মাইনুল ইসলাম আলিফ
একটু সময় নিয়ে সময় প্রসঙ্গে কিছু বলে নেবো। অসময়ে সময় নিয়ে বকবক শুনতে কারো কারো ভাল নাও লাগতে পারে।তবু সময়রে দাবী মেনেই সময় নিয়ে একটু বলতে ইচ্ছে করছে।প্লিজ সময় করে লেখাটা পড়বেন।ভাল নাও লাগতে পারে তবু পড়বেন।কারণ কোথাও একবার পড়েছি, “Read today, Change tomorrow.”
জীবনটাই সময় , সময়ই জীবন।কারণ জীবনের চাকা থেমে গেলে সময়ের কাটা থেমে যায়।
অস্থির সময়ে স্থিরতা আনতে একটু গুছিয়ে চলা জরুরী।অথচ আমরা তা পারি না।আমরা যা করি, পড়ে দেখেন আমি গুনাগারের মতো আপনার নিজের ও বেশ অবাক লাগবে,
@ফেসবুক টুইটারে অহেতুক অনেক সময় নষ্ট করি।
@অহেতুক আলাপে আড্ডায় সময় ব্যয় করি।
@ইউটিউব, সিনেম, গান, খেল তামাশায় ব্যস্ত থাকি।
@নামাজ ,কালাম ,কোরআন ,হাদীস বেমালুম ভুলে থাকি।
@সময়ের কাজ সময়ে করি না।
পবিত্র কোরআনের একশত তিন নম্বর সূরা, সূরাতুল আছর এ আল্লাহপাক বলেন,
“সময়ের কসম।নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত , কিন্তু তারা নয়,যারা@ বিশ্বাস স্থাপন করে @ সৎকর্ম করে @হক্ব বা সত্যের উপদেশ দেয় এবং@সবর বা ধৈর্য্যের তাকীদ দেয়।“
সময়ের অথৈ জলে জীবনটা ভাসতে থাকে অথচ, Very few are able to raise themselves above the ideas of time.(ভলতেয়ারের একটা বিখ্যাত উক্তির একটা অংশ)।
তাই সময়টাকে কাজে লাগানো উচিত,আমার আপনার সবার।কারণ সময়ই একদিন আমাদের কেঁড়ে নেবে আমাদের জীবন থেকে। তাই দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝার মতো জীবন থাকতে জীবনের মর্যাদা উপলব্দি করা উচিৎ।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা: )থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , কোন এক ব্যাক্তিকে রাসূল (সা:) উপদেশ দেওয়ার সময় বললেন: তুমি পাঁচটি বিষয়ের পূ্র্বে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দাও।
(১) বার্ধক্য আসার পূর্বে তোমার যৌবনে গুরুত্ব দাও
(২) অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে গুরুত্ব দাও
(৩) দারিদ্রতা আসার আগে তোমার সচ্ছলতাকে গুরুত্ব দাও
(৪) তোমার ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরতার প্রতি গুরুত্বারোপ করো
(৫) এবং তোমার মৃত্যু আসার আগেই তোমার জীবনের গুরুত্ব দাও।
(মুসতাদরিক ৭৮৪৬)
সত্যিই পরিতাপের বিষয় যে, আমরা সময়ের মূল্যটাকে শুধু রচনায় সীমাবদ্ধ রেখে নিজেদের মনমর্জি মতো চলা শুরু করেছি।এখনই তওবা করা উচিৎ ।মহান আল্লাহর কাছে তাওফিক চাই, সময়গুলোকে যেন একটু কাজে লাগাতে পারি।আল্লাহর হুকুমে আমরা চাইলেই পারি –
@অনলাইন বা ভার্চুয়াল জগতের উত্তম এবং শিক্ষণীয় জিনিসগুলোর জন্য সময় আলাদা করা।(অহেতুক জিনিস বাদ দেয়া এবং বিরামহীনভাবে নয়)
@পরিবারকে একটু সময় দেয়া।
@হাসিমুখে স্ত্রী সন্তান/ স্বামী সন্তান /মা-বাবা/ছেলে-মেয়ে র সাথে কথা বলা।
@সন্তানকে ভাল কিছু শেখাতে শেখাতে সময় দেয়া বা খেলা করা।
@কুরআন শিক্ষায় সময় দেয়া।কারণ উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।”
@প্রতিদিন অন্তত এক/দুই আয়াত মুখস্থ করা।কুরআনের তাফসীর শিক্ষায় একটু সময় দেয়া।
@প্রতিদিন অন্তত একটা হাদীস শিক্ষা করা।
এভাবেই হয়তো সময়কে কাজে লাগানোর অভ্যাস গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।আমি পাপী সবার আগে করজোরে মাফ চাই মহান দয়ালু আল্লাহর কাছে , আল্লাহ যেন সময়কে নিয়ে হেলাফেলা করার গুনাহ মাফ করে দেন।কারণ সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন বিচারের মানদন্ড স্থাপন করা হবে।আল্লাহ বলেন,
“আমি কেয়ামতের দিন ন্যায় বিচারের মান্দন্ড স্থাপন করবো, সুতরাং কারো প্রতি জুলুম হবে না।“ (সুরা আম্বিয়া-৪৭)
আর পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সেদিন কেউ এক কদমও সামনে যেতে পারবে না। হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা:) নবী করীম (সা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদম ও স্ব স্থান হতে নড়তে দেওয়া হবে না। ১) তার জীবন কাল কি ভাবে অতিবাহিত করেছে, ২) যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে, ৩) ধন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, ৪) তা কিভাবে ব্যয় করেছে, ৫) সে দ্বীনের যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কিনা।
তাহলে বুঝতেই পারছি যে জীবনকাল,যৌবনকাল,ধন সম্পদ উপার্জন আর ব্যয় করা আর জ্ঞান অর্জন করে সে অনুযায়ী আমল করা সবই সময়ের ঘেরাকলে বাঁধা। সুতরাং সময়কে কাজে না লাগিয়ে উপায় নেই।কারণ না হলে যে অনেক বড় জুলুম আমরা নিজেদের উপরেই করে ফেলবো।মহান আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।(আমিন)
কারণ একদিন সময় আসবে হিসেব দেবার। তাই সেদিনের অপেক্ষায় না থেকে এখন থেকেই নিজেরা নিজেদের হিসেব নেয়া শিখতে হবে।আল্লাহ পাক বলেন,
“আপন কর্মের রেকর্ড পড়। আজ তোমার নিজের হিসাব করার জন্য তুমিই যথেষ্ট।“(সুরা বনী ইসরাইল-১৪)
তাই আসুন হেলায় হেলায় সময় না কাটিয়ে সময়ের জিম্মায় বন্দী হয়ে যাই।কারণ Life means time, Time is life .
সময় নিয়ে আর সময় নষ্ট করবনা। শেষ করবো কবিতা দিয়ে ,
জীবনটা নেহায়েত ছোট নয়,
অফুরন্ত সময়ের ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে ছুটে চলে
অবধারিত সত্যের দিকে।
অসময়ে দেখেছি গতিহীন সময়ের ক্ষয়।
অফুরন্ত সময়ের ডানা কেঁটে কেঁটে
জীবনটাকে বন্দী করে ফেলেছি
সীমাবদ্ধ গন্ডির ভেতরে।
এখন সময়টা এমন যে, না পারি নিজেকে গুছাতে,
না পারি নিজেকে নষ্ট সময়ের হিসেব দিতে।