Ads

“বার্ধক্য এবং বাস্তবতা”

“বার্ধক্য মানব জীবনের একটি পর্ব”।

বেঁচে থাকলে মানুষ ধীরেধীরে বার্ধক্যের দিকেই ধাবিত হবে- এটিই সত্য, স্বাভাবিক। প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম এটি। এ নিয়ম থেকে কেউই রেহাই পাবেনা।

মানুষ জন্মের পর শৈশব-কৈশোর ও যৌবন পার করে এক সময় বার্ধক্যে উপনীত হয়। এ সময় জীবনটা কারো জন্যই শতভাগ সুখকর- আনন্দদায়ক হয় না। অধিকাংশ মানুষের নিকট জীবনটা হয়ে উঠে- তিক্ত, দুর্বিষহ এবং অসহ্য। এ সময় তাঁদের প্রয়োজন হয় ছেলেমেয়ের সান্নিধ্য, ভাল সহযোগী, সঙ্গী-সাথীর। যার সাথে নিজের মনের ভাব, আলাপন খোলামেলা প্রকাশ করতে পারে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা সে সুযোগ পায়না। বরং পরিবারের কাছে তখন তাঁরা হয়ে উঠে- ঝামেলাপূর্ণ, বোঝাস্বরূপ, এক আপদ। বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরা তখন যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সারাটা দিন কর্মব্যস্ততায় কাটিয়ে- দিনশেষে বৃদ্ধ বাবা-মা’কে দেবার মতো যথেষ্ট সময় অনেকেরই থাকেনা। এতে করে বৃদ্ধ বাবা-মার অভিমান জমতে থাকে। জমতে জমতে হয়ত একসময় তা মনোমালিন্যে রূপ নেয়। তারপর আস্তে আস্তে ভাঙতে থাকে মন, শরীর, সুখের সংসার। কোনো কোনো রগচটা ছেলেমেয়ে তখন বাবা/মার প্রতিটি পদেপদে আবার ভুল ধরতে থাকে। কমে যায় শ্রদ্ধা-ভালবাসা-সহানুভূতি। ক্রমেই কারও কারও জীবনে নেমে আসে এক ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা। দুঃখের নিকষ কালো ছায়া যেন ঘিরে ফেলে তাঁদের পুরো শরীর- মন- মগজ। কাছের লোকের নির্মম আচরণে বাবা-মা তথা প্রবীণরা হয়ে পড়ে দিশেহারা- হতাশাগ্রস্ত। ‘মৃত্যু’কেই তখন তাঁদের আপন বলে মনে হয়। কেউবা আশ্রয় নেয়- বৃদ্ধাশ্রমে। কেউবা অন্যত্র।

প্রতিনিয়ত এধরনের অনেক অপ্রত্যাশিত, অমানবিক আচরণের খবর আমরা পেপার-পত্রিকায় দেখি।
উহ্ কি ভীষণ কঠিন বাস্তবতা!
আল্লাহ্‌ মাফ করুন- এ দূরবস্থা।।

সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিকেই আমরা প্রবীণ বা বৃদ্ধ বলে থাকি। অর্থাৎ ঐ সকল ব্যক্তিকে বৃদ্ধ বা প্রবীণ বলা হয়- যার বয়স বেশী হয়ে শারীরিক ও মানসিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে নিজের দেখাশুনা ও পরিচর্যা নিজে করতে তাঁরা অক্ষম। সেসময় প্রায় সবকিছুই তাঁরা ভুলে যায়। খেয়েও বলে- খাইনি..!
এলোমেলো হয়ে যায় তাঁদের পুরো জীবনটা। প্রচণ্ড রকমের অসহায় বোধ করে তখন তাঁরা! সাহায্যের আশায় অত্যন্ত করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে- ছেলেমেয়ে, আপনজনের দিকে!!

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
★ ‘আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেন। অতঃপর তোমাদের মৃত্যু ঘটান। আর তোমাদের মধ্যে কেউ পৌঁছে যায় জরাগ্রস্ত বয়সে। ফলে জানার পরেও সে আর কিছুই জানবে না (অর্থাৎ জানা জিনিস ভুলে গিয়ে শিশুর মত হয়ে যাবে)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান’।
(নাহল- ৭০)।

★ ‘আল্লাহ, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন দুর্বল অবস্থায়। দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি। শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান’।
(সূরা রূম- ৫৪)।

★ ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটি বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। মমতাবশে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত কর এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর- যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’
(সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩-২৪)।

রাসুল (স) বলেছেন-
# ‘যে ছোটদের স্নেহ করেনা এবং বড়দের সম্মান প্রদর্শন করেনা; সে আমাদের দলভুক্ত নয়’।

# ‘যে মুসলিম সাদা চুল বিশিষ্ট হবে, ক্বিয়ামতের দিন এটা তার জন্য জ্যোতি বা আলো হবে’।

# জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করলেন-‘হে আল্লাহর রাসূল (স)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট কে? তিনি বললেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে’।

তাই আসুন- জীবনের এই সময়টাকে আমরা জনহিতকর উত্তম কাজে ব্যয় করি। নেকি দিয়ে সুসজ্জিত করি আমাদের ‘আমলনামা’কে।

মরতে তো হবেই!!!

সবাইমিলে প্রবীণদের যথাযোগ্য সম্মান- মর্যাদা দেয়ার চেষ্টা করি। সাহায্যের পশরা নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। শ্রদ্ধা, ভালবাসা মিশিয়ে সাধ্যমত তাঁদের পরিচর্যা করি।। এটি তাঁদের প্রাপ্য- হক, ন্যায্য অধিকার। ভাবি, এমন দিন হয়ত আমাদেরও আসবে..! তখন?

‘বার্ধক্য’ মানবজীবনের এক অনিবার্য বাস্তবতা।

বার্ধক্য হলো জীবনের এক
কঠিন বাস্তবতা,
সুখদুখের স্মৃতিময় অধ্যায়,
একরাশ নিরবতা!
বার্ধক্য থেকে পানাহ চাও বান্দা
আল্লাহ্‌র কাছে,
কিসের দুনিয়া, টাকা, যশ-খ্যাতি
এসবই তুচ্ছ- মিছে!
আসল ঠিকানা তো হবে
মৃত্যুর পরে,
উত্তম আমল করো সবে
সেদিনের তরে।।
——
লেখকঃঅধ্যাপিকা মৌলুদা খাতুন মলি,কবি,সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।

আরও পড়ুন