Ads

খুৎবা ও প্রাসঙ্গিক কিছু আলোচনা

।। নুরে আলম মুকতা ।।

 

অনেক দিন আগে একটি ঘটনা আমার সামনে ঘটেছিল কিন্তু মনে তেমন রেখাপাত করেনি। আমাদের সমাজে মসজিদ কেন্দ্রিক কমিটিগুলো গঠিত হয় । আগে এ কমিটিগুলোতে সমঝদার আর উত্তম মানুষকে বাছাই করে সভাপতি বা অন্য পদগুলোতে বসান হতো এখন কি হয় ,আমরা সবাই জানি ! এ বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল মনে হয়। ত একটি কমিটির সম্পাদক মহোদয়কে একজন অশীতিপর জ্ঞানী লোক বললেন নাম ধরে, মনে করি রহিম তুমি কি নামাজ পড়াতে পারবে, খুৎবা পড়তে জান ?”

 

রহিম কোন উত্তর দিতে পারেন নি। আমরা যারা কম বয়সী ওখানে উপস্থিত ছিলাম রহিমের অবস্থা দেখে দ্রুত ওখান থেকে সটকে পড়েছিলাম । এইতো করোনার লকডাউন যখন চলছিল জুমআর নামাজেও মসজিদে যেতে পারছি না । বুকের মধ্যে অসহনীয় কষ্ট পেয়েছিলাম, মহাগ্রন্থ আল কুরআনের এ আয়াতটি বার বার মনে পড়ছিল,আল্লাহ ভালো জানেন, আমি কি পরিমান কল্যাণ বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি

 

আরও পড়ুন– যে আয়াত জাপানের ড. আতসুশিকে মুসলিম বানাল

 

হে বিশ্বাসীরা! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হবে এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখবে, এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে পারো।” (সূরা: জুমা, আয়াত: ৯)।

 

এক জুমআ বারে প্রিয় ভাতিজা বলল, বাবা আমাদের মাদ্রাসার মসজিদে জুমআ পড়াচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে । বিশাল জায়গা। মুসল্লী খুবই কম। আমি তৎক্ষনাৎ রাজি হয়ে গেলাম। কষ্ট পেলাম, লোকজন নেই বললেই চলে। বিশাল স্পেসে আট-দশ জন মুসল্লী । সুন্নাত নামাজগুলো পড়ে চারিদিক তাকিয়ে দেখছি । ছাত্রদের ছুটি । ওই মাদ্রাসার আলেম টিচারেরা সকলেই প্রায় পরিচিত । কিন্তু কাউকে দেখছি। চিন্তা হল , খুৎবার সময় ঘনিয়ে আসছে।মুসল্লি যে কজন আছি সবাই চোখ চাওয়া চাওয়ি করছি। মহান আল্লাহর কাছে মানসিক শক্তি প্রার্থনা করে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম।চারিদিকে চোখ বুলালাম খুৎবার বই আছে কিনা। আসলে মসজিদের কাজ অনেক বাকি এজন্য আলমারি বা সেলফ সংযোজিত হয়নি। বইপুস্তক নিরাপদে অন্যত্র রাখা আছে।

 

একটি সমস্যা আমাদের প্রায়ই মোকাবেলা করতে হয়। সহজে কেউ ইমামতি করতে চান না। বিষয়টি ভালো নিঃসন্দেহে । কিন্তু জানাশোনা লোক অস্বীকার করলে সমূহ বিপদ। আহকাম আরকান জানেন না, আরবী শব্দোচ্চারণের বালাই মানেন না তাকে ত আর ইমামতির জায়গায় জোর করে দাঁড় করানো যাবে না। বিপদ হবে । আসল জায়গায় বিপদ হবে এবং মারাত্মক জবাবদিহিতার কবলে পড়তে হবে। এ বিষয়ে আমরা সাবধান থাকি। জোর করে একদম অপরিচিত কাউকে আমরা ইমামতি করতে যেন বাধ্য না করি ৷

 

যাই হোক আমি মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই ফেলেছি যে , মহাগ্রন্থ কুরআনের কোন কোন আয়াত গুলো আর কোন হাদিসটি পড়ব। নামাজের পর উপস্থিত মুসল্লিদের আমার সামর্থ্যের মধ্যে অনুবাদ বলে দায়িত্ব শেষে মহান রহমান ও রহিম আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব। আলহামদুলিল্লাহ !

 

একদম আকস্মিক, দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন মাদ্রাসার শিক্ষক এসে হাজির হলেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। সেদিন কি রকমের সমস্যা হয়েছিল আমাদের ? এটি না জানার সমস্যা । চলুন প্রিয় বন্ধু যতটুকু পারি জেনে নিই

 

খুৎবা কি ? আরবি খুৎবা অর্থ হলো মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বক্তৃতা । যিনি বক্তৃতা প্রদান করবেন তিনি খতিব ।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মদিনায় হিজরতের পর কুবা মসজিদে জুমআর নামাজ আদায় করার আগে দুবার দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করেছিলেন। দুই খুৎবার মাঝে একবার বসেছিলেন ।

শুক্রবারে জুমআর নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। খুৎবা জুমআ নামাজের অংশ তাই খুৎবা আরবীতে দেয়া হয়।

 

উল্লেখ্য ঈদউল আযহা ও ঈদউল ফিতর এর নামাজের পরেও খুৎবা প্রদান করা হয়। দুই ঈদের নামাজ ওয়াজিব এবং খুৎবা শোনা মুস্তাহাব। আর জুমআর খুৎবা শোনা ওয়াজিব। তবে যারা ঈদের খুৎবা না শুনে চলে যাবে তাদের গোনাহ না হলেও তারা ঈদের গুরুত্বপূর্ণ দুআ ও ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে।

আরও পড়ুন- যেভাবে বন্ধু বানাবেন আপনার সন্তানকে 

 

ইমামগ খুৎবার আগে এর অর্থের সারাংশ বলে দিলে উত্তম । জুমআ নামাজের খুৎবা অপরিহার্য শর্ত বা ফরজ। এজন্য জুমআর নামাজের আগে খুৎবা প্রদান করা হয়। খুতবা ব্যতীত জুমার নামাজ হয় না। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য শোনা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে ব্যস্ত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন খুতবার সময় তুমি তোমার সঙ্গীকে চুপ করোবলাও অনর্থক। (বুখারি, হাদিস নং: ১/১২৮, ৮৯২; মুসলিম, হাদিস : ২০০৫

 

খুৎবা তে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের কমপক্ষে তিনটি আয়াত বা একটি বড় আয়াত ও হাদীস পাঠ এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ও তাঁর ওপর দরুদ পাঠ করা হয় । ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা, সৃষ্টি ও গুণগান, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রতি দরুদ পেশ ও উপস্থিত মুসল্লীদের প্রতি সদুপদেশ দানই হলো খুৎবা ।

 

কয়েকটি রেফারেন্স জেনে নিই ,

ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ “ফাতওয়ায়ে শামী” তে বলা হয়েছে নামাজের জন্য যে সকল কাজ হারাম তা খুৎবা চলাকালে হারাম। যেমনঃ পানাহার, কথাবার্তা বলা ইত্যাদি (৩/৩৫)

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী তে খুৎবার ১৫ টি সুন্নাত উল্লেখ করা হয়েছে ।

 

হযরত আম্মার রাঃ বলেছেন, আমি হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে বলতে শুনেছি তোমরা নামাজ দীর্ঘ করবে এবং খুৎবা সংক্ষিপ্ত করবে (সহীহ মুসলিম ১/২৮৬)

 

আমি খেয়াল করেছি প্রিয় বন্ধু, আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন যে, প্রায়ই আমাদের ইমামগ মুসল্লীদের খুৎবা শোনার তাগিদ দেন কিন্তু বলেন না যে খুৎবা শোনা ওয়াজিব। খুৎবা না শুনলে জুমআ ও দুই ঈদের নামাজ পূর্ণ হবে না ।

আরও পড়ুন – আবিষ্কৃত হলো রসুলের ( স.)মদিনায় হিজরতের যাত্রাপথ

 

নামাজ আদায়ের বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ৮২ বার বলা হয়েছে আমরা জানি। নামাজ আদায়ের বিষয়ে আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে সর্বদা অনুসরণ করি ।

বন্ধু দেখুন মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ নামাজ সম্পর্কে কি বলছেন অন্তত একটি আয়াত শুনি,

 

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

১৩.ওয়া নাখতারতুকা ফাস্তামি লিমা ইউহা

১৪.ইন্নানী আনাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনা ফা আ বুদনী ওয়া আকিমিস্বালাতা লি জিকরী (সুরা ত্বহা)

১৩. তোমাকে (হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে)  নির্বাচিত করলাম, কাজেই অহী মন দিয়ে শোন

১৪. আমি আল্লাহ ! আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই , আমার ইবাদত কর, আমার স্মরণে নামাজ আদায় কর ।

একদম পরিস্কার মেসেজ। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা নামাজ আদায় করব এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ যেভাবে নামাজ আদায় করেছেন সেই পদ্ধতি অনুসরণ করব।

 

আমরা সবাই জেনে বুঝে আল্লাহর এবাদত করলে অনেক সওয়াবের অধিকারী হব। আল্লাহ আমাদের এবাদত কবুল করুন, আমীন ।

 

লেখকঃ কবি, কলাম লেখক ও শিক্ষক

 

খুৎবা ও প্রাসঙ্গিক কিছু আলোচনা –  খুৎবা ও প্রাসঙ্গিক কিছু আলোচনা  

আরও পড়ুন