Ads

ভ্রমণ কাহিনীঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (পর্ব-০৩)

নুরে আলম মুকতা

ইহরামের কাপড় শরীরে চ্যাটচেটে অবস্থা তৈরী করেছে।ঘরে এসি চলছে,ফ্যানও চলছে তারপরেও গুমোট গরম। হাঁসফাঁস অবস্থা। সবাই যে যার মতো গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা। এরমধ্যে কাফেলার লোক খানার ব্যাবস্থা করেছে। মুখে কিছু দিয়ে বিছানা প্রস্তুতের চেষ্টা করছিলাম। আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম…… মক্কার আকাশে প্রথম আজানের ধ্বনি শুনলাম! বুকের মধ্যে কেমন এক অস্থিরতা তৈরী করল! সময় কোনদিক দিয়ে চলে যাচ্ছে মালুম পাচ্ছি না।
সুবহে সাদেক। সবাই প্রস্তুত হলাম পবিত্র কাবার উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য। অদ্ভুত শিহরণ! দিনের আলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হলে দেখলাম পবিত্র মক্কা নগরীর রূপ। মোহাম্মদ ( সাঃ) তোমাকে ছেড়ে যেতে চাননি। জননী মক্কা,স্বপ্নের মক্কা!রাতে কোথায় নেমেছিলাম সহজে স্থানটি লোকেট করতে পারলাম। আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়েই রাজপথ। পরে এক প্রবাসী দেশী ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম আমরা আমীরুল মুমিনীন হযরত উমরের (রাঃ) পিতৃ ভিটাতে অথবা আশে পাশে আছি। হতেই পারে। কারণ আমরা তো আল হারামাইনের মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে আছি। বাড়ি থেকে বেরিয়েই আল হিজরাহ রোড। যে পথ দিয়ে মহানবী (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। আমি এ রোড ধরে হাটঁতে হাঁটতে ইচ্ছে করে একদিন হারিয়ে গিয়েছিলাম। এ গল্প পরে শোনাবো।
আমরা জোরে জোরে তালবিয়া পড়তে পড়তে এগিয়ে যাচ্ছি। আপার সমস্যা হচ্ছে। আমার উৎসাহ আর নিজের ঈমানী জোশে নিজেকে টানছেন আপা। আমরা ভাই-বোন পিছিয়ে গেলাম। কেউ পেছনে ফিরেও তাকাচ্ছে না। যাদের জন্য প্রতিনিয়ত এত পরিশ্রম করি আমি তারা আমাদের ভাইবোনের দিকে ফিরেও তাকালো না। হায় আল্লাহ! কেয়ামতের ময়দানের স্পষ্ট আলামত ! মনোবল হারাচ্ছি না।
কেউ যদি এখানে দূর্বল হয়ে পড়েন, বিশেষ করে হজ্বের সময় তবে পরিনতি ভয়াবহ হতে পারে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিজেকে সঁপে দিলে ভালো। আকাশের দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার বললাম। আপার কষ্ট আমার কলেজায় বিঁধছে। সহ্য করতে পারছি না। দীর্ঘ ভ্রমনের ধকলের জন্য কষ্ট আরো বেড়ে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি আমরা, সামনে যেতেই হবে। সবাই তো একই পথে চলছে। সৌদি পোস্টের কাছে গিয়ে বসে গেলাম। আর আপা হাঁটতে পারছেন না। অসহায় হয়ে গেলাম। আমাদের কাফেলার কেহ নেই। মনোবল হারাচ্ছি না। গলা শুকিয়ে আসছে। আপার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। রক্তিম হয়ে গিয়েছে মুখাবয়ব। মনে হচ্ছে ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসবে।
কিছুক্ষণ পর দেখি আমাদের সামনে একজন যুবক দাঁড়িয়ে ! হিন্দি আর উর্দুর মিশেলে ও আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল,আমাদের সাহায্য লাগবে কিনা ? আমি আমার মতো করে সাধ্যমতো বলার চেষ্টা করলাম।তুমি কে ? কি রকম সাহায্য করতে চাও? ও বলল,দুশো রিয়ালের বিনিময়ে ও একটি হুইল চেয়ার দিয়ে আপাকে পবিত্র কাবা তাওয়াফ সহ সব কিছু আজকের কাজ সমাপ্ত করতে সাহায্য করবে।
আমি হাল্কা বারগেইনিং করলাম। ও দেড়শো তে রাজী হলো। ও বলল, নড়বে না, এখানেই বসে থাক। আমি এক্ষুনি আসছি। আমরা এরকমই কিছু একটা আল্লাহর তরফ থেকে প্রত্যাশা করছিলাম। ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।
পরে এ বিষয়ে বলা যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে যুবক হুইল চেয়ার নিয়ে হাজির। আপা যার পর নেই খুশী। আমি ও চেয়ারটি ধরে সামনে চলতে শুরু করলাম। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিস্ময়কর ভাবে আমাদের বহর খুঁজে পেলাম! আমাদের আয়োজন দেখে ওরা অবাক!
(চলবে)
লেখকঃ সাহিত্যিক, শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক, মহীয়সী 
আরও পড়ুন