Ads

জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার পার্থক্য কি?

অধ্যাপিকা মৌলুদা খাতুন মলি

“আচ্ছা মামনি, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা কি একই জিনিস”? ডিনার টেবিলে আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা ছিল- ছোট ছেলে আশিকের।তার আগে একটু বলি-

আমাদের বেশিরভাগ আলাপ-আলোচনা-ই- হোক তা বৈষয়িক কিংবা অতীতের বস্তাপচা অপ্রাসঙ্গিক অথবা ইসলামের আলোকে পারিবারিক তালিম– সবই হয় ডাইনিং টেবিলে বসে- খাওয়ার পর। প্রায় রোজই.. কখনো বা ঘন্টাব্যাপী। মাঝেমধ্যে এমনও হয়েছে- আমরা গল্পের তালে পড়ে সারাটা রাত কোনদিক দিয়ে পার হয়েছে- টের পাইনি। এক্কেবারে ফজরের নামায পড়ে যে যার বেডে গেছি। হাস্যকর শোনালেও এটিই সত্য।
আমি বিশ্বাস করি-

প্রতিটি মানুষের জীবনে- ফ্যামিলির সাপোর্ট পাওয়া অতি জরুরি। যার ফ্যামিলি বন্ডিং যত স্ট্রং হবে- জীবনে তার সফলতা তত নিশ্চিত হবে।
আলহামদুলিল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে সে সুবিধা থেকে মাহরুম করেননি। কোটি কোটি শুকরিয়া, আমরা খুউব ভাল আছি । তাই সবাইকে বিনীত রিকুয়েস্ট- পরিবারকে বেশি সময় দিন, প্লিজ। আশিকের প্রশ্নটা আমার কাছে কমন ছিল। অতি উৎসাহে বলতে শুরু করলাম-
— না বাবা, মোটেই তা নয়। জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দুটি ভিন্ন বিষয়। এদের মাঝে অর্থগত বেশ পার্থক্য আছে।

সহজভাবে অল্প কথায় বলি শোনো-জ্ঞান হলো- কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিক বা বেঠিক উভয়টি সম্পর্কেই ভালমতো জানা বা বুঝতে পারার যোগ্যতা।
আর প্রজ্ঞা হলো- যা জানলে বা বুঝলে তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হওয়া।
অর্থাৎ —–একজন ব্যক্তি লেখাপড়া শিখে অনেক কিছু জানতে পারে বা অনেক বড় মাপের জ্ঞানীলোকও হতে পারে। কিন্তু তিনি একজন প্রজ্ঞাবান না-ও হতে পারে। তার মানেটা হলো-

প্রজ্ঞা হচ্ছে- জ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার কৌশল। আমাদের অনেকের অনেক বিষয়ে জ্ঞান থাকতে পারে। কিন্তু যদি প্রজ্ঞা না থাকে, তাহলে সেই জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার হবে না।

প্রজ্ঞার আরও অর্থ হলো- হিকমাহ বা বিবেক, বোধ-বুদ্ধি, বিবেচনা ইত্যাদি।
বুঝার সুবিধার্থে জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার আরও কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি–

★ তুমি জানো যে, ‘মদ’ বা ‘সিগারেট’ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে তোমার যথেষ্ট জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তুমি যদি তা বর্জন করতে না পারো- তাহলে ভাবতে হবে তোমার জ্ঞান আছে ঠিকই কিন্তু প্রজ্ঞা নেই। আর যদি তুমি মদ, সিগারেটের কুফল জানার পর তা ছেড়ে দিতে পারো- তাহলে বুঝবে- তোমার জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দুটোই আছে।
আরও খোলাসা করে বুঝানোর চেষ্টা করছি-

★ এই যে বর্তমানে সরকার ‘করোনা’ মহামারী সম্পর্কে এত এত প্রচারের পরও কি সবাইকে পুরোপুরিভাবে সচেতন করতে পেরেছেন?
না, পারেননি। কেউ মানছে কেউ আবার মানছেই না। যারা মানছে তাদের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দুটোই আছে। আর যারা গোয়ার্তমি করছে, মাস্ক ছাড়া বুক টান টান করে ঘুরে বেড়াচ্ছে- তাদের জ্ঞান থাকলেও প্রজ্ঞা কিন্তু এক্কেবারে নেই।
আরও শোনো–

★ আগুনে হাত দিলে যে হাত পুড়ে যাবে- এটি বুঝার ক্ষমতাই হলো- জ্ঞান।
— আর আগুনে হাত দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা হলো- প্রজ্ঞা।

★ পড়াশুনা করলে রেজাল্ট ভাল হবে এটি বুঝা- জ্ঞান।
— আর পড়াশুনা করে ভাল রেজাল্ট করা
হলো- প্রজ্ঞা।

★ ইসলামে রিবা বা সুদ হারাম, জঘন্য পাপ। এটি বুঝতে পারা হলো- জ্ঞান।
— রিবা বা সুদ থেকে নিজেকে দূরে রাখা হলো- প্রজ্ঞা।

একজন মানুষ খুব জ্ঞানী হয়েও বিবেকহীন হতে পারে। সুতরাং জ্ঞানবান হলেই যে তিনি প্রজ্ঞাবানও হবে- বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। প্রজ্ঞা হলো জ্ঞানকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করার কৌশলের নাম।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন-
“যেমন, আমি তোমাদেরই মধ্যে থেকে একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনায়, পবিত্র করে, বিধি-বিধান এবং প্রজ্ঞা শেখায়। আর শেখায় যা তোমরা কখনো জানতে না।
(আল-বাকারা- ১৫১)

“তিনি যাকে চান, তাকে প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়েছে, সে বিরাট কল্যাণ পেয়ে গেছে। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে- যারা জ্ঞানবান”। (আল-বাকারা- ২৬৯)।

আমার এ ক্ষুদ্র আলোচনা শুনে আশিক ভীষণ খুশি হলো। আশিক খুশি, তাই আমিও খুশি!!

মলি, বগুড়া।
০৩ জুলাই, ২০২১ ইং
২২ জিলক্বদ, ১৪৪২ হিঃ

লেখকঃ সাহিত্যিক ও শিক্ষক 

আরও পড়ুন-

মহিলাদের জ্ঞান অর্জন

আরও পড়ুন