Ads

টিপ ও ইসলাম

ফাহমিদা নীলা

টিপ নিয়ে ফেসবুক তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। সবাই টিপ নিয়ে এবং টিপ দিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন বিধায় কি ঘটেছে এ নিয়ে একটু অনুসন্ধান করলাম। যা দেখলাম তা সুখকর কিছু নয়। ভেবেছিলাম, চুপচাপ দেখব সবকিছু। তারপরেও কেন যেন ভেতর থেকে কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করলাম। হয়তো এ লেখা অনেকেরই ভাল লাগবে না, তবু আশা রাখি শেষ পর্যন্ত পড়লে আমাকে বুঝতে পারবেন ।

প্রথম কথা, টিপ শুধু আমার কেন, যে কোন বাঙালী নারীর সাজসজ্জার খুব প্রিয় এবং অপরিহার্য উপকরণ। আমার নিজেরই টিপ অসম্ভব পছন্দের। আমি বিশেষ আধুনিক মানুষ না। সাজ বলতেই আমি বুঝি, চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক আর কপালে টিপ, এইতো। একসময় চোখে কাজলও ঠিকমতো দিতে পারতাম না। কিন্তু কপালে একখানা টিপ থাকতোই। শুধু শাড়ীর সাথে নয়, থ্রিপিসের সাথেও আমি খুব ছোট্ট একটা বিন্দুসম টিপ পরতাম কপালে। আমার এক্স আমার কপালের টিপ জমাতো খুব সুন্দর একটা কৌটায়। দিনশেষে আমার কপালের টিপ নিয়ে কৌটায় জমানো তার হবি ছিল বলতে গেলে। সে ভিন্ন কথা। এই ততোধিক রোমান্টিক পুরুষ ভালোবাসার প্রতিদান শেষ পর্যন্ত কিভাবে দিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গে আর না যাই। টিপ আমার জীবনের কতটা জুড়ে ছিল, সেটা বোঝাতেই প্রসঙ্গটুকু টানলাম।

এবার আসি, কেন টিপ ছাড়লাম সে প্রসঙ্গে। মেডিকেলে পড়ার সময় দু’জন ক্লাসমেট হঠাৎ বলেছিল, ‘নীলা, তুমি যে টিপ পরো, এর ইতিহাস জানো?’ না সূচক মাথা নেড়েছিলাম। ওরা আমাকে ইতিহাস বলেনি। বলেছিল, জেনে নিতে। জানা হয়নি বহুকাল। অনেক অনেকদিন পরে যখন নিজ ধর্ম নিয়ে টুকটাক পড়া শুরু করলাম, তখন জানলাম। না, টিপ নিয়ে স্পেসিফিক কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে একটা ইতিহাস আছে, যা ইঙ্গিত করে টিপের ব্যবহার শুরুর ইতিবৃত্ত।

কি সেই ইতিহাস?

আমরা সবাই জানি, হযরত ইব্রাহীম(আঃ)কে নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল। তার নির্দেশানুযায়ী আট মাইল দীর্ঘ আগুনের বলয় তৈরী করা হল। সমস্যা দেখা দিল, আগুনের উত্তাপ এত বেশী যে,তারা কাছে গিয়ে ইব্রাহীম(আঃ) কে ওর ভেতরে নিক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তারা বুদ্ধি করে একটা চরক নির্মাণ করল,যা দিয়ে ওনাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে আগুনের ভেতর। চরক ঘোরানোর সময় দেখা দিল আরেক বিপত্তি। চরকের ধারে রহমতের ফেরেশতারা অবস্থান করায় তারা চরক ঘোরাতেই পারছিল না। এবার তারা আরেক বুদ্ধি পেল। একটি বিশেষ শ্রেণীর কিছু নারীকে তারা নগ্ন অবস্থায় দাঁড় করায়ে দিল চরকের চারপাশে। সাথে সাথে ফেরেশতারা সরে গেলেন সেখান থেকে। এরপর প্ল্যানমাফিক চরক ঘুরায়ে ইব্রাহীম(আঃ) কে আগুনের বলতে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হয় তারা। কাজে সহযোগীতা করায় ঐসকল নারীদের কপালে তীলক এঁকে রাস্ট্রীয় মর্যাদা দেয় নমরুদ।ধারণা করা হয় যে, ঐ সময় থেকেই ঐ বিশেষ শ্রেণীর নারীরা তীলক বা টিপ ব্যবহার শুরু করে।

এই ইতিহাসটুকু ছাড়া ইসলামের কোথাও স্পেসিফিকভাবে টিপের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা পাইনি। ইতিহাস সত্য না মিথ্যা, তা যাচাইয়ের সুযোগও হয়নি।তবে, একথা স্পষ্টতঃই ইসলামে বলা হয়েছে যে, ‘তোমরা বিধর্মীদের অনুকরণ করো না।’ সে হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে যে, যেহেতু অন্য কিছু ধর্মের নারীরা টিপকে তাদের ধর্মীয় চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন, সুতরাং এটা পরিহার করা মুসলিম নারীদের জন্য শ্রেয়। কিন্তু, আমি আবারও বলছি, খুব স্পষ্ট ভাষায় টিপ নিষেধ করা হয়নি। ইসলামে সাজসজ্জার ব্যাপারেও কোন নিষেধাজ্ঞা নেই,বরং মেয়েদের সাজার ব্যাপারে বা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার ব্যাপারেই বলা হয়েছে। তবে তা হতে হবে অন্তরালে,আপনার মানুষের জন্য। যথাযথ কারণে নারীদের পরপুরুষের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার ব্যাপারে নিষেধ করা আছে। আর এ কথা উল্লেখ করার অপেক্ষা রাখেনা যে, টিপ নারীর সৌন্দর্য্যকে বৃদ্ধি করে কয়েক গুণ।
এ সবকিছুই ছিল আমার নিজের যুক্তি, যার কারণে আমি ঘরের বাইরে টিপ পরা ছেড়ে দিই। তবে হ্যাঁ, এখনও আমি ঘরে টিপ পরি মনের আনন্দে। আমি টিপ পরব কি না, বা কখন কোথায় পরব, এটা সম্পূর্ণ আমার নিজের সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে কথা বলার অধিকার রাখে কেবল আমার অভিভাবকবৃন্দ। আর কেউ নয়।

এবার আসি, বর্তমান ঘটনা প্রসঙ্গে। যিনি টিপ পরা নিয়ে কটুক্তি করেছেন বা লাঞ্চিত করেছেন কোন এক নারীকে, তিনি কি ভেবে করেছেন তা জানিনা। তবে যদি তিনি ধর্মীয় কারণে করে থাকেন, তবে বলতে পারি, তিনি নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানেন খুব সামান্যই। তিনি এটা জানেন না যে, পরনারীর দিকে তাকানোর ব্যাপারেও ইসলামে কঠোর নির্দেশ আছে। তিনি এও জানেন না যে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে বাঁধা দেয়ার ব্যাপারে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। তিনি যা করেছেন যা সম্পূর্ণভাবে ইসলাম পরিপন্থী আচরন। যে যার ধর্ম তার মত পালন করবে। কাউকে ইচ্ছামতো অপমান করার বা গালাগালি করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। আমরা খুব বেশী হলে, ইসলামের নির্দেশনা প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু কারো উপরেই চাপিয়ে দিতে পারিনা। এমনকি কোন মুসলমানের উপরেও নয়। কেননা, সবাইকেই আল্লাহ্ বোধবুদ্ধি দিয়েছেন। তিনি নিজ ধর্ম জেনে সে অনুযায়ী চলার সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) খুব পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, ‘তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না’।

আশা করি, আমি কি বলতে চেয়েছি, আপনারা বুঝতে পেরেছেন। পবিত্র রমজান মাস। মহান আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সঠিকভাবে নিজ ধর্ম জানার এবং মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখকঃ ফাহমিদা নীলা, সাহিত্যিক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ

 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ, পরিবার ও নিজেকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য নানা ধরণের

আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন  এবং

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

০৪/০৪/২০২২ ইং

আরও পড়ুন