Ads

সত‍্যিকারের মুসলিম অমুসলিমের নিরাপত্তা দেয়

মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ আল সিফাত

বাংলাদেশের বর্তমান এ পরিস্থিতিতে প্রতিটি জেলায় জেলায় একজন কায়েদ সাহেব হুজুর রহ. খুবই প্রয়োজন!

সকালে ফোনের গ্যালারি ঘাটতে গিয়ে দু’বছর আগের একটা স্কিন শর্ট নজরে পড়ে!নিউজটা করা হয়েছিল যুগান্তর পত্রিকায় ২০১৯ সালের ২০শে অক্টোবর। পত্রিকার হেডলাইনটা ছিল এমন “হামলা থেকে রক্ষায় মন্দিরের নিরাপত্তায় হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা”।প্রকৃত ধার্মিক মুসলমানদের এমনই হওয়া উচিত!প্রকৃত ধার্মিক মুসলমানদের দ্ধারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো ক্ষতি হতে পারে না।

স্কিন শর্টটা দেখে মনে পড়ে যায় হযরত কায়েদ সাহেব হুজুর রহ. এর ৯০/৯২ সালের ঘটনা।ভারতের বাবরি মসজিদে হামলা হয়েছিল।এ খবর শোনার ঠিক পরের দিন তিনি ঝালকাঠি শহরে একটা র‌্যালি বের করছিলেন।ঝালকাঠির সে সময়ের বড় বড় আলেমরা ছাড়াও হিন্দু ধর্মের প্রধান পুরোহিতরা সেই র‌্যালিতে যোগ দিয়েছিলেন।কায়েদ সাহেব হুজুরের সকল মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন ছিলো, সারা পৃথিবীতে যা ঘটার ঘটুক, ঝালকাঠির কোনো মন্দিরের একটা ইটেও যেন কেউ হাত না দেয়।

ঐ সময় বাবরি মসজিদে হামলার প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশে হিন্দু ভাইদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ মন্দির ভাঙ্গার একটা উৎসব হলেও ঝালকাঠি শহরের কোনো ঘর বাড়ি মন্দিরের একটা ইটেও কোনো টোকা লাগে নি।রাত জেগে মন্দির পাহারা দিয়েছিল কায়েদ সাহেব হুজুর রহ. এর প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসার শান্তি প্রিয় ছাত্ররা।

ইসলাম হল শান্তির ধর্ম।ইসলাম একদম সহজ নয় কঠিনও নয়।ইসলাম হল সিরাতুল মুস্তাকিম। মধ্যমপন্থা।ইসলাম আমাদের কি শিক্ষা দেয় সে দিকে আমাদের লক্ষ করতে হবে,”কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব।” –সুনানে আবু দাউদ ৩০৫২।

আমরা কি একটি বিষয় কখনও লক্ষ করে দেখেছি!পবিত্র কুরআন অবমাননায় করায় কিছু উগ্র মানুষ হিন্দু ভাইদের উপর চড়াও হচ্ছে! তাদের বাড়ি ঘড়ে অগ্নিসংযোগ লুটপাট মন্দিরে হামলা চালাচ্ছে। আসলে এরা কারা?আমার বিশ্বাস প্রকৃত ধার্মিক মুসলমানদের দ্ধারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে না।মূর্তির পায়ের কাছে কি পবিত্র কুরআন শরীফ কোনো হিন্দু ভাইরা রেখেছিল?আমাদের কাছে কি এর কোনো প্রমান আছে?না এখানে কোনো তৃতীয় পক্ষের হাত আছে?সেটা খতিয়ে দেখতে হবে প্রশাসনের।হয়তো তারা হিন্দু মুসলিমের মাঝে দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়?আমাদের এখনই সচেতন হওয়ার সময়।আমাদের সজাগ থাকতে হবে।আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে কেউ যেনো কোনো রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে।আপনি কখনও কি ভেবে দেখেছেন?ধরেন, বাংলাদেশের হিন্দু ভাইদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের মুসলিম ভাইদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, মুসলিম ভাইদের উপর অত্যাচার করে।মসজিদ ভাঙ্গে! তখন আমাদের কেমন লাগবে?

সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা কোনো নিরীহ হিন্দু ভাইদের উপর চড়াও হবেন না।সম্ভব হলে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।তাদের কাধের উপর হাত রেখে বলুন আমরা যতদিন বেঁচে আছি আমাদের দ্ধারা আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।তাদের জান মালের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমাদের যেমন এ দেশে অধিকার আছে।হিন্দু ভাইদেরও তেমন অধিকার আছে।সম্ভব হলে হিন্দু ভাইদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মন্দিরে গিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তাও যদি সম্ভব না হয় খেয়াল রাখবেন আপনার দ্ধারা তাদের কোনো উপকার না হলেও তাদের যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।

প্রিয় মাদরাসার ছাত্র ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়,উপজেলায়,ইউনিয়নে,গ্রামে,পাড়া,মহল্লায় মসজিদ মাদরাসা আছে।তেমনি হিন্দু ভাইদের প্রতিটি গ্রামে তাদের বসবাস রয়েছে।তাদের ধর্মীয় উপসনালয়,মন্দির আছে।সেগুলোতে আমাদেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।আর যেনো বাংলাদেশের কোনো হিন্দু ভাইদের বাড়ি-ঘরে,মন্দিরের একটা ইটেও যেন কেউ হাত না দেয় সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।আমি মনে করি,বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়,উপজেলায়,ইউনিয়নে,গ্রামে,পাড়া,মহল্লায় এক এক জন কায়েদ সাহেব হুজুর রহ. এখন খুবই প্রয়োজন।

আমাদের সব সময় খেয়াল রাখতে হবে আমরা মুসলমান।আমরা হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত।আমরা শান্তি প্রিয় জাতি।আমাদের দ্ধারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো ক্ষতি হতে পারে না।

লেখক: ছাত্র ও উদীয়মান লেখক

 

আরও পড়ুন