হাবিবা মুবাশ্বেরাঃ
শহীদের মর্যাদা পাওয়ার জন্য কি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করা অপরিহার্য? যদি তাই হয় তবে মুসলিম নারীদের জন্য শহীদের মর্যাদা পাওয়া তো রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু ইসলাম একটি লিঙ্গ-বৈষম্যহীন সার্বজনীন ধর্ম, তাই ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শহীদের মর্যাদা পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী ; যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেননি বরং নিজের ঈমান রক্ষার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি হলেন সুমাইয়া বিনতে খাততাব (রা:)।
সুমাইয়া (রা:) ছিলেন ইসলাম গ্রহনকারী প্রথম ৭ জনের একজন। তিনি ছিলেন একজন দরিদ্র দাসী এবং বয়সেও বৃদ্ধা। শুরুর দিকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের অধিকাংশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক। শুধুমাত্র মহানবী (সা:) এবং আবু বকর (রা:) ছিলেন তাদের পরিবার দ্বারা সুরক্ষিত। বাকীদের প্রায়শই কাফিরদের দ্বারা নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হতো। সুমাইয়া (রা:).তাঁর স্বামী এবং তাঁর পুত্র আম্মার ইবনে ইয়াসির অর্থ্যাৎ পুরো পরিবারই ছিল এই অত্যাচারিতদের অন্তর্ভূক্ত।
সুমাইয়া (রা:) এবং তাঁর পরিবার যেন ইসলাম ত্যাগ করে পুরনো ধর্মে ফিরে যান এজন্য তাদের বিভিন্ন নির্দয় পদ্ধতি অবলম্বন করে কষ্ট দেয়া হতো। একবার তাঁকে পানিভর্তি বড় পাত্রে ভরে উচুঁতে তুলে রাখা হয়েছিল যাতে তিনি পালাতে না পারেন। আরেকবার তাঁর ছেলে এবং স্বামীকে দিনের প্রখর সূর্যের তাপে ধাতব বর্ম পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাদের যখন বাজারে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তখন মুহাম্মাদ (সা:) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁদের এ দুরবস্থা দেখে দরদমাখা কন্ঠে বলেছিলেন “ ও ইয়াসিরের পরিবার, ধৈর্য ধরে এই কষ্ট সহ্য কর. তোমাদের জন্য সুসংবাদ হলো এই কষ্টের বিনিময়ে তোমাদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন।”
এত যন্ত্রনাদায়ক নির্যাতন সত্বেও সুমাইয়া (রা:) ইসলাম ত্যাগ করতে অস্বীকার করেছিলেন। এক সন্ধ্যায় আবু জাহল তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ,তারপর তাঁকে ছুরিকাঘাত করে এবং সবশেষে তাঁকে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করে। এভাবেই শুধু মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সা:) এর প্রতি ইমান আনার কারণে সুমাইয়া (রা:) কে প্রাণদান করতে হয়। তবে ইসলামের জন্য তাঁর এই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি, ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
পরবর্তীকালে আবু জাহল যখন বদরের যুদ্ধে নিহত হন, তখন মহানবী (সা:) সুমাইয়া (রা:)এর পুত্রকে বলেছিলেন, “ তোমার মাকে যে হত্যা করেছে, মহান আল্লাহ তাঁকে হত্যা করেছেন।”
এ থেকেই বোঝা যায়. মহান আল্লাহর দরবারে সুমাইয়া (রা:) এর মর্যাদা কত সুউচ্চ।
আজকের যুগে যারা জন্মসূত্রে মুসলিম দেশে, মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ইসলাম পালনের অনূকূল পরিবেশ পায় তারা হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না, প্রতিকূল পরিস্থিতেও নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অটল থাকার জন্য কতটা মানসিক দৃঢ়তার প্রয়োজন। সুমাইয়া (রা:) একজন বয়স্কা নারী হয়েও ঈমানের সেই দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছিলেন্। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মুসলিমদের জন্য তিনি তাই আজও অনুকরণীয় উদাহরণ।
তথ্যসূত্র:
https://www.ummah.com/forum/forum/islam/general-islamic-topics/117686-amazing-women-summayah-ra
https://en.wikipedia.org/wiki/Sumayyah_bint_Khabbat