Ads

তাক্বওয়া ও রমজানঃ ঈমান, ইবাদাত ও সহযোগিতার (সেবা) আন্তঃসম্পর্ক

।। আব্দুল্লাহ আল  মাসুদ।।

দীন (জীবনব্যবস্থা) হিসেবে ইসলামের প্রতিটি হুকুম-আহকাম খুবই ভারসাম্যপূর্ণ, যা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে । তবে মানুষ নিজের খায়েস পূরণ, প্রবৃত্তির অনুসরণ ও ব্যক্তিগত মতামতকে প্রাধান্য দিতে যেয়ে এর মর্মার্থ বুঝতে বা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয় । আমাদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত কুরআনই পথপ্রদর্শক । তবে শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা মুত্তাকী তথা তাকওয়াবান (খোদাভীরু)। আর তাকওয়াবান ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কুরআনের শুরুতেই (সূরা বাক্বারা ২-৪) বলা হয়েছে যে, “মুত্তাকীদের জন্য ইহা (কুরআন) পথ-নির্দেশ, (মুত্তাকী তারাই) যারা অদৃশ্যে ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাদেরকে যে (রিযিক) জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে । এবং তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের উপর যা নাযিল হয়েছে, তার উপর ঈমান আনে ও আখিরাতে যাহারা নিশ্চিত বিশ্বাসী”।

উল্লেখিত আয়াতে মুত্তাকীর পাঁচটি গুনাবলীর উল্লেখ রয়েছে, যা মূলত তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত । মুফাসসিরগণ আয়াতে বর্ণিত মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করলেও হযরত কাতাদাহ (রাঃ) আয়াতে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যই মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য হিসৎেবে উল্লেখ করেছেন । সূরা বাক্বারার প্রথম ৪টি আয়াতে মুত্তাক্বীদের আলোচনা করার পাশাপাশি পরের ১৩টি আয়াতে মোনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । একবার কেউ রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), কুরআনের কতকগুলো আয়াত আমাদেরকে উৎসাহিত করে এবং মনে আশা সঞ্চার করে; আবার কতক আয়াত আমাদের আশা-ভরসা শেষ করে নৈরাশ্যের সাগরে নিক্ষেপ করে । তখন রাসুল (সা.) বলেন, আসো, আমি তোমাদেরকে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের পরিচয় পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেই । তারপর তিনি সূরা বাক্বারার “আলিফ-লাম-মীম” থেকে “মুফলিহুন” পর্যন্ত তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন এরা জান্নাতী (মুসনাদ-ই- ইবনে আবি হাতিম) ৷

যাইহোক, যারা নিজেদেরকে মুত্তাক্বী তথা মুমিন হিসেবে দেখতে চায় তাদেরকে উপরোক্ত আয়াতে কারীমার বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে । গভীরভাবে চিন্তা করলে কুরআনে বর্ণিত মুত্তাক্বীর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে যে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে তা উপলব্ধি করা যায়, যার একটি আরেকটির পরিপূরক । একটিকে বাদ দিয়ে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হওয়া সম্ভব নয় । বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ

ক. অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন; আসমানী কিতাব ও আখেরাতে বিশ্বাস স্থাপন করা; যা ঈমানের সাথে সম্পর্কিত;

খ. নামাজ কায়েম করা;

যা ইবাদাতের সাথে সম্পর্কিত; এবং

গ. প্রাপ্ত সম্পদ থেকে ব্যয় করা, যা সেবা বা সহযোগিতার সাথে সম্পর্কিত।

প্রথমতঃ অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন বলতে আমাদের চোখের আড়ালে যা রয়েছে বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি যা অনুভব করতে পারে না সে বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা ৷ যেমন, আল্লাহ, ফেরেস্তা, আখেরাত, আসমানী কিতাব, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদিতে বিশ্বাস করা মুত্তাকীর প্রথম বৈশিষ্ট্য । সূরা বাক্বারার ৩-৪ নম্বর আয়াতে বিশ্বাস সংক্রান্ত তিনটি বিষয়ের (অদৃশ্যে বিশ্বাস, কিতাবসমূহে বিশ্বাস ও আখেরাতে বিশ্বাস) উল্লেখ করা হয়েছে ৷ মুত্তাকী হিসেবে প্রশ্নাতীতভাবে এগুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করা বান্দার প্রথম কাজ । কেননা বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া বাকি শর্তাবলী পালনে কোনো মূল্য নেই । অধিকাংশ ঈমামের মতে অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও কার্যে পরিণত করার নামই ঈমান । আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মুখ, অন্তর ও আমল দ্বারা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস, রাসুল ও তাদের উপর বর্ণিত কিতাব ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস করার নামই ঈমান ।

দ্বিতীয়তঃ নামাজ কায়েম (প্রতিষ্ঠা) করার কথা বলা হয়েছে । মূলত, নামাজ আদায় বা বাস্তবায়ন করা ইবাদাতের সাথে সম্পর্কিত ৷ নামাজ প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে মুফাসসিরদের মধ্যে ব্যাখ্যার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় । ইবনে আব্বাস বলেন, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা মানে হলো, ফরয নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সালাতের রুকু, সেজদা, তেলাওয়াত, ধীরস্থিরতা ও মনোযোগ সহকারে নামাজ আদায় করা । কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, সময় মত নামাজ আদায়, ওযু, রুকু ও সেজদা যথাযথভাবে আদায় করাই নামাজ প্রতিষ্ঠা করা । মুকাতিল (রাঃ) এর মতে সময় মত নামাজ আদায় করার পাশাপাশি ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন, ধীরস্থিরভাবে রুকু-সেজদা করা, শুদ্ধ তেলাওয়াত করার পাশাপাশি তাহিয়্যা ও দরুদ পাঠ করার নামই হচ্ছে ইকামাতে সালাত ।

সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রাপ্ত রিযিক (ধন-সম্পদ) থেকে মানুষের জন্য ব্যয় করা ৷ অনেক মুফাসসিরগণ এই আয়াত দ্বারা যাকাত আদায়ের কথা বললেও এর দ্বারা সন্তান-সন্ততিসহ অন্যদের মাঝে সাধ্য অনুযায়ী দান করার কথাও বলা হয়েছে । কেননা যাকাত ফরয হওয়ার আগে এই আয়াত নাজিল হয় ৷ কুরআনের অধিকাংশ জায়গায় নামাজের পাশাপাশি ধন-সম্পদ বিতরণের কথা উল্লেখ রয়েছে । অর্থ্যাৎ নামাজ হচ্ছে আল্লাহর হক্ব বা ইবাদাত যার মাধ্যমে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব, একত্ববাদ, প্রশংসা ও মুখাপেক্ষীতার প্রকাশ পায় । আর ধন-সম্পদ বিতরণের দ্বারা সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করা- যার দ্বারা সৃষ্টিকূল উপকৃত হয় ৷

তবে আয়াতে বর্ণিত রিযিক শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক ৷ সচরাচর, রিযিক বলতে মানুষের খাওয়া দাওয়া বা আয়ের মাধ্যমকে বুঝি আমরা। কিন্তু রিযিক দুধরনেরঃ একটি প্রকাশ্য বা প্রত্যক্ষ রিযিক, অন্যটি অপ্রকাশ্য বা পরোক্ষ রিযিক । প্রকাশ্য রিযিক বলতে যা আমাদের শরীরকে প্রদান করা হয় । এটি দৃশ্যমান । যখন কেউ প্রদান করে তখন তা দেখা যায় । যেমন; আর্থিক সহযোগিতা বা খাদ্যদ্রবাদী প্রদান করা । আর অপ্রকাশ্য রিযিক, যা দেখা যায় না কিন্তু এটি ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে । যেমন আল্লাহ প্রদত্ত হেকমাহ বা প্রজ্ঞা, সচ্চরিত্র, নেককার স্ত্রী ও সন্তানাদী, সুস্বাস্থ্য, সময়, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও চিন্তাশক্তি (গবেষণা) ইত্যাদিও রিযিকের অন্তর্ভূক্ত ।

যাইহোক, কুরআনে বর্ণিত মুত্তাকীর মৌলিক তিনটি বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি খুবই কম মানুষের মাঝে পরিলক্ষিত হয় । অনেক মানুষ আছেন যাদের আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস বিদ্যমান । আবার মানুষের বিপদাপদে সবার আগে আর্থিক বা শারিরীক সমর্থ নিয়ে হাজির হন ৷ কিন্তু নামাজ তথা ইবাদাত পালনে খুবই অনিহা । তারা বলে, এখনও বয়স আছে, পরে ইবাদাত করা যাবে । তাছাড়া মানবসেবা তো বড় ইবাদাত ! আমরা তো মানুষের যে কোনো সমস্যায় এগিয়ে আসি, বিপদে পড়লে সাহায্য করি, ইত্যাদি । অন্যদিকে আর একটা গ্রুপ আছে যাদের ঈমান খবুই মজবুত । কুরআনে বর্ণিত অদৃশ্য সবকিছুতে সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করে । তারা নামাজ আদায় বা মানুষকে নামাজে আহ্বান করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করে না । সার্বক্ষণিক মসজিদে পড়ে থাকে । অথচ পাশের বাড়ির প্রতিবেশি না খেয়ে থাকলে খোঁজ নেয় না, অসুস্থ হলে সহযোগিতা করে না, প্রতিবেশি সন্তানদের লেখা-পড়া শিখাতে হিমশিম খায়, কিন্তু সেদিকে সহানুভূতির দৃষ্টি নেই । আবার তাদের সাথে সদাচারণও করে না । প্রতিবেশির পালিত পশু-পাখি নিজের ত্রিসীমানায় স্পর্শ করতে দেয় না ইত্যাদি । অর্থাৎ আল্লাহ নির্দেশিত রিযিক থেকে ব্যয় করতে তার ব্যাপক অনিহা । তাদের কথা হলো কুরআন-হাদিস নির্দেশিত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল, তাহাজ্জুদসহ যত ইবাদাত আছে সব কিছু তো ঠিকঠাক পালন করি ৷

অথচ আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনের শুরুতেই মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্যে যে তিনটি বিষয় আলোকপাত করেছেন তা সঠিকভাবে পালন করলে একজন ব্যক্তি যেমন আধ্যাত্মিকতায় ঋদ্ধ হবেন, তেমনি সামাজিকভাবে সকলের প্রয়োজনে এগিয়ে এসে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হবেন ৷ প্রথম দু’টি বিষয় যেমন হাক্ব-আল্লাহ’র সাথে সম্পর্কিত, শেষের বৈশিষ্ট্যটি হাক্বুল ইবাদের সাথে সম্পর্কিত । তাই কোনো ব্যক্তি যদি যে কোনো দু’টি বৈশিষ্ট্য পালন করে মুত্তাকী হতে চান ৷ তাহলে তা হবে খন্ডিত ও অপূর্ণ । তিনটি ফ্লেভার দিয়ে তৈরি কোনো খাবারে একটির অনুপস্থিতি যেমন সেটিকে বিস্বাদ করে; অথবা তিনটি স্তম্ভের উপর নির্মিত কোনো স্থাপনায় যখন একটি স্তম্ভের অনুপস্থিতি সেটিকে দুর্বল করে দেয় ৷ তেমনিভাবে মুত্তাকীর তিনটি বৈশিষ্ট্যের একটি বা দু’টিকে উপেক্ষা করা পরিপূর্ণ তাকওয়াবান হওয়ার পথে অন্তরায় ৷ বর্ণিত তিনটি বৈশিষ্ট্য একটি অন্যটির পরিপূরক । কোনটি বাদ দিয়েও এর পূর্ণতা সম্ভব নয় ৷ বৈশিষ্ট্যসমূহে আধ্যাত্মিক ও সামাজিক বিষয়াদির অসাধারণ সমন্বয় রয়েছে । একজন ব্যক্তি বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে আল্লাহর ইবাদাত করবে, তেমনি চারপাশে বসবাসরত মনুষ্য সমাজ ও প্রাণীকুলের প্রয়োজন মিটানোর চেষ্টায় থাকবে ৷ তাহলে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের আলোকে সে একজন মুত্তাক্বী হিসেবে পরিগণিত হবে ।

যাইহোক, তাক্বওয়া বা খোদাভীতি অর্জনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে রমজান মাস । রমজানের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষদের মুত্তাকী বা তাকওয়াবান করা (সূরা বাক্বরাহ- ২৮৩), যার বৈশিষ্ট্য কুরআনের শুরুতেই (সূরা বাক্বারা ২-৪) বর্ণনা করা হয়েছে ৷ রোজাদারগণ প্রতিটি মুহূর্ত এমনভাবে অতিবাহিত করে, যার মাধ্যমে মুত্তাকীর মৌলিক তিনটি বৈশিষ্ট্য অর্জনের প্রশিক্ষণ হয়ে যায় ৷

এমাসে মানুষের বিশ্বাস বা ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায় । পুরো মাস জুড়ে আল্লাহ’র অস্তিত্ব বা উপস্থিতি বেশি উপলব্ধি করে রোজাদারগণ । সারাদিন খানা-পিনা থেকে দুরে থেকে বা প্রচণ্ড রোদে পিপাসিত হয়েও আল্লাহর ভয়ে আড়ালে যেয়েও কোনো কিছু খায় না বা পান করে না ৷ কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন এই বিশ্বাস করে রোজাদারগণ । এর ফলে না দেখা স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাস জন্মায় রোজাদারদের ।

বিশ্বাসের পাশাপাশি এমাসে মানুষ বেশি বেশি ইবাদাত-বন্দিগীতে অভ্যস্থ হয় ৷ তারাবী, কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের পাশাপাশি অন্যন্যা ইবাদাতেও যত্নশীল হয় সবাই । অন্য সময়ের অস্থির প্রকৃতির ইবাদাতকারীর মাঝেও ধীরস্থিরতা ও খুসু-খুজু পরিলক্ষিত হয় । অর্থ্যাৎ মুফাসসিরগণ নামাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন, রমজানে রোজাদারগণ সেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন ৷

বিশ্বাস দৃঢ়করণ ও ইবাদাতের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি যে কোনো সময়ের চেয়ে রমজানে মানুষ একে অন্যকে বেশি বেশি সাহায্য করে, সহানুভুতিশীল হয় ও অনুপম ব্যক্তিত্ব গঠনের মৌলিক গুনাবলী অর্জন করে । কুরআন ও হাদিস নির্দেশিত ইফতার-সাহরি, সাদকাতুল-ফিতর, যাকাত, ফিদইয়া, কাফফারাসহ দান-সাদ্বাকাহ্ তে অভ্যস্থ হয় মানুষ ৷ অভাবীদের কষ্ট অনুভব করে সম্পদশালী রোজাদারগণ ৷ সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রবণতা বা পুঁজিবাদী চিন্তা-চেতনার উর্দ্ধে উঠে মানবপ্রেমী হয় অনেকে । সম্পদ নিজের নয় বরং এই সম্পদে অন্যের হক্ব রয়েছে এই চেতনা জাগরুক হয় রমজানে । নিজের সম্পদ থেকে অন্যকে দেওয়ার আল্লাহ প্রদত্ত হুকুমে অভ্যস্থ হয় মানুষেরা । এর পাশাপাশি ব্যক্তির অপ্রকাশ্য রিজিকসমূহ আরো শাণিত হয় । এমাসে খারাপ বা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে মানুষ যা তার চরিত্র গঠনে সহায়ক হয় । যেমন- মিথ্যা বলা, ফাঁকি দেওয়া, অশ্লীল গালি দেওয়া, চোখ-কান দিয়ে খারাপ বা মন্দ দেখা বা শোনা থেকে হেফাজত রাখা, রাগ নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদিতে অভ্যস্থ হয় রোজাদারগণ ৷ আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ অর্জন খুবই জরুরী যা রমজানেই অর্জন করার উপযুক্ত সময় ৷ রমজানের পরে যদি কোন রোজাদারের মধ্যে এই সব গুনাবলীর উপস্থিতি না পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে তার এই রোযা ব্যক্তি গঠনে এবং তাক্বওয়া অর্জনে খুবই বেশি কাজে আসেনি ৷

যাইহোক আলোচ্য বিষয়ের আলোকে বলা যায় ঈমান, ইবাদাত ও অন্যকে সহযোগিতা বা সেবা করা পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। যেকোনো একটিকে বাদ দিয়ে পূর্ণ তাক্বওয়াবান বা মুত্তাকী হওয়া সম্ভব নয় ৷ কারো মধ্যে মুত্তাক্বীর তিনটি বৈশিষ্ট্যের ঘাটতি থাকলে তা সঠিকভাবে পালন করা ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রোজাদারগণ যখন এই সব গুনাবলীতে গুনান্বিত হবে ৷ তখন রোজার আসল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন সাধন হবে, নতুবা রাসুল (সা.)এর ভাষায় সারাদিন না খেয়ে উপোস থাকাই হবে আমাদের রোজার পরিণতি !

 

লেখকঃ প্রভাষক, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

 

আরও পড়ুন-রামাদান ও সিয়ামঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর ব্যবহৃত কিছু পরিভাষা

তাকওয়া ও পরিশুদ্ধিতা অর্জনে মাহে রমাদান…

মাহে রমজান ও তাকওয়া

 

আরও পড়ুন