকারীকে কখনো বিশ্বাস করো না।”

তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েজ আছে বলে হাদীসের আলোকে আলিমগণ মনে করেন। যেমন- অত্যাচারীর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য বিচারকের কাছে নালিশ দেয়া। কারো ষড়যন্ত্র বা অনিষ্ট থেকে মানুষকে সতর্ক করা। যে ব্যক্তি পাপ করে তা প্রকাশ করে বা প্রকাশ্যে পাপ করে এরূপ ব্যক্তির দোষ বর্ণনা করা জায়েজ। যাতে মানুষেরা বুঝতে পারে কাজটি আসলেই ভাল নয়।

তবে সাবধান, হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না। কোনরূপ সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। তাহলে তা হারাম বলে গণ্য হবে।

হযরত মুয়ায রা. বর্ণনা করছেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- যে ব্যক্তি তার কোন ভাইকে এমন কোন পাপের কারণে লজ্জা দিল, যার জন্য সে তওবা করেছে, ওই পাপ না করা পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। [তিরমিযি, মিরকাত : ৪৮৫৫]

“ওহে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” ( সূরা আল হুজুরাত : ১২)

লেখকঃ ইসলামী কন্টেন্ট রাইটার

মহীয়সীঃ গীবত মারাত্মক একধরণের অন্তরের ব্যাধি । এই ব্যাধি মানুষে মানুষে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয় । এই ব্যাধি মানুষের মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করে  দেয়  ।

আরও পড়ুন