Ads

পরীক্ষার জীবন জীবনের পরীক্ষা

।। শহীদ সিরাজী ।।

সুখ ও দুঃখের এক বিস্ময়কর জীবন মানুষের। যে মানুষটা সুখের সাগরে ভাসছে ; হঠাৎ দেখা গেল তার জীবনে নেমে আসলো ভয়ংকর দুঃখ। আবার যার জীবনে দুঃখ নিত্যসংগী সে হঠাৎ লাভ করলো এক অকল্পনীয় সুখ।

একটা ঘটনা বলি। ছুটিতে নানা বাড়ি বেড়াতে গেছে নাদিম। সমবয়সি কাজিনদের সাথে হৈচৈ আর আনন্দে কাটছে দিন। পাশেই নদী। শুকনা মৌসুমে এখন খাল। গ্রামের দুষ্টু ছেলেরা হাটুপানিতে খেলছে। নাদিমের ইচ্ছেডানাও পাখা মেললো। সেও পানিতে নামবে, সাঁতার কাটবে।

সময় পান না বাবা। ছেলের ইচ্ছা কি না করতে পারে। তাই নামলেন শুকনা নদীতে। হাটুপানিতে সাঁতার শেখাতে লাগলেন। কি আনন্দ ছেলের। বেশ খেলছে পানিতে। তবুও সর্তক ভাবে হাত ধরে রেখেছেন। আশেপাশে খেলছে সমবয়সি বন্ধুরা।

মোবাইলে রিং বেজে উঠলো হঠাৎ।

পকেট থেকে বের করে বাবা ধরলেন। কথা বলতে লাগলেন। কোন ফাঁকে ছেলের হাত আলগা হয়ে গেল টের পেলেন না। ছেলেও মহাখুশিতে পানিতে দাপাদাপি করতে করতে দুরে সরে গেল। সাঁতার জানে সে। হাটুপানি কিন্তু হঠাৎই পানিতেই হারিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পরে বাবার খেয়াল হলো। দেখেন পাশে ছেলে নেই। চমক উঠে অন্য ছেলের মাঝে আতিপাতি করে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু না! ছেলেকে পানিতে কোথাও দেখতে পেলেন না। গেল কোথায়। এত অল্প পানিতে কি কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে? মানতে পারছেন না। তবু বাবার দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগলো। খোঁজাখুজিতে পার হলো কিছু সময়। খূঁজতে খুঁজতে পানির ভেতরে ছেলেকে যখন পেলেন তখন ছেলে আর নাই পৃথিবীতে। বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা, আদর-ভালবাসা ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। ঘটনাটা সত্যি।

আর একটা ঘটনা। বাবা-মা দুজনই কলেজ শিক্ষক। এক মেয়ে, এক ছেলে। দুজনেই ডাক্তার। মেয়ে ইন্টার্নি করছে আর ছেলে এফসিপিএস ২য় পর্বে। বাবা-মায়ের শখ ওদের বিয়ে দেবেন। খুঁজছেন পছন্দের পাত্র-পাত্রী।

ব্যস্ত জীবনে ফুরসুত পান না তারা। একটু সময় বের করলেন। যাবেন গ্রামের বাড়ি। বাহন নিজেরই মটরবাইক। স্ত্রীকে পেছনে নিয়ে পরম খুশিতে বের হলেন পথে।

তখনই ঘটলো মহাদূর্ঘটনা। উল্টো দিক থেকে আসা একটা ট্রাক সরাসরি আঘাত করলো

মটরবাইককে। নিমিষেই তারা প্রাণ হারালো। স্নেহ মমতায় মানুষ করা দুই সন্তানকে কিছু বলার সুযোগও পেলেন না তারা। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

এমন ঘটনা রয়েছে আরও।

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ আনামের। তার আবদার কোথাও বেড়াতে যাবে। খুবই স্বাভাবিক! পরীক্ষার পর তো একটু ঘুরবেই ছেলে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। পরম আদরের। সব স্বপ্ন ছেলেকে ঘিরে। আবদার না মিটিয়ে কি পারে বাবা-মা! আবদার মেটাতে তারা এসেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে।

সেদিন গোধলি বিকেল। সৈকতও লোকে লোকারণ্য। পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। সতর্ক বাবা-মা ছেলেকে চোখে চোখে রাখছেন। বার বার সতর্ক করছেন। এর ফাঁকেই সে বন্ধু নয়নের সাথে সাগরে নেমেছে। সেও সতর্ক। বয়সের বাধমানা উচ্ছ্বাস। নামতে নামতে একটু বেশি নেমেছে নিচে। ঠিক সেই সময় একটা ঢেউ আছড়ে পড়লো তার উপর। সাঁতার জানে না সে। সকলের চোখের সামনেই তলিয়ে গেলো আনাম। মূহুর্তে হৈচৈ, ভয়ার্ত চিৎকার। কিন্তু তাকে উদ্ধার করা গেলে না। বিশাল সাগরে নিমিষেই হারিয়ে গেলো।

ঘটনাগুলো এতটায় মর্মান্তিক কোন ব্যাখ্যাই স্বজনদের চোখের পানি আটকাতে পারবে না। কেউ তাদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না অতিত।

এবার ভিন্ন রকম ঘটনা।

মমিন সাহেব। অল্প শিক্ষিত এক গ্রাম্যডাক্তার। পোশাক আশাক, চেহারায় দারিদ্র্যের ছাপ। দিনের সামান্য আয়ে কষ্টে দিন চলে। দুই ছেলে। বিস্ময়কর ব্যাপার তারা বুয়েটে পড়া শেষ করে একজন মালয়েশিয়া অন্যজন কানাডায় উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। সম্পদ নেই তবে রয়েছে অতি মূল্যবান দুই সন্তান।

তারই প্রতিবেশি মামুন সাহেব। সরকারের এক বড় আমলা। গাড়ি বাড়ি সম্পদ কোন কিছুর অভাব নেই। তবে এক জায়গাতে রয়েছে বড় অভাব, বড় শুন্যতা। একমাত্র ছেলে সিজান। তাকে মানুষ করতে পারেননি তিনি। গাড়ি চড়ে স্বুল-কলেজে গমন, মজাদার টিফিন, সব সাবজেক্টে প্রাইভেট পড়ানো; কোন কিছু তাকে পড়াশোনায় মনোযোগী করাতে পারেনি।

সিজানের বাবা-মার দুঃখের শেষ নাই। সব থাকার পরেও যেন তাদের কিছুই নাই। কোন অভাব বা শুন্যতা নাই। তবুও হতাশা তাকে গ্রাস করছে। শত শত টাকা খরচ করেও ছেলেকে মানুৃষ করতে না পারার কষ্ট তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

সত্যি মানুষ কত অসহায়; তার প্রমাণ উপরের গল্পগুলো। এগুলো সবই জীবন থেকে নেয়া।

এধরনের ঘটনা যদি আমাদের জীবনেই ঘটে তাহলে কেমন হবে আমাদের প্রতিক্রিয়া?

একবার ভাবুন! পানিতে ডুবে মারা যাওয়া সেই সন্তানহারা বাবা যদি আমি হতাম। কিংবা মোটরবাইক এক্সিডেন্টে মারা যাওয়া বাবা-মার যদি আমরা এতিম সন্তান হতাম। আবার কক্সবাজারে সাগর সৈকতে ডুবে মারা যাওয়া একমাত্র সন্তানের যদি আপনি বাবা হতেন? সব থাকার পরও হতভাগ্য মামুন সাহেবের মত যদি আপনি বাবা হতেন। তাহলে কি করতেন। আমারই বা কি করতাম। হয়তো একথা সকলে বুঝবে না; শিল্পী হায়দার হোসেনের গানের মতই

‘যার চলে যায়

সেই বুঝে হায়

বিচ্ছেদে কি যন্ত্রনা।’

এ বিচ্ছেদের যন্ত্রণা থেকে আদৌ কি মুক্তি পাওয়া সম্ভব? আর কিভাবে তা পাওয়া যেতে পারে ?

আসুন এ ঘটনাগুলো নিয়া আমরা একটু চিন্তা করি। নিঃসন্দেহে ঘটনাগুলো এতই হৃদয়বিদারক যে তা মেনে নেয়া সহজ নয়। এর পরেও রয়েছে অনেক চিন্তার বিষয়।

এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রেও মানুষের মাঝে পাওয়া যাবে নানা বৈপরিত্য। যেমন –

* আল্লাহতে যারা বিশ্বাসী তাদের ভাবনা

* আল্লাহতে যারা অবিশ্বাসী তাদের ভাবনা

* যারা সংশয়বাদী তাদের ভাবনা।

আল্লাহতে বিশ্বাসী যারা –

আল্লাহতে বিশ্বাসী যারা হৃদয়ে তারা সবসময় প্রশস্ততা ও মনে প্রফুল্ল ধারন করে। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও স্মরণ মন প্রশান্তি দান করে। স্থির ও দৃঢ চরিত্রের হয়। তাঁরা কেবল আল্লাহকে বিশ্বাসই করে না অধিকন্ত নিজেকে সমর্পণও করে। এতে সর্বদা তাদের মনে শান্তি বিরাজ করে। শত বিপদেও ধৈর্যহীন হয় না বরং দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি মুক্ত থেকে তারা আল্লাহর উপর ভরসা করো।

এছাড়াও তারা সবসময় মনে করে ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। তিনি রহমান ও রহিম। উত্তম রিজিকদাতা। জন্ম-মৃত্যুরও মালিক তিনি। তারা আরও বিশ্বাস করে বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালবাসা অপরিসীম।

উপরের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত পরিবারের সদস্যরা যদি আল্লাহতে বিশ্বাসী হয় ও নবিজির পথ অনুসরণ করে তাহলে এঘটনাগুলো যতই বেদনাদয়ক হোক না কেন তবুও তারা আল্লাহর উপরে বরসা করেই ধৈর্যধারণ করবে কারন তারা বিশ্বাস করে ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। তিনি রহমান ও রহিম। উত্তম রিজিকদাতা। জন্ম-মৃত্যুরও মালিক তিনি। তারা আরও বিশ্বাস করে বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালবাসা অপরিসীম।

যাদের রয়েছে জ্ঞানের ঘাটতি, বিশ্বাসে সংশয় তারা এমন ঘটনা মেনে নিতে পারবে না। সহজেই ভেঙে পড়বে। আক্ষেপ করে বলতে থাকবে যদি সে বাড়ি থেকে বের না হতো তাহলো এমন ঘটনা ঘটতো না। কখনো কখনো পরিরবেশকেও তারা দোষ দেবে। ভাগ্যকেও দোষারোপ করবে। এমনকি আল্লাহকেও দোষারোপ করতে পিছপা হবে না। বলবে অন্যের উপরে বিপদ না এসে আল্লাহ কেন তার উপরে এমন বিপদ দিলেন।

আসলে তারা জানে না আল্লাহর ক্ষমতা ও তিনি কত মহান! তাঁর দয়া কত অপরিসীম। কেনইবা এমন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে সে বা তারা?

এক্ষেত্রে অবিশ্বাসীদের ভাবনা তার আরও একধাপ নিচে। আল্লাহর প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই। আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কেও তাদের কোন ধারা নেই। তাদের পরকালের ভাবনাও নেই। মনে করে এসব ঘটনা প্রকৃতির নিয়মে ঘটেছে।

আমদের আচরণ কি হবে?

এধরনের অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা ঘটলে আমাদের আচরণ কেমন হবে? আমরা কি সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসীদের মত আচরণ করবো না-কি অধিক শোকে পাথর হয়ে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে যোগি সন্যাসী সাজবো কিংবা মুখে বিশ্বাসী হয়েও অবিশ্বাসীদের মত আচরণ করবো।

আমাদের জানতে হবে –

এটা প্রামানিত সত্য, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা সীমাহীন। সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহর ভালবাসা কতটুকু? হাদিস অধ্যয়ন করলে আমরা দেখতে পাই, মহান আল্লাহর ভালবাসা মায়ের ভালবাসার চেয়েও অনেক অনেক বেশি। এ ব্যাপারে রয়েছে সুস্পষ্ট হাদিস,

‘মহান আল্লাহর রয়েছে ১০০ রহমত। তা থেকে

তিনি পুরো সৃষ্টির মাঝে বিতরণ করেছেন ‘একটি রহমত। এই একটি রহমতের কারণেই তারা একে অপরের প্রতি দয়া করে, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। প্রাণী তার বাচ্চার প্রতি

মমতায় উদ্বুদ্ধ হয়। অবশিষ্ট নিরানব্বই রহমত

তিনি কিয়ামতের দিন তার বান্দার প্রতি দয়া

দেখানোর জন্য রেখেছেন।’

(ইবনে মাজা-৪২৯৩)

সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহর কী সীমাহীন দয়া। সন্তানের প্রতি মায়ের তুলনাহীন মমতা আল্লাহ দয়ার তুলনায় কতই সামান্য!

এখন অনেকে প্রশ্ন করবেন, মানুৃষের প্রতি রব্বুল আলামিনের যেখানে এতটা দয়া; তাহলে মানুষের বিপদ আসে কেন? দুঃখে-কষ্টে কেন তাদের হৃদয় ভেঙে যায়। উপরের ঘটনাগুলো কিভাবে আল্লাহর দয়ার প্রমাণ দিচ্ছে?

এসব প্রশ্ন মানুৃষের মনে উঁকি দেয় কেন? সীমিত জ্ঞানই এর মূল কারণ? সহজভাবে বলা যায় মানুষ এসব দুঃখ-কষ্ট পায় কিংবা তাকে দেয়া হয় কেবলমাত্র পরীক্ষার জন্য। এখন স্বভাবতই

প্রশ্ন আসবে; আল্লাহ কেন মানুষকে পরীক্ষা করেন?

এর উত্তর আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। কুরআন থেকে আমরা তা জানতে পারি,

মহান আল্লাহ বলেন,

‘আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি. আমার কাছেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে। ‘(আম্বিয়া- ৩৫)।

আল্লাহ আরও বলেন,

‘আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পত্তি, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ ( বাকারা- ১৫৫)

আল্লাহ বলেন,

‘যিনি (আল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য; কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল।’ (মুলক-২)

উপরে বর্ণিত কুরআনের বাণী থেকে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ কেন বিপদ-মসিবত দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। মূলত ভালমন্দ যাচাইয়ের জন্যই এ পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে তিনি যাচাই করেন খাঁটি মুমিন। আর দুনিয়ার যত বিপদ আসে সবই আল্লাহ থেকে পরীক্ষা হিসাবে। এটাই আল্লাহর নিয়ম। তিনি যেমন সুখ-শান্তি দিয়ে পরীক্ষা করেন তেমন কখনো কখনো রোগব্যাধি, বিপদ দিয়েও পরীক্ষা করেন।

এ প্রসংগে নবিজি বলেন,

মুমিনের জন্য দুনিয়া কারাগারসদৃশ ও কাফিরের জন্য জান্নাত। (মুসলিম-২৯৫৬)

আরও জানার বিষয়, আল্লাহর এ পরীক্ষা কারো প্রতি বিরক্ত হয়ে বা রাগ করে নয় কিংবা তার অকল্যাণের জন্যেও নয় বরং তা সবই মানুষের কল্যাণের জন্য।

প্রকৃত সত্য যে, আল্লাহ কোন ব্যক্তির কল্যাণ চাইলে তাকে বিপদে ফেলেন। হাদিসে তার রয়েছে প্রমাণ। চমৎকার এক হাদিস যা বর্ণনা করছেন বিশিষ্ট সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা)।

তিনি বলেন,

আমি নবিজির (সা) কাছে ছিলাম, সে সময় ভীষণ জ্বরে তিনি আক্রান্ত ছিলেন। আমি নবিজির উপরে হাত রাখলাম। তখন নবিজির গায়ের চাদরের ওপর থেকে প্রচণ্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম,

হে আল্লাহর রাসুল! কত তীব্র জ্বর আপনার!

তিনি বললেন,

‘আমাদের (নবী-রাসুলদের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের ওপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং পুরস্কারও দ্বিগুণ দেয়া হবে।

আমি বললাম,

হে আল্লাহর রাসুল! কার ওপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে?

তিনি বললেন, নবিদের ওপর।

তারপর কার ওপর?

তিনি বললেন, তারপর নেককার বান্দার ওপর। তাদের কেউ কেউ এতটা নিঃস্ব হয় যে শেষ পর্যন্ত তার কাছে তার পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ- ৪০২৪)

এ হাদিস থেকে সহজে আমরা বুঝতে পারছি

দুঃখ-কষ্ট, বিপদ সবকিছুই আসে আল্লাহ থেকে এবং তা কল্যাণ নিয়েই আসে। বিষয়টাকে আমরা আরও পরিস্কার করতে পারি –

– পরীক্ষা দিয়ে আল্লাহ মানুষের গুনাহ মাফ

করেন এবং পুরস্কৃত করেন।

– এর মাধ্যমে তিনি বান্দাকে পরিশুদ্ধ করেন।

– বিপদ দিয়ে তিনি ভাল থেকে মন্দ লোক

আলাদা করেন।

– মানুষের প্রকৃত রূপ তার কাছে স্পষ্ট করেন

– বিপদ দিয়ে আল্লাহ ধৈর্যশীলদের বেছে নেন।

– কে উত্তম কে অধম তাও তিনি নির্ণয় করেন

দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, অভাব অনটন দিয়ে।

আল্লাহর এই পরীক্ষা থেকে নবী রাসুলগণও ছাড় পাননি। সুতরাং আমরা ছাড় পাবো কেনো?

আমরা কি জানি না ইবরাহিমকেও (আ) পরীক্ষা দিতে হয়েছিল? তিনি কি জনমানবহীন প্রান্তরে প্রিয়তম স্ত্রী ও দুধের শিশুকে রেখে জাননি? আদরের শিশু পুত্রকে কুরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাছাড়া নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে তাঁকে কত কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছেল। এসব কি কম বড় পরীক্ষা ছিল? যুগে যুগে সব নবি-রাসুলগণকে এ ভাবে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।

আমাদের মানতে হবে –

এসব বিষয় জানার পর আমাদের কি করা উচিৎ? তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিৎ। এছাড়া, প্রতিবেশি বা বিপদগ্রস্থ লোকের সহযোগিতা করার মর্যাদাও সীমাহীন। নবিজি বলেন,

‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন। ‘(মুসলিম-২৫৬৬)।

আবার যারা বিপদে পড়বেন, পরীক্ষায় পড়বেন তাদেরকে কি আমাদের সহযোগিতা কার উচিৎ নয় ? সহযোগিতা করাও অন্যদের জন্য পরীক্ষা। সহযোগিতা না করা পরীক্ষার ব্যর্থতা।

হাদিস থেকে এমন সহযোগিতার গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারি। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবিজি (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশি নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ (মুসলিম-৭৬)

নবিজি আরও বলেছেন,

‘সে মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কোনো বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা যা পছন্দ করো তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। অথবা তোমার প্রতিবেশীর জন্য।’ (মুসলিম ৭৫)

এ হাদিসে প্রতিবেশিকে সহযোগিতা করাকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা সহজে বুঝা যাচ্ছে। অন্যদিকে সহযোগিতা না করাকে কতটা অন্যায় বলেছেন তাও বুঝা যাচ্ছে। সহযোগিতা না করাও কিন্তু সুস্পষ্ট ব্যর্থতা।

প্রতিবেশি কোন ব্যক্তি বা বিপদে পড়া কারো সহযোগিতা করা কতটা মর্যাদার ও কতটা কল্যাণের তা আমরা পরিস্কার বুঝতে পেরেছি। মুমিন জীবন কিন্তু পরীক্ষায় মোড়ানো। এর পুরস্কার ও শাস্তি সুস্পষ্ট। এ সব জেনে আমাদের করনীয় নির্ধারণ করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,

যে একটা সৎকাজ করবে, সে তার দশগুণ

নেকি পাবে। যে একটি মন্দ কাজ করবে,

সে তার সমান শাস্তি পাবে।’ (আনআম -১৬০)

আল্লাহ বান্দার প্রতি রহমদীল বলেই নেকির মত গোনাহ দশগুন দেন না।

হাদিস থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন,

‘যখন কোনো বান্দা আমার দিকে

এক বিঘত এগিয়ে আসে, তখন আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই।

আর যখন বান্দা আমার দিকে একহাত এগোয়,

তখন আমি তার দিকে এক কদম এগিয়ে যাই।

আর বান্দা যখন আমার দিকে হেঁটে হেঁটে আসেতখন আমি তার নিকট দৌড়ে আসি।’

(বুখারি : ৭৫৩৬)

এমন সুযোগ কি আমাদের হাতছাড়া করা উচিৎ?

 

লেখকঃ প্রাক্তন ব্যাংকার ও লেখক 

আরও পড়ুন