Ads

হতাশা, নিরাশা ও আত্মহনন থেকে বাঁচবেন যেভাবে

ড. রাউফুল আলম

জগৎসংসারে এমন কোন মানুষ নেই যার দুঃখ নেই। ফ্রাসট্রেশন ছাড়া কোন মানুষ হয় না। যন্ত্রণাহীন জীবন মানুষের নয়, সেটা জড় পদার্থের। —এই সামান্য সত্যটুকু যদি সবাই উপলব্ধি করতো তাহলে তার অর্ধেক হতাশা কমে যেতো। আমরা যার হাসি দেখে ভাবি সে সুখী, আসলে সে নিরন্তর সুখী নয়। যার অর্থ দেখে ভাবি সে জগতের শ্রেষ্ঠ, আসলে সে কারো কারো কাছে তুচ্ছ! যার ক্ষমতা ও খ্যাতি আপনাকে বিমুগ্ধ করছে, সে আদতে অর্ন্তদহনে পুড়ছে। মানবজীবন এমনই! এই সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি। চীরসুখী করে মানুষকে তৈরি করা হয়না। এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ (naturally forbidden)।

আমি যখন দেখি মানুষ হতাশার কারণে নিজের প্রাণ নিজেই নিয়ে নেয়, খুব কষ্ট লাগে। আত্মহত্যা হলো নিরাশার চূড়ান্ত পর্যায়। সে পর্যায়ে নিজেকে যেতে দেয়া যায় না। নিজেকে ধ্বংস করার এই ইচ্ছে আমাদের সবার ভিতরই কখনো না কখনো জাগে। কারো ইচ্ছে তীব্র, কারো ইচ্ছে দুর্বল। হতাশা হলো বিনাশী। এটা আমাদেরকে আকঁড়ে ধরবেই। কিন্তু তখনই আমাদের ভাবতে হবে, এই আমিই জগতে অসুখী নই। অমার চেয়ে বহু দুঃখী মানুষ বেঁচে আছে। হতাশা বাসা বাঁধলেই মানুষের সাথে কথা বলতে হবে। পরিবারের সাথে সময় দিতে হবে। গান শুনতে হবে। বই পড়তে হবে। সিনেমা দেখতে হবে। প্রার্থনা করাতে হবে। জগতের একেক মানুষ একেকভাবে হতাশাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আজ কেউ যতো হতাশ, কাল সকালে তত নয়।

এই জগতে দুঃখ ছিলো না কার? সম্রাট, সম্রাজ্ঞী, বাদশা-ফকির কেউই দুঃখহীন নয়। —ভারত বর্ষের এক শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন শাহজাহান। তার চার পুত্র তার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিলো। এক পুত্র অন্য পুত্রের প্রাণ নিয়েছে। সম্রাট পুত্র আওরঙ্গজেব, সম্রাটকে কারাবন্দী করেন। আট বছর ধরে বন্দী ছিলেন সম্রাট। আওরঙ্গজেব, তার বড়ো ভাই দারশিকোর মস্তক ছিন্ন করে বাবার কাছে পাঠিয়েছিলেন। ক্ষমতাধর সে সম্রাটের মৃত্যু হয়েছিলো পুত্ররচিত কারাগারে! —সুখী কে, বলুন?

যে আমেরিকায় আসার জন্য দরিদ্র দেশের মানুষের কতো চেষ্টা, সে আমেরিকায় বহু মানুষ ঘরহীন। তাদের খাবারের টাকা নেই। তারা রাস্তায় ঘুমায়। আমি যখন রেল স্টেশনে যাই, এদেশের কিছু গরীব মানুষ আমার কাছে টাকা চাইতে আসে। বড়ো অসহায় লাগে তাদের জন্য। ভাবি, ধনী রাজার রাজ্যে, তাঁর বুঝি একটু ঠাই হয় না!

জগতসংসারে প্রফেট বলুন, সম্রাট বলুন, বাদশা-ফকির, বণিক যাই বলুন; দুঃখ তার নাম লেখে সবার ললাটে। রক্তের ধমনীর মতোই হতাশারা লেপটে থাকে। তাই হতাশ হলেই গা ঝাড়া দিন। ঘর থেকে বাহির হোন। ঘুরতে যান। গান শুনুন। মানুষের সাথে কথা বলুন। যে করে হতাশা দূর করা যায়, তাই করুন। আজ যা হয়নি, কাল তা হবে। আজ যা নেই, কাল তা ধরা দিবে। আজ যা পারেননি, কাল তা পারবেন। আজ যে উপেক্ষা করছে, কাল সে দিবে সালাম। জীবনকে বাঁচিয়ে রাখুন।

লেখকঃ গবেষক, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

 

আরও পড়ুন