Ads

অজ্ঞতার কালো থাবা

অধ্যাপিকা মৌলুদা খাতুন মলি

‘আইয়্যামে জাহেলিয়া’ বলতে আমরা একবাক্যে বুঝি- ‘অন্ধকার যুগ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন যুগ’।’আইয়্যামে জাহেলিয়া’ এটি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ- মূর্খতার দিনগুলি। আর এর ঐতিহাসিক অর্থ হলো- অজ্ঞতার যুগ, বর্বরতার যুগ, কুসংস্কার-অন্ধকারের যুগ ইত্যাদি। এটি দ্বারা ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে আরব অঞ্চলের কুসংস্কারের যুগকে নিদিষ্ট করা হয়।সেসময় সমাজে প্রধানত ০৫টি বিষয় ব্যাপকহারে চালু ছিল। যারজন্য যুগটাকে ‘আইয়্যামে জাহেলিয়া’ বলা হয়ে থাকে।
যেমন–
★ শিরক
★ সুদভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা
★ নারীর অবমাননা
★ মাদকাসক্তির ব্যাপকতা
★ রক্তক্ষয়ী গোত্র কলহ।

অনেকগুলো কারণের মধ্যে উল্লিখিত ০৫টি কারণে ইসলামী চিন্তাবিদরা যুগটাকে অজ্ঞতার যুগ বলে অভিহিত করেছেন।কিন্তু আজ এতদিন বাদে- আমরা সেই আইয়্যামে জাহেলিয়া থেকে পুরোপুরিভাবে বের হয়ে আসতে পেরেছি কি?
‘উঁহু, না। নিশ্চয়ই বের হয়ে আসতে পারিনি’। সেই পাঁচটি বড় বড় সমস্যা এখনো সমাজে বহাল-তবিয়তে বিরাজমান; সাথে যোগ হয়েছে নতুন আরও…।।
হ্যা, আজও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে- শিরক, বিদ’আত, খাদ্যে ভেজাল, যিনা-ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, নারী নির্যাতন, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিসহ হাজারো অন্যায়- অবিচার।
হায় আল্লাহ্‌! আমাদের ‘পাপ-পুণ্য’, ‘ভাল-মন্দ’ সম্পর্কে আজ বুঝাবে কে?
ঐ যে কথায় আছে-
“কুইনাইন জ্বর সারাবে, কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে?”
চারদিকে শুধু গলদ আর ভেজাল।
ভেবে দেখুন-

★ সরকার আইন করে- পুলিশ-আর্মি ফিল্ডে নামিয়েও আমাদেরকে সাধারণ এক ‘মাস্ক পরা’ শতভাগ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এটি ভাবা যায়? আমাদের কতবড় গোঁ!!
আমরা এমনই আদমি যে, নিজের ভালটা পর্যন্ত বুঝিনা। কতবড় ‘ব্যাক্কল’ ভাবুন একবার!
‘মাস্ক’ এখন আমাদের মতো গণ্ডু মূর্খের শুধু দুই কানে শোভা পাচ্ছে। কারও পকেটে, কারও বা ওড়নার কোনায় গিঁট দেয়া অবস্থায়-
দেখুন দশা! যে দুই/একজন পরে- তা পুলিশের লাঠির ভয়ে- করোনা’র ভয়ে না।

★ গতকাল কাজের বুয়া কাজে আসেনি। নোটিশ ছাড়া। কারণ জিজ্ঞেস করায় সে বললো- গিয়েছিল নাকি মহাস্থান মাজারে। শ্বশুর অসুস্থ- তার জন্য দোয়া চাইতে।
আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ!!
একেতো ওদেরই দিন চলেনা– তারমধ্যে শুনলাম- সুদে টাকা ধার করে, ব্রয়লার মুরগি দিয়ে পোলাও করে মাজার সেবকদের খাইয়ে- দোয়া নিয়ে আসলো। বুঝুন এবার! সুদ আর শিরকের শিকড় কতদূর প্রথিত!!
শান্তগলায় নসিহত করলাম-
— শোন, সুদের সর্বনিম্ন গুনাহ হলো- “মায়ের সাথে যিনা করা”। আর মাজারে শিরনি ‘মানত’ করা তো মস্ত ‘শিরক’…
আমার নসিহত শেষ না হতেই সে বললো-
— খালা, আপনাদের মতো বড়লোকেরাই এগলা পাপ বেশি করে। মহাস্থান মাজারে ‘কারগাড়ি’র ভিড় দেখলে কবেন কি…!! হামাকেরে মতন গরীব আর কয়জন? বড়লোক, শিক্ষিত লোকই বেশি!!
হ্যা, ‘ও’ ঠিকই বলেছে। অজ্ঞতার সেই কালো থাবা থেকে আমরা আজও অনেকেই বের হয়ে আসতে পারিনি।
আদৌ পারবো কি??

মলি, বগুড়া।
১৪ জুলাই/২০২১ ইং

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলেজ শিক্ষক

অজ্ঞতার কালো থাবা লেখার সাথে লেখকের আরও লেখা পড়ুন-

মহিলাদের জ্ঞান অর্জন

আরও পড়ুন